ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

অধ্যাপক ড. তাহের হত্যা: রাতে ফাঁসি কার্যকর ড.মহিউদ্দিনের

সংবাদদাতা, ভাঙ্গা, ফরিদপুর 

প্রকাশিত: ১৭:৫৭, ২৭ জুলাই ২০২৩

অধ্যাপক ড. তাহের হত্যা: রাতে ফাঁসি কার্যকর ড.মহিউদ্দিনের

রাজশাহী কারাগার। ফাইল ফটো

অধ্যাপক ডক্টর তাহের হত্যা মামলায় ৪ নম্বর আসামি ডক্টর মহিউদ্দিন। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাত ১০টায় তার ফাঁসি কার্যকর হবে রাজশাহী কারাগারে। গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবর স্থানে বাবার কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার ভাই আরজু মিয়া । 

ডক্টর মহিউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে। তিনি অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি ছিলেন। ফাঁসির খবরে জান্দি গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মহিউদ্দিনের গ্রামের বাড়িসরেজমিনে জান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ড. মহিউদ্দিনের মা লাঠি হাতে ঘরের দরজার সামনে অবাক দৃষ্টিতে বসে থাকেন। পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসী শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। তার শতবর্ষী বৃদ্ধা মা চোখে তেমন দেখেন না এবং কানে একদমই শুনেন না। তিনি এখনও জানেন না, তার ছেলে ড. মহিউদ্দিনের আজ ফাঁসি কার্যকর হবে। পরিবারের কেউ তাকে কিছু বুঝতে দিচ্ছেন না। 

তার বাড়িতে কোন সংবাদকর্মী বা আত্মীয় স্বজনদের দেখলেই তিনি জানতে চান কি জন্য এসেছেন আপনারা। হয়তো মা খবর শুনলে স্টোক করতে পারেন এজন্যই তাকে কিছুই জানানো হচ্ছে না বলে জানান তার ছেলে আরজু মিয়া ।

এ বিষয়ে ড. মহিউদ্দিনের আপন চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া জানান, গত মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাজশাহী জেলা কারাগারে মহিউদ্দিনের সঙ্গে পরিবারের লোকজনসহ শেষ দেখা করি। 

কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতে, আমরা সেখানে পরিবারের ৫ সদস্য দেখা করি। মহিউদ্দিনের স্ত্রী, ভাই আরজু মিয়া, বোন রিনা বেগম, আমি চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া ও আরেক চাচাতো ভাই শাহীন মিয়া। 

কারাগার ভিতর থেকে পরিবারের লোকজনকে ড. মহিউদ্দিন বলেছেন, অধ্যাপক তাহের ছিলেন আমার বাপের সমতুল্য। তিনি আমাকে হাতে ধরে মানুষ করেছেন। তার হত্যাকাণ্ডের বিষয় আমি কিছুই জানি না। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমি ন্যায় বিচার পেলাম না। আমি আল্লাহর কাছে এর বিচার দিলাম। তবে আমাকে বাবার কবরের পাশে দাফন করিও।

ড. মহিউদ্দিন তার স্ত্রীকে বলেছেন, যেহেতু বাংলাদেশে আমি ন্যায় বিচার পেলাম না। তুমি জায়গা জমি বিক্রি করে ছেলে-মেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাও ।

মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু মিয়া বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমার ভাই ৪ নম্বর আসামি ছিলেন। কিন্তু  এক ও দুই নম্বর আসামি তারা খালাস পেল অথচ আমার ভাইয়ের ফাঁসি বহাল রইল। ভাই নির্দোষ ছিল বিধায় মামলা সম্পর্কে তেমন কোন গুরুত্ব দেননি। আমার ভাইয়ের বিচার আল্লাহর কাছে দিলাম। 

তিনি আরো বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে একটা চিঠি দিয়েছিল । সেই চিঠিটি বাড়ি নিয়ে খুলতে বলেছিলেন, আমরা গাড়ির মধ্যেই চিঠি খুলে দেখেছি, ভেতর লেখা রয়েছে ২৭-৭-২০২৩ বৃহস্পতিবার রাত দশটা এক মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হবে। আজ দুপুরে পরিবারের সদস্যরা লাশ আনতে রাজশাহী রওনা দিয়েছেন। আগামীকাল জুমার নামাজের আগেই তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং পারিবারিক কবর স্থানে তাকে দাফন করা হবে।

মহিউদ্দিনের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি। সে রাজশাহী নিজ বাড়িতে থাকেন।

গ্রামের ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা হাসিনা বেগম জানান, মহিউদ্দিন আমরা গ্রামে বলি সূর্য মিয়া, তার মতো ভদ্র ছেলে আমাদের গ্রামে আর হবে না। 
 

এসআর

×