ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

হত্যাকাণ্ডে পিস্তল গুলি খাগড়াছড়ি থেকে আনা হয়

কুমিল্লায় জোড়া খুনের মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট 

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ০০:০১, ১১ অক্টোবর ২০২৩

কুমিল্লায় জোড়া খুনের মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট 

সৈয়দ মো. সোহেল

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মো. সোহেল ও তার সহযোগী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য হরিপদ সাহা হত্যা মামলায় ডিবি পুলিশ ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের মামলায় ক্রসফায়ারে নিহত তিনজনসহ এজাহারনামীয় পাঁচ আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির প্রার্থনা জানিয়ে আদালতে ওই চার্জশিট দাখিল করা হয়। 
মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মজিবুর রহমান। এ হত্যাকা-ে ব্যবহৃত দুটি পিস্তল, ৬৫ রাউন্ড গুলি খাগড়াছড়ি থেকে আসামি রিশাতের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় বলে তদন্তে উঠে আসে।  
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কালো পোশাকে মুখোশপরা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নগরীর পাথুরিয়াপাড়া এলাকায় কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলের থ্রি-স্টার এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ ঘটনায় কাউন্সিলর সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। নিহত কাউন্সিলরের ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলা প্রথমে কোতোয়ালি মডেল থানার চকবাজার পুলিশফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক কায়সার হামিদ, পরে জেলা ডিবির সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মনজুর কাদের ভূঁইয়া ও সবশেষে ডিবির পুলিশ পরিদর্শক শরীফ ইবনে আলম তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটে এজাহারনামীয় ছয় আসামি ও তদন্তে প্রাপ্ত আরও পাঁচজনসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। 
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হচ্ছে- নগরীর নবগ্রাম বউবাজার এলাকার সোহেল প্রকাশ জেল সোহেল, সুজানগরের মো. আলম, জিসান মিয়া, সংরাইশের মাসুম, নবগ্রামের সায়মন উদ্দিন, সুজানগরের রনি, সংরাইশের রাব্বী ইসলাম প্রকাশ অন্তু, সুজানগরের এমরান খন্দকার, পাথুরিয়াপাড়ার জাহিদুল হাসান প্রকাশ ইমরান, পূর্ব চানপুরের নাজিম ও চৌদ্দগ্রামের চাঁপাচৌ গ্রামের ইমরান হোসেন রিশাত। আসামিদের মধ্যে এজাহার বহির্ভূত রাব্বী ইসলাম প্রকাশ অন্তু, এমরান খন্দকার, জাহিদুল হাসান প্রকাশ ইমরান, নাজিম ও ইমরান হোসেন রিশাতসহ পাঁচজনের নাম তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদেরকে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।

এ মামলার তদন্তকালে এজাহারনামীয় আসামি নগরীর সুজানগর এলাকার শাহ আলম, মো. সাব্বির হোসেন ও সংরাইশ এলাকার মো. সাজন পৃথক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এ ছাড়া মামলার তদন্তে ঘটনার সঙ্গে এজাহারনামীয় সুজানগরের সুমন ও তেলিকোনার আশিকুর রহমান রকির সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।
হত্যাকা-ের নেপথ্য কারণ ॥ আদালতে চার্জশিট দাখিলকারী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শরীফ ইবনে আলম জানান, এ মামলার আসামি ক্রসফায়ারে নিহত শাহ আলম একজন বড় মাপের মাদক ব্যবসায়ী এবং তার নামে অনেক মামলা রয়েছে। কাউন্সিলর সোহেল শাহ আলমের মাদক ব্যবসায় বাধা হয়ে দাঁড়ালে শাহ আলমের সঙ্গে কাউন্সিলরের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া শাহ আলমের সহযোগী ক্রসফায়ারে নিহত সাব্বিরের সঙ্গে স্থানীয় এক মেয়ের প্রেমঘটিত বিষয় নিয়েও বাধা হয়ে দাঁড়ান কাউন্সিলর সোহেল। এতে তারা কাউন্সিলর সোহেলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
অস্ত্র-অর্থের জোগানদাতা মাদক-অস্ত্র ব্যবসায়ী শাহ আলম ॥ কাউন্সিলর হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্যের জোগানদাতা এবং অর্থের বিনিময়ে কিলারদের ভাড়া করে ক্রসফায়ারে নিহত অস্ত্র-মাদক ব্যবসায়ী শাহ আলম। সে নিজে দেশীয় অস্ত্র তৈরি-বাজারজাত ও ভাড়ায় সন্ত্রাসীদের সরবরাহ করে বিপুল অর্থের মালিক হয় বলে পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসে। 
যেভাবে কিলিং মিশন সম্পন্ন করা হয় ॥ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাউন্সিলর সোহেল হত্যাকা-ের কয়েকদিন আগে মাদক ব্যবসায়ী শাহ আলমের নেতৃত্বে জিসান ও সাজনের বাসায় আসামিদের বৈঠক হয়। পৃথক এসব বৈঠকে শাহ আলম ও তার সহযোগীরা কাউন্সিলর সোহেলের গতিবিধির ওপর নজর রাখে এবং তার অফিস ও আশপাশের এলাকায় র‌্যাকি করে। এর আগে খাগড়াছড়ি থেকে আসামি রিশাতের মাধ্যমে ৬৫ রাউন্ড গুলিসহ দুটি পিস্তল দুই লাখ ৩০ হাজার টাকায় সংগ্রহ করে তারা। এ ঘটনার সময় শাহ আলম, জেল সোহেল, নাজিম, রিশাত কাউন্সিলরের অফিসে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। সাজন ও সাব্বিরসহ অন্যরা অস্ত্র-বিস্ফোরকদ্রব্য হাতে নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তাদের গুলিতে গুরুতর আহত কাউন্সিলর সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। 
মামলার বাদী নিহত কাউন্সিলরের ভাই সৈয়দ মো. রুমন বলেন, ১১ আসামির মধ্যে সোহেল প্রকাশ জেল সোহেল ছাড়া সব আসামি জামিনে মুক্ত রয়েছে। চার্জশিটটি আদালতে দাখিলের বিষয়টি জেনেছি। আমার ভাই হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা করছি।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা ডিবির ওসি রাজেস বড়ুয়া জানান, সর্বশেষ ডিবি পুলিশের দুইজন পরিদর্শক পর পর চাঞ্চল্যকর এ মামলা তদন্ত করেন। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১১ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১১ আসামিকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছিল।

×