ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কৃষকদের নিম্নমানের বীজ দিলে কঠোর শাস্তির নির্দেশ

রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিসিরা সব সামর্থ্য নিয়ে কাজ করবেন

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:১৬, ৫ মার্চ ২০২৪

রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিসিরা সব সামর্থ্য নিয়ে কাজ করবেন

খেজুরের দাম বেশি হলেও কিনছেন ক্রেতারা। সোমবার পুরানা পল্টন এলাকা

রমজান মাসে আমরা কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করব। এবার ডিসিরা তাদের সব সামর্থ্য নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া জনবান্ধব ও জনগণের উপকারে আসে এমন প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়ে জেলা প্রশাসকদের। পাশাপাশি কৃষকদের ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ দেওয়া হলে সরবরাহকারীকে কঠোর শাস্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামর্থ্যরে কথা বিবেচনায় নিয়ে আঙুর, খেজুরের পরিবর্তে বরই পেয়ারা দিয়ে ইফতার করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে।

একই সঙ্গে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে জমি উদ্ধার ও প্রকল্পের ভূমি অগ্রিহণের জন্যে সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সোমবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বিভিন্ন অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ, রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আবদুর রহমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আবদুর রহমান বলেছেন, রমজান মাসে আমরা কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করব।

এবার ডিসিরা তাদের সব সামর্থ্য নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আসন্ন রমজানে আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে যাতে মানুষ স্বস্তিতে পণ্য কিনে খেতে পারে। আমরা ব্যবসায়ীদের আহ্বান করছি, আপনারা মানুষকে কষ্ট দিয়ে অধিক মুনাফা লাভের চেষ্টা করবেন না।
তিনি বলেন, এ সম্মেলনে ডিসিরা বলেছেন। তারা কোনো অবস্থাতেই বাজার অস্থিতিশীল হতে দেবেন না। খাদ্য নিয়ে কারসাজি রোধ করবেন। আমাদের আইন করে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি নৈতিক জায়গায় ঠিক থাকতে হবে। সামাজিক  প্রচার চালাতে হবে, পবিত্র মাসে কারসাজি করে দাম বাড়ানো দুঃখজনক।
কৃষকদের ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ দেওয়া হলে সরবরাহকারীকে কঠোর শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। মন্ত্রী বলেন, কেউ খারাপ বীজ সরবরাহ করলে চরম শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দিয়েছি ডিসিদের। যদি কোনো বীজে অঙ্কুরোদ্গম না হলে,  তার দায় সরবরাহকারীদের নিতে হবে। তাকে শাস্তি পেতেই হবে। সেক্ষেত্রে চরম শাস্তির কথা বলে দিয়েছি। কৃষকদের বিষয়ে আমরা অনেক সজাগ। আব্দুস শহীদ বলেন, বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ।

দেশের জিডিপি কৃষির ওপর নির্ভর করে। যে কারণে কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হলে বড় সমস্যা হয়। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। আমরা কোনো জমি অনাবাদি রাখতে চাই না। সে নির্দেশনাও জেলা প্রশাসকদের দিয়েছি। আমি নিজেও এলাকায় গিয়ে কোনো জমি অনাবাদি না রাখতে বলে দিয়েছি। সেজন্য সেচ ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার জন্য আমরা জোরদার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকদের বলেছি, আপনারা প্রত্যেক মাসে একটি করে সমন্বয় সভা করুন। জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যারা কাজ করছে তাদের কী প্রয়োজন, কী করলে ভালো হবে সে পরামর্শ নেন। সেগুলো মন্ত্রণালয় ভিত্তিক পাঠান। আমার মন্ত্রণালয়ের হলে ব্যবস্থা নেব। কৃষি মন্ত্রণালয় অনেক সজাগ। এতে বিলম্বের কোনো আবকাশ নেই। সব মানুষ যেন তাজা কৃষিপণ্য খেতে পারে সেজন্য ঢাকা শহরে কৃষিপণ্যের বাজার করা হয়েছে। কম দামে বলব না, সেখানে প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। কৃষিপণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে ঠিক, তবে তারচেয়ে বেশি আমাদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে।
আঙ্গুর, খেজুরের পরিবর্তে বরই পেয়ারা দিয়ে ইফতার করার পরামর্শ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে আঙ্গুর-খেজুর নয়, বরই-পেয়ারা দিয়ে ইফতার করুন। তিনি বলেন, আপেল লাগে কেন? আঙুর লাগে কেন? আর কিছু নেই আমাদের। ইফতারে পেয়ারা খান, আমাদের যা আছে সেগুলো ব্যবহার করুন। ইফতারের প্লেট সেভাবে সাজান। আমাদের অভাব অভিযোগ আছে। অনেক পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। দাম বেশি পড়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ইফতার পার্টি হবে না। আপনারা যেমন পরিবারের সমস্যাগুলো দেখেন, সেভাবে দেশের সমস্যাগুলো নিজেদের মনে করে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের পণ্যগুলো বিশ্বমানের করতে হবে। মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা আনন্দিত। জেলা প্রশাসকরা গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রতিটি এলাকার জেলা প্রশাসকদের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলো জিআই করার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। তারা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন।
জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে জমি উদ্ধার ও প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের জন্যে সহযোগিতা চেয়েছেন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। তিনি নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটি জেলার জনগণের কাছে রেল পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সবচেয়ে সস্তা যাত্রী ও মাল পরিবহন মাধ্যম হচ্ছে রেলওয়ে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী এ লক্ষ্যে কাজ করছি।
ডিসিরা কী সুপারিশ করেছেন, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে জিল্লুল হাকিম বলেন, অবৈধ রেলক্রসিং যেখানে আছে সেখানে আমরা সহায়তা চেয়েছি। যেহেতু আমাদের জনবল কম। বেদখল জমি উদ্ধারে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকরা সাতটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। দুটি প্রস্তাব দিয়েছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক। রেলক্রসিংয়ের জন্যে ময়মনসিংহ শহরে মাঝে যানজট হচ্ছে। সেখানে ফ্লাইওভার করতে হলে সড়ক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। আমরা করব নাকি সড়ক করবে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া শার্শায় স্টেশন করার একটি প্রস্তাব রয়েছে। নোয়াখালীর লাইন লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ড. মো. হুমায়ুন কবীর।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেছেন, প্রয়োজন হলে জনগণের উপকারে আসে এমন প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দিতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প নেওয়ার ব্যাপারে তো জেলা প্রশাসকদের মূল ভূমিকা নেই। এটা মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ভূমিকা নেয়। কিন্তু আজ আমাদের আলোচনা হয়েছে, যদি কোনো প্রয়োজন হয় তারাও (ডিসিরা) এলাকাভিত্তিক প্রকল্পের বিষয়ে প্রস্তাব দিতে পারবেন। যদি প্রকল্প জনগণের উপকারে আসে।
শহীদুজ্জামান বলেন, আমরা চাই, তাদের (ডিসিদের) মধ্য থেকেও প্রস্তাব আসুক। আর সরকার সেটা বিবেচনা করবে। শুধু ওপর থেকে নিচের দিকে যাবে তা নয়, নিচের দিক থেকেও এ ধরনের প্রস্তাব আসতে পারে।
শিক্ষা প্রকল্প নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষা প্রকল্প সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেছি। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, কারিগরি শিক্ষা সেগুলো আমরা কীভাবে আরও বেশি করতে পারি সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। মাঠ পর্যায়ে তাদের (ডিসিদের) সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা বিবেচনা করব। আমরা অনুরোধ জানিয়েছি, তারা (ডিসিরা) যেন বিবেচনায় নেয় সেটা যেন ওটা জনবান্ধব হয়। আমরা চাই মাঠ পর্যায় থেকে সুপারিশ উঠে আসুক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প সংরক্ষণের কথা বলেছেন। আজকের আলোচনায় এ প্রসঙ্গে আলোচনা ছিল কি না, জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকের আলোচনায় এটা আসেনি।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু বলেছেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে; তার মানে এটা বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এটা যেহেতু প্রধানমন্ত্রী রংপুর গিয়ে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট প্রায় ১০ লাখ মানুষের সামনে তিনি বলেছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে, তার মানে এটা বাস্তবায়ন হবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার সমীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে।  
এ সময় পাশে থাকা পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি নদীর রক্ষার জন্য। আমাদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি আছে, এই কমিটিগুলো গঠন করে বছরে যেন দুটি না হলেও একটি সভা যেন করা হয়। এ কমিটিগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যুক্ত এবং নদীগুলো রক্ষার সঙ্গে কিন্তু আমাদের জলবায়ু-পরিবেশ ইত্যাদি বিষয় চলে আসে। কাজেই এই নদী রক্ষার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।

×