ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেওয়ানগঞ্জ মডেল মসজিদ নির্মাণে ধীর গতি, অনিয়মের অভিযোগ 

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর

প্রকাশিত: ১৬:২১, ১৭ মার্চ ২০২৩

দেওয়ানগঞ্জ মডেল মসজিদ নির্মাণে ধীর গতি, অনিয়মের অভিযোগ 

নির্মাণাধীন মডেল মসজিদ

নির্ধারিত সময়ের আড়াই বছর পার হতে চললেও শেষ হয়নি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ। এক বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় সাড়ে তিন বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি সাব-ঠিকাদার জামালপুর-৫ (সদর) আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন। এমপির ভয়ে মসজিদটির নির্মাণ কাজ নিয়ে স্থানীয় মুসল্লিরা মুখ খুলতেও পারছেন না। 

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরে মসজিদটির অবস্থান। নির্মাণ কাজে ধীর গতির কারণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও মুসল্লিরা। মোহাম্মদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে কাজটি করছেন জামালপুর-৫ (সদর) আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন। আর ওই কাজটির তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন এমপির স্থানীয় প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান। 

সরেজমিনে দেখা যায়, মডেল মসজিদের তিন তলা ভবনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা খুব ধীর গতিতে কাজ করছেন। এতো বড় একটি ভবনে মাত্র ২০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। মূল ভবনের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তরা, নকশার কাজ, অজুখানা, টাইলস, শৌচাগারের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। 

এছাড়াও স্যানিটারীর সব কাজ বাকি রয়েছে। খুব ধীর গতিতে চলছে নির্মাণ কাজ। মুসল্লি ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, একজন এমপি হয়েও মসজিদটির নির্মাণ কাজ করছেন তার খেয়াল খুশি মতো। যখন তার মন চায় কাজ করেন। আবার কখনো কাজ বন্ধও রাখেন। নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মুসল্লিরা। 
মসজিদটির নির্মাণ কাজে একজন এমপি যুক্ত থাকায় ভয়ে নির্মাণ কাজ নিয়ে স্থানীয় কেউ মুখ খুলতেও সাহস পান না। মসজিদের কাজটি অনেক দিন ধরে চলছে। সব মসজিদের কাজ শেষ হলেও, এই মসজিদের কাজটি এখনো শেষ করতে পারেননি এমপি। কাজের গুণগতমানও খারাপ বলে অভিযোগ উঠেছে। শুরু থেকেই কাজটির বিভিন্ন অংশে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। 

গণপূর্ত বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা গণপূর্ত বিভাগ মসজিদের ভবন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছেন। 
২০১৮-১৯ অর্থবছরে নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয় ৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাব-ঠিকাদার হিসেবে জামালপুর-৫ (সদর) আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন ২০১৯ সালের ২১ জুলাই মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করে।  ২০২০ সালের ২২ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তিন বছর সাত মাস পার হতে চললেও এখনো প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। 

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিযোগ করে বলেন, কাজটি করছেন জামালপুর সদরের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন। নির্মাণ কাজে গাফিলতির কারণে মসজিদের নির্মাণের কাজ খুবই ঢিলেতালে চলছে। যেটুকু কাজ শেষে হয়েছে সেটাও নিম্নমানের কাজ হয়েছে। দরপত্র অনুযায়ী কাজটি হচ্ছে না। 

নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কাজটি সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতেও চান না। আরেকজন বলেন, কাজটি করতে কতদিন লাগবে তা বলা মুশকিল। সঠিকভাবে কলাম ও পিলার করা হয়নি। 
মসজিদ যে কতদিন টিকবে তা আল্লাহই ভালো জানেন। একটি আল্লাহর ঘরের মধ্যে এমন অনিয়ম চলছে। ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণের কাজ ঢিলেতালে ও নিম্নমানের করা ঠিক হচ্ছে না। 

মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সৈয়দ আলী বলেন, কাজটি অনেক দিন হয়ে গেছে। প্রায় চার বছর হতে যাচ্ছে। আমি কাজটির শুরু থেকেই আছি। মাঝখানে কাজ বন্ধ ছিলো। এখন কাজ প্রায় শেষের দিকে। 

এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন এমপির মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

পরে এমপির প্রতিনিধি ও মসজিদটির নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মাহফুজুর রহমান বলেন, নির্মাণ কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। করোনা ও বন্যার কারণে কাজটি দেরি হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে মসজিদটি হস্তান্তর করা হবে। 

জামালপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোবারক হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, জেলার আটটি মসজিদের মধ্যে সাতটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ওই সাতটি উদ্বোধনও হয়েছে। শুধুমাত্র দেওয়ানগঞ্জের মডেল মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। কাগজপত্রে কাজটি পেয়েছেন মোহাম্মদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদাস। 

তবে কাজটি করছেন জামালপুর-৫ (সদর) আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন। ধীর গতিতে কাজ করার বিষয়টি স্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, সত্যি কথা বলতে, ওই কাজের শ্রমিকদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্যে ওই প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। 
আগামী জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করতে না পারলে, ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।   

 এসআর

×