ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

৪৮ আধুনিক জাত উদ্ভাবন

নতুন উদ্দীপনায় অগ্রসরমান বিএসআরআই

স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২৪ আগস্ট ২০২৩

নতুন উদ্দীপনায় অগ্রসরমান বিএসআরআই

গাছের চারা রোপণ করছেন বিএসআরআই কর্মকর্তারা

দেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পরিবর্তিত আবহাওয়ায় দেশের মানুষের মিষ্টি জাতীয় খাদ্য ঘাটতি পূরণ ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষ্যে আখ চাষের পাশাপাশি অন্য চিনি জাতীয় ফসল উৎপাদন প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএসআরআই)। গত ৯ নভেম্বর ২০১৫ থেকে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) রাখা হয়। প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের পর থেকে অন্যা চিনি শস্য যেমন তাল, খেজুর, গোলপাতা, স্টিভিয়া, যষ্টি মধু ও মধুর ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এ কারণে সব ধরনের চিনি শস্যের গবেষণার মানোন্নয়ন এবং মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়সহ অধীনস্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আখচাষিদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্য শিল্প কারখানার সঙ্গে চিনিকলগুলো জাতীয়করণ করেন। কিন্তু স্বল্পমেয়াদি ও উচ্চমূল্যের ফসলের প্রভাব এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে নানাভাবে ফসলি জমির ব্যবহারের কারণে দিন দিন মিল এলাকায় আখ চাষের জমির পরিমাণ ক্রমাগত কমতে থাকে।

এতে বেশিরভাগ চিনি মিলগুলো দৃশ্যমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আখের ফলন বৃদ্ধি ও আখ চাষের নতুন অঞ্চল সৃষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম হয়ে পড়ে। ফলে দেশের স্বার্থে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণার মানোন্নয়নের পাশাপাশি প্রশাসনিক বিভিন্ন কার্যক্রমেও গতিশীলতা আনা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মহাপরিচালক বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কৃষিতত্ত্ববিদ ড. ওমর আলী সকল স্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত গবেষণা ও বীজ উৎপাদন কার্যক্রম মাঠ পরিদর্শন করছেন ও সার, কীটনাশক আগাছা দমন এবং সেচ ব্যবস্থাপনাসহ নানাবিধ বিষয়ে বিজ্ঞানী এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে পরামর্শ দিচ্ছেন। বিএসআরআই হতে ইতোমধ্যে ৪৮টি আধুনিক আখের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। নতুন করে আরও দুটি উচ্চ ফলনশীল আখ জাত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

গত ২০২২-২৩ রোপণ মৌসুমে রোগমুক্ত পরিচ্ছন্ন বীজ উৎপাদন কর্মসূচি এবং সাথী ফসল প্রকল্পের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের মিল এবং নন-মিল এলাকায় প্রায় ২২শ’ এর অধিক সংখ্যক আখের প্রদর্শনী প্লট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রায় ১৫ লাখ সংখ্যক বীজ আখ উৎপাদন করে মিল এবং নন-মিল এলাকায় কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের মাধ্যমে বিএসআরআইয়ের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করেছে প্রায় ৫ হাজার কৃষক ও প্রায় দুশ কর্মকর্তা। মহাপরিচালকের নির্দেশনায় শারীরতত্ত্ব বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আরবীয় খেজুরগাছের প্রায় ৫০টি আধুনিক জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে নতুন খেজুর বাগান নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরবীয় খেজুরের জাত মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করাও সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা সামনে রেখে বিএসআরআই খামারের আওতাভুক্ত আখের জমিসমূহের শস্যবিন্যাসে পরিবর্তন আসে। ফলে ফাঁকা জায়গাগুলোতে ধান এবং ডালসহ নানা জাতীয় ফসলের চাষাবাদ করা হচ্ছে। এতে করে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে চাল এবং ডাল ফসলের চাহিদা পূরণে অবদান রাখা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি ডাল জাতীয় ফসল চাষের ফলে মাটির উর্বরশক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মধু গবেষণার মানোন্নয়নের জন্য মৌ-চাষিদের মাঝে আধুনিক মৌ-বক্স সরবরাহ করা হয়েছে যার ফলে পূর্বের তুলনায় বৈজ্ঞানিক এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মৌচাষিরা অধিক মধু আহরণ করতে পারছে।

বিএসআরআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে তালের চারা উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় প্রায় এক লাখ তালের চারা উৎপাদন করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬০ হাজার তালের চারা ইতোমধ্যে ঈশ্বরদী ইপিজেড, উত্তরা ইপিজেড, চট্টগ্রামের মীরসরাই ইপিজেড, পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। চিনির বিকল্প ফসল স্টিভিয়ার গবেষণার মান উন্নয়নের জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে স্টিভিয়ার প্রদর্শনী প্লট  দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া স্টিভিয়া চাষাবাদ সংক্রান্ত নিয়মিত মাঠ দিবস এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে যার মাধ্যমে কৃষকরা স্টিভিয়া চাষে আগ্রহী হচ্ছে যা আগামী দিনে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
বিএসআরআইয়ের আঞ্চলিক ও উপকেন্দ্রগুলোর গবেষণার মানোন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিএসআরআইয়ের নতুন আঞ্চলিক কেন্দ্র সুবর্ণচর, নোয়াখালী যেটি ১০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। সেখানে মাটি, কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় ও সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন সমস্যার ওপর ভিত্তি করে গবেষণা কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে।

×