ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

পেকুয়ায় ঘর নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ২২:২৩, ১৯ আগস্ট ২০২৩

পেকুয়ায় ঘর নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি

নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি করা ঘর

পেকুয়ার মগনামা ও বারবাকিয়া ইউনিয়নে ভূমিহীন এবং গৃহহীনদের জন্য ৩৬টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অতি নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে ঘর তৈরি করায় উপকারভোগীদের মাঝে এখনো ঘরগুলো হস্তান্তর করতে পারেনি উপজেলা ভূমি অফিস। ঘরের নকশা অনুযায়ী ঘর তৈরি না করে পেকুয়ার ইউএনও ও এসিল্যান্ড নিজেদের ইচ্ছেমতো ঘর তৈরি করায় হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ৩৬টি ঘর তৈরিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে ঘরগুলোতে লাগানো লাল রঙের অতি নিম্নমানের টিন রাতারাতি পরিবর্তন করে আকাশি-সবুজ রঙের টিন লাগানো হয়েছে।  
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মটকাভাঙ্গা গ্রামে ১৫টি ঘর মির্মাণ করা হয়েছে ভোলা খালের চরে। প্রবাহমান খালের চরে ঘর নির্মাণ করায় গাইডওয়ালও  দেওয়া হয়েছে। সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত ভোলা খালের চরে ঘর নির্মাণ করায় চলতি বর্ষা  মৌসুমে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে নির্মিত ঘরগুলোর দক্ষিণ অংশে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। ঘর নির্মাণে অতি নিম্নমানের কাঠ, কংকর, ইট, টিন, সিমেন্ট ও বালি ব্যবহার করার অভিযোগও উঠেছে। এ ছাড়া মগনামা ইউনিয়নে ঘর বিতরণের জন্য প্রস্তুতকৃত উপকারভোগীদের তালিকা তৈরিতেও ব্যাপক স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক উপকারভোগীদের বসবাসের জন্য ঘর ও জমি থাকলেও উপজেলা ভূমি অফিস যাচাই-বাছাই না করে তাদের ভূমিহীন ও গৃহহীনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ঘর দেওয়ার জন্য তালিকায় নাম রাখা হয়েছে। 
সরেজমিনে দেখা গেছে, পেকুয়ার ইউএনও এবং এসিল্যান্ড গত কয়েকদিন ধরে তড়িঘড়ি করেই অনিয়মের মাধ্যমে তৈরিকৃত ঘরগুলোতে ব্যবহৃত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী গোপনে সরিয়ে নিয়েছে। এসব ঘরের টিন খুলে নিয়ে নতুন টিন লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপকারভোগীদের কয়েকজন। ঘরগুলোর মেঝেতে ইট বিছিয়ে ওপরে সিমেন্ট-বালি মিশ্রিত প্রলেপ দেওয়া হয়েছিল। এখন ঘরগুলোর মেঝের সিমেন্ট-বালির প্রলেপ তুলে নিয়ে সেখানে কংকর-বালি মিশ্রিত করে টেকসই ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। মগনামা ও বারবাকিয়ার ৩৬টি ঘর তৈরিতে দুর্নীতি ঢাকতে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড শ্রমিক নিয়োগ করে তড়িঘড়ি করে কাজ বাস্তবায়নের ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 
এ প্রসঙ্গে পেকুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, রাজমিস্ত্রি  ছৈয়দ আলম নিম্নমানের টিন ব্যবহার করায় তা খুলে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে ভালো মানের টিন লাগানো হচ্ছে। আর ঘরের মেঝেতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় তাও তুলে সেখানে কংকরের ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। তবে ঘর তৈরিতে উপজেলা প্রশাসন কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করেনি বলে দাবি করেন তিনি। মগনামা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলাউদ্দিন অভিযোগ করে জানান, প্রবাহমান ভোলা খালের চরে মটকাভাঙ্গা ও শরৎ ঘোনা গ্রামে গৃহহীনদের ঘর বানানো হয়েছে। ফলে ভোলা খালের চরে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে ঘরগুলোর একাংশ পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঘর নির্মাণে অনিয়ম প্রসঙ্গে পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেকুয়ায় গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরিতে কোনো ধরনের অনিয়ম করা হয়নি। প্রশাসনের অগোচরে রাজমিস্ত্রি নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাজমিস্ত্রি ছৈয়দ আলম কর্তৃক আমার বিরুদ্ধে আনীত ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ভিত্তিহীন। সে যতুটুক কাজ করেছে আমরা তার বিল দিয়েছি।

×