ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৭ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিশ্রিপাড়ার বৃহৎ সীমা বৌদ্ধবিহার এলাকা পর্যটকের পদচারণায় প্রাণচাঞ্চল্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ৩ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২২:৪৮, ৩ নভেম্বর ২০২৪

মিশ্রিপাড়ার বৃহৎ সীমা বৌদ্ধবিহার এলাকা পর্যটকের পদচারণায় প্রাণচাঞ্চল্য

রাখাইন পল্লীতে দেশের অন্যতম বৃহৎ বুদ্ধ মুর্তিটি

কলাপাড়ার মিশ্রিপাড়া রাখাইন পল্লীতে দেশের অন্যতম বৃহৎ বুদ্ধ মুর্তিটি দেখতে পর্যটক-দর্শনার্থীর ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন বিশালকায় মুর্তি স্থাপিত সীমা বৌদ্ধবিহারটি সংস্কারের ফলে নিরাপত্তা নিয়ে রাখাইনদের শঙ্কা কেটে গেছে। বিহারটির চারদিকে পাকা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। ইন্দোচীনের সৌকর্য ঠিক রেখে বিহারটির সংস্কার করায় সৌন্দর্য আরও বহুগুনে বেড়েছে। প্রতিদিন এখানে শত শত দর্শনার্থীর আগমন ঘটছে। মুখরিত থাকছে মিশ্রিপাড়া রাখাইন পল্লীসহ বৌদ্ধবিহার এলাকা। ইতোমধ্যে বৌদ্ধবিহার এলাকার বাউন্ডিারির মধ্যের বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধার হওয়ায় এখন স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। রাখাইনদের উৎকন্ঠা কেটে গেছে। পল্লীর রাখাইন নারীরা বুনছেন নিজেদের তাঁতে চাদরসহ বিভিন্ন বস্ত্র। জমে উঠেছে বিহারের সামনের মার্কেটের বেচাকেনা।
প্রায় এক শ’ ১৩ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এ বিহারটি সিডর আইলায় বিধ্বস্ত হয়। টিনের বেড়া এবং চাল লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ৩২ ফুট উচু বিশালকায় বুদ্ধ মুর্তিটির উপরে বৃষ্টিতে পানি পড়ত। বুদ্ধ বিহারের দরজা, জানালা ভাঙ্গা ছিল। ছিলনা বিহার এলাকার বাউন্ডারি। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা বৃহৎ এ মুর্তিটি দেখতে গিয়ে হতাশা ব্যক্ত করত। রাখাইনরা নির্বিপ্রতিদিনকার ধর্মীয় আচার পালন করতে পারত না। বর্তমানে সেসব দুরাবস্থা কেটে গেছে। জার্মান সরকারের জিআইজেড প্রকল্প ও জার্মান দুতাবাসের উদ্যোগে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করে আরও দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে বৌদ্ধ বিহারটি। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে সংস্কার করা বুদ্ধ বিহারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। জার্মান দুতাবাসের ডেপুটি চার্জ দ্যা এফেয়ার্স ড. ফার্দিনান্দ ফন ভেইয়ে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। মিশ্রিপাড়ার রাখাইন জনগোষ্ঠী তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। তিনি পুনঃনির্মিত বিহারটির ফলক উম্মোচন করেন। এ ছাড়া ২০২৪ সালেও সরকারি সহায়তায় বৌদ্ধবিহারটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়েছে।
ইন্দোচীনের সৌকর্যের পুরনো আদল ঠিক রেখে এ বিহারটি পুনঃনির্মান করা হয়েছে। ৪৪০ মিটার বাউন্ডারিসহ মুল ফটকের গেট করা হয়েছে। ৬৩ মিটার দীর্ঘ দেয়াল করা হয়েছে। ২২ মিটার সংযোগ সড়ক করা হয়েছে। একটি গভীর নলকুপসহ ওভারহেড ট্যাংকি এবং টয়লেট করা হয়েছে। সিলেট থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক জাকির হোসেন জানান, এটি খুব সুন্দর জায়গা। তবে আসা-যাওয়ার রাস্তাঘাট আরও ভালোভাবে নির্মাণ করা প্রয়োজন। বর্তমান বিহারাধ্যক্ষ উত্তম ভিক্ষু জানান, ১৯১১ সালে রাখাইন মিশ্রি চৌধুরী সীমা বুদ্ধ বিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় ৩২ ফুট উচু এ বুদ্ধ মুর্তিটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মুর্তি বলে রাখাইনদের দাবি। প্রায় দু’একর জায়গা নিয়ে সীমা বুদ্ধ বিহার এলাকা নির্দিষ্ট করা রয়েছে। বৌদ্ধ-বিহার এলাকায় রয়েছে পানি সংরক্ষণের একটু দৃষ্টি নন্দন কুয়া। বাউন্ডারি ঘেরা ফুলের বাগান। সকাল-বিকাল পাড়ার রাখাইন নারী-পুরুষরা বিহার অঙ্গনে ধর্মীয় প্রার্থনা করে আসছে। রাখাইন পাড়ার বাসীন্দা আফ্রু মং বলেন, জায়গা দখলের সমস্যাটিও মিটে গেছে। এখন কোন সমস্যা নেই। তবে কুয়াকাটা থেকে এই বৌদ্ধ বিহারে আসার সড়কটি দ্রত এবং মানসম্মতভাবে মেরামত মেরামত করা প্রয়োজন বলে আগত পর্যটকরা মনে করেন।

জাফরান

×