ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম

বেড়েছে বাণিজ্য, বাড়েনি রপ্তানি

জাহিদ হাসান মাহমুদ মিম্পা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:৩০, ৫ জুলাই ২০২৩

বেড়েছে বাণিজ্য, বাড়েনি রপ্তানি

গত কয়েকবছরের তুলনায় এবার আমের দাম ভালো মিলছে ‘আমের রাজধানী’ চাঁপাইনবাবগঞ্জে

গত কয়েকবছরের তুলনায় এবার আমের দাম ভালো মিলছে ‘আমের রাজধানী’ চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ফলে লাভের মুখ দেখছেন আম বিক্রেতারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট বাজার দেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার। যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে। এ বছর জেলায় আম বিক্রি বাড়লেও রপ্তানি বাড়েনি। করোনার প্রভাবসহ বিভিন্ন জটিলতা কাটিয়ে এবার মোটামুটি ভালো দামেই বিক্রি হচ্ছে আম। এতে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা খুশি থাকলেও রপ্তানি না বাড়ায় হতাশা রয়েছে। ঈদ পূর্ববতী ও পরবর্তী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এবার উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রশাসনিক নজরদারির কারণে পরিপক্ব¡ ও বিষমুক্ত আমই বাজারজাত হচ্ছে এবং দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আম বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে চাঙা হয়ে উঠেছে নানা ধরনের ব্যবসা কার্যক্রম।  
দেখা গেছে, মান অনুযায়ী খিরসাপাত ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকায়, ল্যাংড়া ২৫০০ থেকে ৩০০০ হাজার, লক্ষণভোগ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং গুটিসহ অন্যান্য জাতের আম ১৫০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। কানসাট বাজারে আম বিক্রি করতে আসা শ্যামপুর ইউনিয়নের বাবুপুর গ্রামের বাসিন্দা রায়হান আলী বলেন, এবার আমের দাম তুলনামূলক ভালো। জলবায়ুর প্রভাবে এ বছর দেরিতে আম উঠলেও অতিরিক্ত গরমে এবার বিভিন্ন জাতের আম দ্রুত পেকে যাচ্ছে। চিন্তায় আছি, সব মিলিয়ে লাভ হবে কি না।  
শাহবাজপুর এলাকার আমচাষি ইসরাঈল বলেন, গত কয়েকবছর ধরেই আমে লোকসান গুণছি। এবার লাভবান হতে পারব কি না বলতে পারছি না। কারণ সবকিছুর দাম বেড়েছে। একজন শ্রমিকের মজুরি গতবছর ছিল ২৫০ টাকা, এবার ৪০০ টাকা। যে কীটনাশক আগে ৮০০ টাকায় কিনেছি, এবার তা কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকায় এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ায় আর খরার কারণে পানি সেচে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। এদিকে চলতি মৌসুমে ২৪০০ কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা করছে কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলো বাণিজ্যের আশা করছে আরও বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে এখানে আম চাষ হতো ২১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। ২০২৩ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার হেক্টরে। ১৫ বছরে আম চাষের জমি বেড়েছে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর। জমি বাড়ার পাশাপাশি আম চাষে চাষিরা আরও আন্তরিক হওয়ায় উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি বাণিজ্যও বাড়ছে। কৃষি বিভাগ আরও জানায়, গতবছর জেলায় ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছিল। সে মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদন হয় ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ সালে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমি থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন এবং ২০২০ সালে ৩৩ হাজার হেক্টর জমি থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়।

গতবছরের তুলনায় প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা বেশি আম বাণিজ্য হবে এবার-এমনটাই আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।  অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক দাবি করেন, সরকারি তথ্যের তুলনায় এ জেলায় আমের পরিসংখ্যান আরও বেশি হবে। তার মতে, সরকারি পরিসংখ্যানে ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন বলা হলেও এ বছর প্রকৃতপক্ষে আমের উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তিনি আরও দাবি করেন, উৎপাদিত মোট আমের সিংহভাগই ঝড় বা বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়। একসঙ্গে পাকার কারণে পচেও যায়। তাছাড়া আমের ন্যায্য দাম পান না চাষিরা। যদি এ জেলায় আম প্রক্রিয়াজাত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে বাজার মূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, অনেক আগে থেকেই আম উৎপাদনে জেলার মধ্যে শিবগঞ্জ সেরা। এবারও প্রচুর আম রয়েছে এ উপজেলায়। আর কানসাট আমবাজার এ উপজেলাতেই অবস্থিত। তবে বাজারে দৈনিক কত টাকার আম বিক্রি হয় তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। আনুমানিক বলা যায়, দৈনিক ৩০-৪০ কোটি টাকার আম বিক্রি হয় এ বাজারে।  তবে জেলায় আম বাণিজ্য বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়েনি রপ্তানি। কৃষি বিভাগ জানায়, ২০১৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৬৫ দশমিক ৪৫ মেট্রিকটন, ২০২০ সালে ৬৫ দশমিক ৫০ মেট্রিকটন, ২০২১ সালে ৬৫ দশমিক ৫৯৬ মেট্রিকটন এবং ২০২২ সালে ১৩২ দশমিক ৫৬৯ মেট্রিকটন আম বিদেশে রপ্তানি হয়েছে।

আর চলতি বছর এ পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ৪০০ কেজি আম রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, এ বছর কৃষি বিভাগ রপ্তানি বাড়াতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অন্যান্য বছর নিজ উদ্যোগে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করা হলেও বিদেশে পাঠাতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়েছিলেন চাষিরা। তবে এবার সরকারি প্রকল্প থাকায় আম রপ্তানির নিশ্চয়তা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

×