ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিষ্পাপ শিশু সায়মার অকৃত্রিম ভালোবাসার নিদর্শন

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ১৭:৪৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিষ্পাপ শিশু সায়মার অকৃত্রিম ভালোবাসার নিদর্শন

বঙ্গবন্ধুর ছবিতে চুমু দিচ্ছে শিশু মরিয়ম সায়মা

মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনের সীমানা প্রাচীরে দেয়ালচিত্র। সেখানে নিপুন হাতে অঙ্কণ করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের নানা দৃশ্যাবলী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়োল্লাসসহ নানা চিত্র। 

মাদারীপুর জেলার দু’জন পদস্থ কর্মকর্তা অর্থাৎ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সরকারি বাসভবনের সীমানা প্রাচীরকে বর্ণিল করে তোলা হয়েছে। এর পাশেই স্থাপিত বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল। এই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ৮ বছরের মরিয়ম সায়মা। সে প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর বাসায় ফেরার পথে সরকারি ওই দেয়ালচিত্রের ছবিগুলো তাঁর ব্যবহৃত রুমাল দিয়ে ধূলো ময়লা মুছে পরিস্কার করে দেয় তার কচি হাতে। পরিস্কার হলে ছবিগুলোয় চুমু খেয়ে আবার স্যালুট জানায়। আবার ছবিগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্য দোয়া চায়। 

গত প্রায় এক থেকে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন একইভাবে সায়মা তাঁর মনের সবটুকু মাধুরী দিয়ে কচি হৃদয়ের ছোঁয়ায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করে আসছে। এ দৃশ্য পথচারী ও সহপাঠিদের নজরে আসে। অপর পাশের ভাসমান দোকানীরাও বিষয়টি লক্ষ করেছে।

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের ২নং শকুনী রোডের বাসিন্দা আব্দুস সালাম মাতুব্বরের মেয়ে মরিয়ম সায়মা। সায়মার বাবা সৌদি প্রবাসী হলেও গত তিন বছর ধরে দেশে ফিরে এখন বেকার। তার মা আঁখি আক্তার গৃহিনী। সায়মার দুই বছরের বড় এক ভাই রয়েছে। তার নাম সায়মন ইসলাম। আব্দুস সালাম মাতুব্বরের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর সদরে। ছেলে-মেয়েদের ভাল স্কুলে লেখাপড়া করানোর জন্য তিনি মাদারীপুর শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। কারণ মাদারীপরে ভালো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

মাদারীপুর বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের পশ্চিম পাশেই জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবন। এই বাসভবনের সীমানা প্রচীরের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাধিক চিত্র রয়েছে। কোন কোন ছবিতে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিচ্ছেন। কোন কোন ছবিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসের মহানায়ক। 

এ ছাড়াও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, উন্নত ও ডিজিটাল বাংলাদেশের কিছু স্থিরচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই দেয়ালের পাশেই ফুটপাত দিয়ে প্রতিদিন হেঁটে স্কুলে আসা-যাওয়া করে শিশু সায়মা। স্কুল ছুটি হলে সে তাঁর মায়ের হাত ধরে যখন চলতে থাকে তখনই বঙ্গবন্ধুর ছবি আবার কখনো বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিতে ময়লা লাগানো থাকলেই শিশুটি তাঁর রুমাল বের করে তা পরিস্কার করে। কখনো রুমাল ছাড়াও তার স্কুলড্রেস দিয়েও এই দেয়ালচিত্রগুলো পরিস্কার করে। এ সময় শিশুটির মা আঁখি আক্তার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও সন্তানের এমন পরম শ্রদ্ধা দেখে তিনিও মুগ্ধ হন।

দু’দিন আগে রবিবার বেলা ১২টার দিকে এমন মনোরম দৃশ্য মিডিয়া কর্মীদের চোখে ধরা পড়ে। শিশু সায়মা তার মমতার আঁচল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর নিষ্পাপ শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। দেখা গেলো শিশুটি বাম হাতে পরীক্ষার হার্ডবোর্ড আর ডান হাতে রুমাল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ময়লা লাগানো ছবিটি পরিস্কার করছে। পরিস্কার শেষে বঙ্গবন্ধুর গালে চুমু খেয়ে তারপর স্যালুট জানালো। একই ভাবে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি ছবি পরিস্কার করে তার কাছে দোয়া চাইছে। শিশুটিকে শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি ছবিও পরিস্কার করতে দেখা গেলো। সায়মার কাছ থেকে ১০ মিটার দূরে মা আঁখি আক্তার দাঁড়িয়ে আছেন।

আঁখি আক্তারের কাছে সায়মার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে মরিয়ম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি শেখে। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখলেই তাকে স্যালুট করে। তাঁর ছবি অপরিস্কার থাকলে পরিস্কার করে। কখনো রুমাল না থাকলে স্কুল ড্রেস দিয়েই পরিস্কার করতে থাকে। কখনো কখনো আমার ওড়না দিয়েও পরিস্কার করে। প্রথমে বঙ্গবন্ধুর ছবি পরিস্কার করলেও এখন তার কন্যা শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের ছবিও একই ভাবে পরম মমতায় পরিস্কার করে। বিষয়টি প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও মেয়ের এমন শ্রদ্ধাবোধ দেখে এখন ভাললাগে। তাই ও ওর কাজটা করে, আর আমি ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। তারপরে এক সঙ্গে বাসায় যাই।’ 

শিশু সায়মাকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে উঠলো, ‘আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। তাই তাঁর ছবিতে ময়লা পড়া থাকলে আমার খুব খারাপ লাগে। তাই ময়লা মুছে দেই। তাঁর কাছে পরীক্ষার জন্য দোয়া চাই। তিনিও আমাকে দোয়া করে দেন। ফুটপাতের সাথে বঙ্গবন্ধুর ছবি মিশানো থাকায় বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চলাচল করায় ময়লা বেশি হয়, ছবিগুলো আরও একটু উপরে দিলে ময়লা হতো না।’ 
শিশু সায়মার এমন শ্রদ্ধাবোধ প্রায়ই দেখতে পান বলে জানালেন ফুটপাতের দোকানী রহমত আলী। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায়ই দেখি স্কুলড্রেস পড়া মেয়েটা বঙ্গবন্ধুর ছবি, শেখ হাসিনার ছবি রুমাল দিয়ে পরিস্কার করে। ছবির সামনে দাঁড়িয়ে একা একা কথা বলে। প্রথমে ভাবছিলাম, মেয়েটা হয়তো পাগল, সহজ-সরল। এখন দেখি না। মেয়েটা মন থেকে, ভাল লাগা থেকে এমনটা করে।’

 

এস

×