
সিলেট-৪ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি
সিলেট-৪ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট নিয়ে গঠিত এই আসন। পর্যটন এলাকা হিসেবে এই তিন উপজেলা দেশে-বিদেশে পরিচিত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। প্রকৃতির রূপ-রস এই অঞ্চলকে লাবণ্যময় করে তুলেছে। জাফলং, বিছনাকান্দি, সাদাপাথর, পান্তুমাই, লালাখাল, শ্রীপুর ও ভোলাগঞ্জসহ সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান এই আসনে। আয়তনের দিক থেকে দেশের অন্যতম বড় নির্বাচনী এলাকা এটি।
এ ছাড়াও প্রাকৃতিক গ্যাস, বালু, পাথর ও চুনাপাথরের জনপদ এই তিন উপজেলা। খনিজ সম্পদের পাশাপাশি রয়েছে সবুজের মিতালী। দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারি এই নির্বাচনী এলাকাতেই। প্রতি বছর সরকারের বিপুল রাজস্ব আয় আসে এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ এবং পর্যটন স্পট থেকে।
এই আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের ইমরান আহমদ। তিনি এই আসনের ছয়বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। বর্তমানে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির সভাপতি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদে লাইব্রেরি কমিটি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
দশম জাতীয় সংসদে ইমরান আহমদ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাজিম কামরান চৌধুরী। ১৯৮৮ সালে এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান। ১৯৯৬ সালে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির এম সাইফুর রহমান। তিনি এ সময় একসঙ্গে সিলেট ও মৌলবীবাজার থেকেও নির্বাচন করেন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সিলেট-৪ আসনটি ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান বিএনপি নেতা নুরুল হক। এই উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন ইমরান আহমদ। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও এই আসনে নির্বাচিত হন ইমরান আহমদ। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতা দিলদার হোসেন সেলিম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে দিলদার হোসেন সেলিমকে হারিয়ে পুনরায় নির্বাচিত হন ইমরান আহমদ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিলদার হোসেন সেলিমকে পরাজিত করে ষষ্ঠবারের মতো তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার সময়ে এলাকায় নানামুখী উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণ, স্কুল-কলেজের নতুন ভবন নির্মাণে তার অবদান অপরিসীম।
সিলেট-৪ আসন থেকে আবারও মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ইমরান আহমদ। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাপ মিয়া মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় কাজ করছেন। ব্যবসায়ী, প্রবাসী কমিউনিটি নেতা, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাপ মিয়া জনমত গঠনে নিয়মিত সভা-সমাবেশ করছেন।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে গোলাপ মিয়া জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনের জনগণের জন্য কাজ করতে চান। নেত্রী যদি তাকে মনোনয়ন না দিয়ে অন্য কাউকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন, তাতে তার কোনো আপত্তি নেই। তবে তিনি আশাবাদী, নেত্রী তাকে সুযোগ দেবেন।
প্রার্থী হতে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য নাজমুল আলম রোমেলও। মাঠ দখলে তিনি গণসংযোগ, প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী। তিনি বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেননি দলের নির্দেশনাকে সম্মান জানিয়ে। আব্দুল হাকিম চৌধুরী একাধিকবারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান। উপজেলা যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক, জেলা বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বর্তমানে সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আব্দুল হাকিম মনোনয়ন চাইলেও দল সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিমকে মনোনয়ন দেয়।
মনোনয়নের বিষয়ে আব্দুল হাকিম চৌধুরী বলেন, আমরা এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। আমাদের এক দফা, এক দাবি এই সরকারের পদত্যাগ। তত্ত্বাবধারক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আমি সিলেট-৪ আসন থেকে মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন দিলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তাও দেন তিনি।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান সেলিম। তিনিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, আমাদের এখন একটাই দাবি তত্ত্বাবধারক সরকারের অধিনে নির্বাচন। আমাদের দাবি মানলে এবং দল নির্বাচনে গেলে আমি অবশ্যই মনোনয়ন চাইব। তবে দলের যে কোনো সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। আমি আশাবাদী দল নির্বাচনে গেলে এবং আমাকে মনোনয়ন দিলে জনগণের সমর্থন পাব এবং জয়লাভ করব।
এদিকে, জাতীয় পার্টি থেকে এখনো কোনো প্রার্থীকে মাঠে দেখা যায়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটিইউ তাজ রহমান এই আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তার কোনো প্রচার দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাজ্যের কমিউনিটি নেতা এটিইউ তাজ রহমান বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। তাজ রহমান জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব। বিলেতের জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্র ‘বাংলা টাইমস’-এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন তাজ রহমান।