
ছিটমহল বিনিময়ের পর নির্মাণ করা রাস্তায় সহজে চলাচল
ছিটমহল বিনিময়ের ৯ বছরে দেশের উন্নয়নের ধারায় পাল্টে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহলের দৃশ্যপট। বন্দিদশায় জীবন কাটানো মানুষের যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, চাকরিসহ সব মৌলিক অধিকার প্রাপ্ত হয়ে উন্নয়নের ধারায় মিলে গেছে দীর্ঘ ৬৮ বছর পর। দেশের অভ্যন্তরে থাকা ছিটবাসীদের ভাগ্য পরিবর্তনে নানা উন্নয়নের পাশাপাশি বিশেষ নজর রাখার কথা জানিয়েছেন প্রশাসন।
লালমনিরহাট জেলার ছিটমহল বাসিন্দাদের দীর্ঘ ৬৮ বছর বন্দিজীবন কাটিয়ে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট মধ্যরাতে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশের বিলুপ্ত ১১১টি ছিটমহলের মধ্যে লালমনিরহাটের ৫৯ টি ছিটমহলের বাসিন্দারা স্বাধীন বাংলাদেশের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায়। একসময় এসব ছিটমহলের অধিবাসীদর জন্য ছিল না কোন নির্দিষ্ট দেশ ও পরিচয়।
ফলে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছিল। রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ সুবিধা তো দূরের কথা ন্যূনতম পরিচয়ও বলতে পারেনি তারা। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় অবশেষে গত ২০১৫ সালর ৩১ জুলাই স্বাধীনতার স্বাদ পায় ছিটমহলবাসী। দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দী দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নয় বছরে পাল্টে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর জীবনযাত্রা। গত ৯ বছরে বিলুপ্ত ছিটমহলকে এগিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্মাণ করা হয় রাস্তাঘাট, গড়ে তোলা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
ঘরে ঘরে দেওয়া হয় বিদুৎ সংযোগ। কৃষিতে হয়েছে বৈপ্লবিক উন্নয়ন। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। এতে বদলাতে থাকে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর জীবনমান। বুধবার লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের বাঁশপচাই বিলুপ্ত ছিটমহল ঘুরে দেখা যায়, পাকা রাস্তা, রাস্তার পাশে স্কুল,মসজিদ,মাদ্রাসা, হাটবাজার। মানুষের একসময়ের কাঁচা, ভাঙা বাড়িগুলো পাকা বাড়িতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।
এখন তাদের চোখে-মুখে আনন্দ। বাঁশপচাই ছিটমহলের বাসিন্দা খোরশেদ আলমের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে ২০১৫ পর্যন্ত জানতাম না আমরা কোন দেশের নাগরিক। ছিল না জমির মালিকানা, পড়াশোনার সুযোগ, নানাবিধ অসুবিধায় দিনাতিপাত করতে হতো। বাংলাদেশের ভূখ-ের ভেতরে থাকলেও কাটাতে হয়েছে বন্দিদশা জীবন। ছিটমহল বিলুপ্ত হওয়ার পর মিলেছে নাগরিকত্ব, জমির মালিকানা, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ।
সরকার ছিটমহলে নির্মাণ করে দিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাড়িবাড়ি দিয়েছে বিদুৎ সংযোগ। বাঁশপচাই ভিতরকুটির বাসিন্দা হরেকৃষ্ণ রায় জানান, ছোটবেলা থেকে জানতাম আমরা ভারতীয়। কিন্তু আমরা ভারতের কোনো সুযোগ, সুবিধা, আইনি সহায়তা পেতাম না। বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের জমিতে বাড়ি হওয়ায় ছিল না কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব। ফলে ভারত-বাংলাদেশের কোনো সুবিধা ভাগ্যে জোটেনি।
বর্তমানে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতো জীবনযাপন করছি। সরকারের সকল ধরনের উন্নয়নের সুবিধা পাচ্ছি। বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময়ের সমন্বয় কমিটির সদস্য হারুনর রশীদ বলেন, দীর্ঘ ৬৮ বছর অবহেলিত থাকায় ছিটমহল এলাকায় কোনো রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব ছিল না। নানা অসুবিধায় জীবন কেটেছিল।
২০১৫ সালের ১ আগস্টের পর থেকে সকল ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে দীর্ঘ সমস্যার জট ভেঙেছে। পিছিয়ে থাকা বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীরা বাংলাদেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই সকল সুবিধা পাচ্ছে । তবে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো সরকারিকরণ করা হয়নি। ২০১৫ সালে বাঁশপচাই ভিতরকুটিতে প্রতিষ্ঠিত সালেহা সরকার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখনো সরকারিকরণ করা হয়নি। এছাড়া বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় বেকারত্ব সমস্যা রয়েছে। সরকারের তত্ত্বাবধানে বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকাগুলোতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, লালমনিরহাটের ৫৯ টি বিলুপ্ত ছিটমহলের উন্নয়নে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকাগুলোর রাস্তাগুলো পাকাকরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আগামীতেও উন্নয়ন কর্মকা- অব্যাহত রাখা হবে।