ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু

গড়াই নদীর দুই পাড়ে আনন্দ উচ্ছ্বাস

এমএ রকিব, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ১৯ জুলাই ২০২৩

গড়াই নদীর দুই পাড়ে আনন্দ উচ্ছ্বাস

উদ্বোধনের আগেই খুলে দেওয়া হয়েছে শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু

গড়াই নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজ দুই পাড়ের জনপদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সেতুবন্ধন। ফলে এলাকাবাসীর দীর্ঘ ৪ যুগের বেশি সময়ের প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আমলে স্বপ্নের এই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এলাকাবাসী উৎফুল্ল-আনন্দিত। এ ব্রিজের প্রস্তাবিত নাম দেওয়া হয়েছে কুমারখালী ‘শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু’। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না হলেও ঈদের আগে জনসাধারণের সুবিধার্থে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে ব্রিজটি। 
কুষ্টিয়ার তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ কুমারখালী উপজেলার তীর ঘেঁষে বয়ে গেছে গড়াই নদী। নদীটি দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে কুমারখালীবাসীকে। উপজেলার মোট ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি পড়েছে গড়াই নদীর এপাড়। অপর ৫টি ইউনিয়ন পড়েছে নদীর ওপাড়ে। যদুবয়রা, পান্টি, চাঁদপুর, বাগুলাট ও চাপড়া নামের এ পাঁচটি ইউনিয়নের কৃষিপণ্য পরিবহনসহ মানুষের উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ও পারাপারের একমাত্র ভরসা ছিল ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও নৌকা। ঝড়-বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়ায় নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো সাধারণ মানুষকে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদেরও ছিল একই অবস্থা। বিশেষ করে রোগী পরিবহন ছিল ওই এলাকার কয়েক লাখ মানুষের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

কিন্তু সেই দৃশ্যপট এখন পাল্টেছে। এখন প্রতিদিন পণ্যবাহীযানসহ অসংখ্য মানুষ নদী পারাপার হচ্ছে এ ব্রিজ দিয়ে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি জীবনমানের উন্নয়ন ঘটছে। ঈদুল আজহার একদিন আগেই খুলে দেওয়া হয় লাখো মানুষের স্বপ্নের এই সেতু। প্রস্তাবিত ‘শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু’টি বর্তমানে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায়। যাঁর নামে এই সেতু সেই শহীদ গোলাম কিবরিয়া ছিলেন খোকসা-কুমারখালীর রাজনীতির প্রাণপুরুষ ও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা। ছাত্রাবস্থায় তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর গোলাম কিবরিয়া ছিলেন তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। বাংলাদেশ সংবিধানের একজন সিগনেটরি মেম্বারও ছিলেন। 
১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম কিবরিয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর প্রখ্যাত এই নেতা কুমারখালীর বড় জামে মসজিদ ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে শহীদ হন। কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের বর্তমান এমপি শহীদ গোলাম কিবরিয়ার নাতি ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এ অঞ্চলের মানুষের জন্য ব্রিজটি প্রধানমন্ত্রীর একটি উপহার। এলাকায় আমার নির্বাচনী প্রথম ওয়াদা ছিল এই সেতু নির্মাণ। সেটি আমি বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।

সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণসহ নদীর দুই পাড়ের জনগণের মধ্যে একটা অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটে যাচ্ছে। কুমারখালী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রহিম জানান, ‘প্রায় ৮৯ কোটি ৯১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯১ টাকা ব্যয়ে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে পিসি গার্ডার ব্রিজ ও প্রায় ৫৫০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। আপাতত সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছে। পরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।’

×