ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

সড়কে হাঁটু সমান কাঁদা, পাঁচ গ্রামের হাজারো মানুষের ভোগান্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা, বোয়ালমারী, ফরিদপুর 

প্রকাশিত: ১৬:০২, ২৩ আগস্ট ২০২৩; আপডেট: ১৬:০৫, ২৩ আগস্ট ২০২৩

সড়কে হাঁটু সমান কাঁদা, পাঁচ গ্রামের হাজারো মানুষের ভোগান্তি

সড়ক

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় একটি কাঁচা রাস্তা নিয়ে যেন হাজারও মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। শুকনো মৌসুমে ধুলা-বালি আর সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তাটি কাদায় পরিণত হয়। বিশেষ করে বৃষ্টি-বর্ষা মৌসুমে হাঁটু সমান কাদায় পরিণত হয়ে একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার রাজাপুর গ্রামটি প্রাচীন কাল থেকেই অসংখ্য গুণীজনের জন্মস্মৃতি বহনকরা প্রসিদ্ধ। এ গ্রামেই জন্ম নিয়েছেন মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত নবাব আব্দুল লতিফ খান বাহাদুর, বিখ্যাত কবি খান বাহাদুর  আব্দুল গফুর নাসসখ, স্বাধীনতা পদকে ভূষিত প্রখ্যাত চিকিৎসক, অণুজীববিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. কাজী আবুল মনসুর, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন আহমেদের মতো গুণীজনের। 

আরও পরুন:ভারত সফরে আসছেন বাইডেন 

অসংখ্য বিখ্যাত ব্যক্তির সূতিকাগার সেই গ্রামেই স্বাধীনতা পরবর্তী প্রভূত উন্নতির এ যুগেও উন্নয়নের তেমন কোনো ছোঁয়া লাগেনি। চলাচলের একমাত্র প্রধান রাস্তাটি সামান্য বৃষ্টিতে চলাচলের একেবারে অযোগ্য হয়ে পড়ে কালিয়ান্ড, রাজাপুর, রাজাবেনী,মিঠাপুর ও বিশ্বাসপুর গ্রামের হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি। 

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চতুল ইউনিয়নের কালিয়ান্ড মোড় থেকে রাজাপুর,রাজাবেনী হয়ে বিশ্বাসপুর গ্রাম পর্যন্ত কাঁচা রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। এ রাস্তার হাঁটু সমান জলকাদা মাড়িয়েই স্কুল-কলেজে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না জরুরি সেবার কোনো গাড়ি। এমন কী মৃতদেহ দাফন কাফনের জন্য গোরস্থানে যেতেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় এলাকাবাসীর। 

এলাকাবাসীদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে যেমন হাঁটু পর্যন্ত কাদাজলে একাকার হয়ে পড়ে, তেমনি শুকনো মৌসুমে ঘটে উল্টো চিত্র, ফসল পরিবহন আর মাটি পরিবহনকারী ট্রাক্টর,খেক্করের চাকার দাপটে ধুলায় ধূসর হয়ে যায় আশপাশের ঘরবাড়ি। শুকনো মৌসুমের চেয়ে বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগের সীমা বেড়ে যায় শতগুণ। সামান্য বৃষ্টিতে দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা হাঁটু পর্যন্ত কাদা হয়ে যায়। 

কাদা ভেঙে প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়েই গ্রামের ছোট বড় শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ওই এলাকায় রয়েছে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়,উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সেই সাথে প্রাচীণ একটি মাদ্রাসা,এতিমখানা ও গোরস্থান। 

এ মাদ্রাসায় শতাধিক গরীব শিক্ষার্থী আবাসিক আবাসনে থেকে পড়ালেখা করে। দুস্থ গরীব এ সব অসহায় শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই খাবারের ব্যবস্থা হয় গ্রামটির বিত্তবান পরিবার থেকে। প্রতিদিন এসব শিক্ষার্থীরা খাবার সংগ্রহ করতে হাঁটু পর্যন্ত কাদাজল ভেঙে যাতায়াত করতে গিয়ে কষ্ট সহ্য করতে হয়।

এছাড়াও বিপত্তি বাধে অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হলে। জরুরি সেবার কোনো গাড়ি দূরে থাক ভ্যানও চলে না এ রাস্তায়। 

স্থানীয় বাসিন্দা শহিদ শেখ জনকণ্ঠকে বলেন, কয়েকদিন আগে আধা কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করা হয়েছে। এতে মোটেও ভোগান্তি কমেনি। বাকি আড়াই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় নিয়ে প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় কেউ মারা গেলে, প্রায় পাঁচ গ্রামের শেষ আশ্রয়স্থল রাজাপুর গোরস্থান অথচ একহাঁটু কাদা ভেঙে দাফন-কাফন বা জানাযায় এলাকাবাসী অবর্ণনীয় দুর্ভোগ চোখে না দেখলে বুঝার কোনো উপায় নেই।

স্থানীয় কৃষক আবদুল হক বলেন, কাঁদা-বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটু সমান কাদা হয়ে যায়। জমির ফসল ঘরে তোলা যায়না। ছাত্রছাত্রীরা স্কুল কলেজ,মাদ্রাসায় যেতে পারে না। জন্মের পর থেকে দেখে আসছি পাঁচটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের এই কাঁচা রাস্তাটি নিয়ে কষ্ট পোহাতে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) খন্দকার আকবর জনকণ্ঠকে বলেন,এলাকার লোকজন গাড়ি চালিয়ে রাস্তা গর্ত করে ফেলেছে। বৃষ্টির পানি বেঁধে কাদার সৃষ্টি হয়েছে। কিছুদিন আগে আধা কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করা হয়েছে। বাকিটুকুও হয়ে যাবে।

চতুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর ইউনিয়নে অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই কাঁচা রাস্তার মধ্যে আধা কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করা হয়েছে। বাকিটুকুও পাকাকরণের চেষ্টা চলছে। 

বোয়ালমারী উপজেলা প্রকৌশলী (স্থানীয় সরকার বিভাগ) পূর্ণেন্দু সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানানেই। খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
 

এসআর

×