ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

দেশজুড়ে দুর্গোৎসব

মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলা শেষে বিসর্জন

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:২৫, ২৪ অক্টোবর ২০২৩

মণ্ডপে  মণ্ডপে সিঁদুর খেলা শেষে বিসর্জন

নগরীর সুলতানাবাদ এলাকার দেবালয় পূজাম-পে সিঁদুর মাখাতে মেতেছে ভক্তরা

জগতের সব অমঙ্গল থেকে পরিত্রাণ পেতে দেবীর প্রতি প্রার্থনা শেষে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব। এর আগে মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতেছিলেন ভক্তরা। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের।

রাজশাহী
কঠোর নিরাপত্তা ও ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতার এবং প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মঙ্গলবার দুপুর থেকে নগরীর কুমারপাড়া সংলগ্ন পদ্মা নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই বিসর্জনকাজ। সুষ্ঠু ভাবে বিসর্জনকাজ শেষ করতে ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। 
এর আগে সকালে ঢাক, ঢোল, করতাল, শাঁখ ও উলুধ্বনির মধ্যে শেষ হয় মহাদশমী বিহিতপূজা। এর পর পরই হিন্দু রমনীরা মেতে ওঠেন সিঁদুুর শুভক্ষণে। রমনীরা দেবীর চরণ থেকে সিঁদুর তোলে ও একে অপরকে সিঁথিতে পরিয়ে দেয়। চলে মিষ্টি মুখ করানো এবং শারদীয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়। অন্যায় অবিচার আর অসুরকে বধ করার লক্ষ্যে মহাশক্তিরূপী, দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা আবারও এক বছর পর মর্ত্যে আবির্ভূত হবেন এ প্রত্যাশায় ভক্ত ও পূজারীরা শেষ বিদায় জানায় শারদীয়া দেবীকে।
 
নীলফামারী
পুরাণ অনুযায়ী, এবার দেবী মর্ত্যে এসেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে, বিজয়া দশমীতে দেবী মর্ত্য ছাড়েন ঘোড়ায় চড়ে। জগতের সব অমঙ্গল থেকে পরিত্রাণ পেতে দেবীর প্রতি প্রার্থনা ভক্তদের। এর আগে মঙ্গলবার সকালে জেলার বিভিন্ন পূজাম-পে দুর্গার কৈলাস যাত্রার ক্ষণে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন মহিলারা। একে অপরকে রাঙিয়ে দিলেন সোহাগী লালে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ বেলায় মঙ্গলবার জেলা শহরের আনন্দময়ী কালীমন্দির, বাজার মণ্ডপ, শিব মণ্ডপ, বিষ্ণু মণ্ডপ, আশ্রম মণ্ডপ, কালারডাঙ্গা মণ্ডপসহ বিভিন্ন মণ্ডপের আশপাশের হিন্দু পরিবার তখন ভিড় করেছে মন্দিরে। বিবাহিত নারীরা এ সময় দেবীকে পান ও মিষ্টি মুখ করিয়ে বিদায় জানান। এরপর একে অন্যের কপালে ও পায়ে সিঁদুর দিয়ে ও মিষ্টি খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে পালন করেন বিজয়া দশমী। সিঁদুর খেলা বাঙালি সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা উদ্যাপনের একটি ঐতিহ্যবাহী উপাদান। 
মন্দিরে সিঁদুর খেলা নিয়ে ব্যস্ত এক পুণ্যার্থী চায়না রানী রায় বলেন, সারাবছর মায়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। আর এই দিন আমাদের কাছে বিশেষ কিছু। দশমীর আগে সিঁদুর খেলা বিজয়ার তাৎপর্য ও স্মৃতিকে আরও সতেজ রাখে আমাদের মনে।

সিরাজগঞ্জ
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পাঁচদিনের শারদীয় দুর্গোৎসব প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। সকালে মন্দিরে মন্দিরে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছে। বিকেলে বিজয়া দশমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। উদ্বোধন করেন অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মীর মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কেএম হোসেন আলী হাসান, পৌর মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বিমল কুমার দাশ, ড. জান্নাত আরা হেনরী তালুকদার প্রমুখ। পরে শহরের ৪৫টি মন্দির থেকে দেবী দুর্গার প্রতিমা ট্রাকযোগে শত শত ভক্তের আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে যমুনাপাড়ের হার্ড পয়েন্টে বিসর্জন দেওয়া হয়।

রাঙ্গামাটি
কাপ্তাই হ্রদের তীরে ভক্তবৃন্দের ঢল নামে। হাজারো ভক্তের উলু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মণ্ডপ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর দিনে মণ্ডপে মণ্ডপে চলে নানা আচার-অনুষ্ঠান। মণ্ডপে মণ্ডপে অর্চনা শেষে মঙ্গলবার দুর্গ দেবীকে ট্রাকে করে শহর প্রদক্ষিণ করে। বিকেলে হ্রদের জলে দুর্গা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে সপ্তাহব্যাপী দুর্গোৎসব সমাপ্ত হয়েছে।

মৌলভীবাজার
পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গা উৎসবের শেষদিন মঙ্গলবার দুপুর থেকে মৌলভীবাজার শ্রী শ্রী কালীবাড়ির সামনে জেলার বিভিন্ন পূজাম-প থেকে কয়েকশ’ প্রতিমা নিয়ে জড়ো হতে থাকেন ভক্তরা। পরে সেখান থেকে বিকেলে প্রতিমা নিয়ে এক বিশাল র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধার প্রধান সড়ক ঘুরে চাঁদনীঘাটে মনু নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই উৎসব শেষ হয়। 

মাগুরা
মঙ্গলবার সকালে ঢাকের বাদ্যে মণ্ডপে মণ্ডপে দশমী বিহিতপূজা অনুষ্ঠিত হয়। ভক্তরা অঞ্জলি প্রদান করেন। এ বছর ৭০৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন পূজামণ্ডপের সামনে বসে মেলা। ভক্তবৃন্দের সমাগম ঘটেছে। বিকেলে নবগঙ্গা ও কুমার নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
 
ঝিনাইদহ
দেবী দুর্গার বিদায়ের সময়ে সিঁদুর খেলায় মেতেছিল রমণীরা। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের বারোয়াড়ি পূজামন্দির, কালীতলা পূজামন্দিরসহ বিভিন্ন স্থানে মণ্ডপে মণ্ডপে চলে সিঁদুর কোটা যাত্রা। সকালে পূর্জা-অর্চনার পর দেওয়া হয় পুষ্পাঞ্জলি। এরপরই হিন্দু বিবাহিত নারীরা দেবীর পায়ে লাল টকটকে সিঁদুর নিবেদন করেন। পরে সেই সিঁদুর একে অপরকে লাগিয়ে আগামী দিনের জন্য শুভ কামনা করেন। সেই সঙ্গে সিঁদুর খেলার মাধ্যমে নারীরা স্বামী ও সন্তানের দীর্ঘায়ু কামনা করেন। তারা যেন ভালো থাকেনÑ এই কামনা করেন সিঁদুর খেলার মাধ্যমে।
  
বান্দরবান
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বান্দরবান সার্বজনীন কেন্দ্রীয় দুর্গামন্দিরে পূজা উদ্যাপন পরিষদের আয়োজনে বিজয়া দশমীর পুষ্পাঞ্জলি গ্রহণের জন্য ভিড় জমান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অসংখ্য ভক্ত। এ সময় পুষ্পাঞ্জলি দান করেন বান্দরবান কেন্দ্রীয় মন্দিরের পুরোহিত রাহুল চক্রবর্ত্তী। 
বিজয়া দশমীর পুষ্পাঞ্জলি শেষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এর আগে জেলার মণ্ডপে মণ্ডপে চলে ধর্মীয় আরতি, ঢাকঢোল, ধুপ আর মোমাবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো পূজামণ্ডপ।

বাঁশখালী
মঙ্গলবার মণ্ডপগুলোতে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ-উৎসব। চলে মিষ্টিমুখ, ছবি তোলা আর ঢাকের তালে তালে নাচ-গান। তা ছাড়া বাঁশখালীর ৮৯টি পূজামণ্ডপে সকাল থেকে সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুর থেকে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দিতে ভক্তদের ঢল নামে। দেবী দুর্গাকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গোৎসব।

পিরোজপুর
স্বরূপকাঠির বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেছেন বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি জামিল হাসান বিপিএম-সেবা পিপিএম। সোমবার রাতে স্বরূপকাঠি উপজেলা পূজা পরিষদের সভাপতি শশাঙ্ক রঞ্জন সমদ্দার কেন্দ্রীয় মন্দিরে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নেছারাবাদ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাবিহা মেহবুবা, পৌর মেয়র গোলাম কবির, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মুইদুল ইসলাম, ওসি গোলাম সরওয়ার প্রমুখ।

কুমিল্লা
দেবিদ্বার উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ। এ সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী তার সঙ্গে ছিলেন।

ঈশ্বরদী
সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত ঈশ্বরদী মৌবাড়িয়া কেন্দ্রীয় মন্দির, আটঘরিয়া কেন্দ্রীয় মাতৃমন্দির, গোড়রী সার্বজনীন মাতৃমন্দির ও উত্তরচক কেন্দ্রীয় ঠাকুরবাড়ি মন্দিরসহ সতেরোটি মন্দিরে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাকিবুর রহমান শরীফ কনক। ২০/২৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাবনা জেলা প্রশাসক আসাদুজ্জামান, মেয়র শহিদুল ইসলাম, পূজা কমিটির সভাপতি মিলন কুমার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চক্রবর্তী, নিখিল কুমার সরকার, সুব্রত কুমার সাহা, সম্ভুনাথ সাহা, প্রণব কুমার চৌধুরী, রতন কুমার সাহা, লিটন কুমার সাহা, প্রফেসর জয়ব্রত সাহা, স্বপন কুমার কুন্ডু ও ঈশ^রদী উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তৌহিদ আক্তার পান্না, সহসাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সনাতন ধর্মের নেতৃবৃন্দ।

×