ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জে ৭’শ বছরের ঐতিহ্যের মিলনমেলা শুরু

সংবাদদাতা, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১৮ মার্চ ২০২৩

সুনামগঞ্জে ৭’শ বছরের ঐতিহ্যের মিলনমেলা শুরু

গঙ্গা স্নান

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে শুরু হয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন পণতীর্থ (মহা-বারুণী) গঙ্গা স্নান ও শাহ্ আরেফিন(র.) ওরস মাহফিল। ৭’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দুটি অনুষ্ঠান ঘিরে সনাতন ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কয়েক লাখ ভক্ত-আশেকান ও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে যাদুকাটা নদীর দুই পাড় ও সীমান্তবর্তী লাউড়েগড় এলাকায়।

আজ শনিবার উপজেলার সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায় হয়রত শাহজালাল(র.) এর অন্যতম সঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন(র.) এর মোকামে বার্ষিক ওরস মাহফিল ও মেলা শুরু হয়েছে। চলবে তিন দিনব্যপী। এদিকে পরের দিন রবিবার থেকে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের যাদুকাটা নদী সংলগ্ন রাজারগাঁও এলাকায় মহাবিষ্ণুর অবতার অদ্বৈত জন্মধাম পণতীর্থে মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে মহা-বারুণী গঙ্গাস্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হবে। উৎসব দুটি ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ভক্ত-আশেকানদের আগমনে পুরো এলাকা এক সম্প্রীতির মিলনমেলায় পরিণত হয়।

ঐতিহাসিকদের মতে, অতীতের পাপ মোছন, ঈশ্বরের আশীর্বাদ ও পুণ্য লাভের আশায় প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে দেশ ও দেশের বাহিরের কয়েক লাখ সনাতন ধর্মের অনুসারী নর-নারী শ্রী অদ্বৈত আচার্য ঠাকুরের আবির্ভাবস্থল পণতীর্থ স্মৃতিধাম যাদুকাটা নদীর জলে পূণ্য স্নান করে কলুষমুক্ত হন এবং ঈশ্বরের কৃপা লাভ করেন। তাঁদের বিশ্বাস, পণতীর্থ  স্নানের মাধ্যমে মনো-বাসনা পূর্ণ হয়। এ উপলক্ষে মহা-বারুনী মেলা বসে। ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে এই তীর্থের সূচনা করেন মহাপুরুষ শ্রী অদ্বৈত আচার্য ঠাকুর। এবং তাঁর স্মৃতিতার্থে অদ্বৈত আচার্য মন্দির গড়ে উঠেছে যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী রাজারগাঁও গ্রামে। 

এদিকে প্রতি বছর পণতীর্থ মহা-বারুনী গঙ্গা স্নানের তারিখের সাথে মিল রেখে উপজেলার সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায় হযরত শাহজালাল (র.) এর অন্যতম সঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন (র.) এর বার্ষিক ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওরস উপলক্ষে সেখানেও মেলা বসে। স্থানীয়দের মতে, হযরত শাহ আরেফিন (র.) এর মোকাম ভারত সীমান্তের ওপারে এক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত হলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অগণিত মুসলমান নর-নারী ওরসে শরিক হন এবং দূর থেকেই এই দরবেশের মোকাম জিয়ারত করেন। ওরসে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, পাহাড়ি ও বাঙালি ভক্ত-আশেকান তাঁর স্মৃতিবিজড়িত লাউড়েরগড় এলাকায় সমবেত হন। 

শ্রী অদ্বৈত জন্মধাম কেন্দ্রীয় কমিটির তাহিরপুর উপজেলা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য গণেশ তালুকদার বলেন, গঙ্গা স্নান ও মহা-বারুনী মেলা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। স্নান ও মেলা শেষে পুণ্যার্থীরা যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন এ বিষয়টি এবারও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

শাহ্ আরেফিন(র.) ওরস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আলম সাব্বির বলেন, শাহ্ আরেফিন(র.) ওরস ও মেলা সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় হয়েছে। ওরস ও মেলা উপলক্ষে ওয়ান-ওয়ে সড়ক দিয়ে যান চলাচল করবে। 

শাহ্ আরেফিন(র.) ওরস উদযাপন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, মহা-বারুনী গঙ্গাস্নান ও শাহ আরেফিন(র.) ওরস এলাকায় আগত ভক্ত-আশেকান ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা কাজ করবেন। তাছাড়া সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে গঙ্গা স্নান এলাকা ও উৎসবস্থল সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হবে।

তাসমিম

×