ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

এক ঘণ্টার বাজার

মাহাবুবুর রহমান রানা, সাঁটুরিয়া, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এক ঘণ্টার বাজার

এক ঘণ্টায় বাজারে বিক্রি হয় দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ মণ দুধ

মানিকগঞ্জের সাঁটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের গোপালপুরে এক ঘণ্টায় বাজারে বিক্রি হয় দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ মণ দুধ। ৫০ থেকে ৬০ বছরের পুরাতন এই বাজারটি সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ৯টার মধ্যে শেষ হয়। প্রতিদিন এক ঘণ্টায় এই দুধের বাজারে ৭ লক্ষাধিক টাকা বেচা-বিক্রি হয়ে থাকে। তবে এই বাজারটি মূলত উপজেলার ধলেশ্বরী নামের একটি নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। তাই ধলেশ্বরী নদীর খেয়া নৌকাটি একবার পারাপারে ব্যর্থ হলে অনেক কৃষকই দুধ বিক্রি করতে পারেন না।
উপজেলা বরাইদ ইউনিয়নের রাজৈর খেয়াঘাটে সকালে গিয়ে দেখা যায়, নদীর ওপারে তিন শতাধিক চরাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক নারী ও পুরুষ দুধের কলস মাথায় নিয়ে খেয়া পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। রাজৈর ঘাট থেকে খেয়া ওপারে যাওয়ার পর এই এক ঘণ্টার বাজার ধরতে মাথায় দুধ নিয়ে নৌকায় উঠতে শুরু হয় এক প্রতিযোগিতা।
কথা হয় রাজৈর গ্রামের বিধবা নারী হামেনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি নদী পার হয়ে মাথায় ১১ কেজি দুধ নিয়ে বাজারে আসেন বিক্রি করতে। তিনি বললেন তার স্বামী মারা গেছেন। তাই তিনি গরু পালন করে দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়।

তিনি আরও জানান গত কয়েক মাস ধরে দুধের দাম অনেক কম থাকায়, যে টাকায় দুধ বিক্রি করি তা গরুর কুঁড়া-ভুসির দামও হয় না। দুধ বিক্রি করতে আসা তিল্লিচরের কিসমত আলী বলেনÑ তিনি ১৫ কেজি দুধ নিয়ে গোপালপুর বাজারে আসছে বিক্রি করতে। গোপালপুর খেয়াঘাটের পাটনি শাজাহান মিয়া বলেন, সকাল থেকে দুধের বাজার ধরতে তিন শতাধিক কৃষক খেয়ার জন্য অপেক্ষা করেন ওপারে। সকাল ৭টা থেকে তাদের ৮টার মধ্যে খেয়া পার করতে হয়। বাজার টাইমের মধ্যে কেউ খেয়া পার হতে না পারলে ওইদিন সে আর দুধ বিক্রি করতে পারে না বলে জানান তিনি।
গোপালপুর বাজারের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, গোপালপুর বাজারটি অনেক পুরাতন একটি বাজার। প্রতিদিনই এ বাজারে বরাইদ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রান্তিক কৃষকরা তাদের গাভীর দুধ বিক্রয়ের জন্য এ বাজারে আসে। এই বাজারে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ মণ দুধ বিক্রি হয়ে থাকে। এর বেশিরভাগ কৃষক দুধ নিয়ে আসেন নদীর ওপারের চরাঞ্চল এলাকা থেকে।
সাঁটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. খোকন হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে দুধের দাম স্বাভাবিকভাবেই একটু কম থাকে। তবে ওই বাজারে ১০ থেকে ১৫ গ্রামের চরাঞ্চলের মানুষ দুধ উৎপাদন করেন। এ কারণেই এই অঞ্চলে দুধের উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কম থাকে বলে তিনি জানান।

মাহাবুবুর রহমান রানা, সাঁটুরিয়া, মানিকগঞ্জ

×