ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

তীব্র ভাঙনে দিশেহারা পদ্মা তীরবাসী

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ০০:২১, ২৮ জুলাই ২০২৩

তীব্র ভাঙনে দিশেহারা পদ্মা তীরবাসী

ভেড়ামারায় পদ্মা একের পর এক গ্রাস করছে ফসলি জমি ও বসতভিটা

কুষ্টিয়ায় তীব্র হয়েছে পদ্মার ভাঙন। নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহে শুরু হয়েছে ভাঙন। ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের টিকটিকিপাড়া ও মুন্সিপাড়া এবং মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া ও তালবাড়ীয়া এলাকায় সপ্তাহব্যাপী এই ভাঙনে অন্তত ১৫ হাজার একর ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী উপকূলীয় বাসিন্দারা। ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রতিবছরই উপকূলীয় এলাকার বহু ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও স্থাপনা যাচ্ছে নদীগর্ভে। এবার নতুন করে এই নদী ভাঙন শুরু হওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মহাসড়কটি পড়েছে চরম ঝুঁকিতে। সড়কটির অনেকটাই নিকটবর্তী হয়ে পড়েছে পদ্মা নদীর। এ ছাড়া ভেড়ামারায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ এবং ৪১০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটিও রয়েছে নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে।   
জানা যায়, প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) বাস্তবায়ন না হওয়ায় বছরজুড়ে বিরতিহীন এই নদী ভাঙনে ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরকারি ব্যয়ের বোঝা। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন, ডিপিপি অনুমোদন পেলেই এলাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে। 
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, ভাঙন রোধে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনীয় আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইমরান সর্দার বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ভাঙনের তীব্রতাও বেড়েছে। বর্তমানে আমরা জিও ব্যাগ ও বড় টিউব ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছি। তালবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মন্ডল জানান, তালবাড়িয়া ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম ইতোমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও ওইসব ঘরবাড়ি, জায়গা-জমি, রাস্তাঘাট, হাটবাজার কোনো কিছুই আর ফিরে আসবে না।

তিনি জরুরি ভিত্তিতে এই এলাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান। কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি ডাক্তার এসএম মুসতানজিদ বলেন, গত দুই বছর আগে যে ডিপিপি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় পাঠানো হয়েছিল তার প্রাক্কলন ব্যয় ছিল ৯শ ৮৯ কোটি টাকা। এটি অনুমোদন ও বাস্তবায়ন না হওয়ায় চলতি অর্থবছরে ওই প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণ অর্থাৎ এক হাজার ৮শ ১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এবারও যদি প্রস্তাবিত ডিপিপি অনুমোদনসহ বাস্তবায়ন না হয়ে ফাইলবন্দি থাকে তাহলে খুব শীঘ্রই উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের মহাসড়ক, ভেড়ামারা সেচ প্রকল্প ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাপনা নদী ভাঙনের হুমকির মুখে পড়বে। 
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, পদ্মা নদীর ভাঙন এবার তীব্র হয়েছে। নদীতে তাৎক্ষণিক জিও ব্যাগ ফেলে এসব ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সূত্র জানায়, ঈশ্বরদীর রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হওয়ায় পদ্মা নদীর ভেতরে গভীর থেকে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে নদীর পানি সেখানে ধাক্কা খেয়ে গতিপথ সরে এপারে উপকূলীয় এলাকায় পানির তীব্র স্রোত ধাক্কা দিচ্ছে। এতেই  ভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এই নদী ভাঙন।

×