ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিট

হট্টগোল ধস্তাধস্তির মধ্য দিয়ে শেষ হলো ভোট গ্রহণ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৪, ১৭ মার্চ ২০২৩

হট্টগোল ধস্তাধস্তির মধ্য দিয়ে শেষ হলো ভোট গ্রহণ

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের শেষদিন বৃহস্পতিবার দুপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি

টানটান উত্তেজনা, হট্টগোল, কড়া নিরাপত্তা ও ধস্তাধস্তির মধ্য দিয়ে সুপ্রিমকোর্ট বার সমিতির দ্বিতীয় দিনের নির্বাচন শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার কিছুক্ষণ পর এই ভোট গ্রহণ শুরু হয়। দ্বিতীয় দিনে ভোট পড়েছে ১৯২০টি। ৮ হাজার ৬০২ ভোটারের মধ্যে দুই দিনে মোট ভোট দিয়েছেন ৪১৩৭ আইনজীবী। বিএনপিপন্থী আইনজীবী মনোনীত সভাপতি প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে যে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির করণীয় কিছুই নেই। অন্যদিকে সুপ্রিমকোর্টে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন সভাপতি প্রার্থী ইউনুছ আলী আকন্দ। আগামী সপ্তাহে এর শুনানি হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। 
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা চলে নিরুত্তাপ ভোটগ্রহণ। তবে এতে ভোটার উপস্থিতি ছিল সামান্য। অল্প কজন ভোটারকে ভোট দিতে দেখা যায়। দুপুর ১২টার দিকে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একটি অংশ ‘ভোট মানি না’ স্লেøাগান দিয়ে ভোট কেন্দ্রের দিকে যাওয়ার সময় আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতি শুরু হয়। 
এর আগে গত বুধবারও হট্টগোল, হইচই ও ধাক্কাধাক্কির মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের (২০২৩-২৪) প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়। নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এই হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ কারণে প্রথম দিন নির্ধারিত সময় সকাল ১০টার ভোটগ্রহণ শুরু হয় প্রায় দুই ঘণ্টা পর। এদিকে প্রথম দিনের নির্বাচনের ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকনকে প্রধান আসামি করে শতাধিক আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। বুধবার সিনিয়র আইনজীবী ও সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার আদালত অঙ্গনে পুলিশের উপস্থিত ছিল লক্ষণীয়। 
ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশ ॥ সুপ্রিমকোর্টে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গত বুধবার সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকরা পুলিশের পিটুনির শিকার হন। বুধবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিমকোর্টে ‘ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে আসেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশিদ। এ সময় তিনি ‘ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ডিবি প্রধান বলেন, গতকালের ঘটনায় তারা দুঃখিত। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা পুরোপুরি অনিচ্ছাকৃত। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে- সেজন্য পুলিশ সচেষ্ট থাকবে বলে জানান হারুন অর রশিদ। তার বক্তব্যের পর টেলিফোনে ডিএমপি কমিশনার ‘ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশুতোষ সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। টেলিফোনে সভাপতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়টি দেখা হবে।
বুধবারের ঘটনায় সুপ্রিমকোর্টে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম নেতৃবৃন্দ ওইদিনই প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেন। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত। দায়িত্ব পালনের সময় সবার সতর্ক হওয়া উচিত। এ সময় তিনি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। দায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রাব্বানী বরাবর আবেদন পেশ করেছে ‘ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম।
প্রধান বিচারপতির কিছুই করার নেই ॥ অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির করণীয় কিছুই নেই। সমিতির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে নির্বাচনের বিষয়টির সমাধান করতে বলেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এটা আমাদের বিষয় না। এটা বারের (আইনজীবী সমিতির) বিষয়। এখানে প্রধান বিচারপতির করণীয় কিছু নেই। আপনারা বারের সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে বসে আলাপ করে সমস্যার সমাধান করেন। সবাই মিলে পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার চেষ্টা করেন।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে যা বললেন কাজল ॥ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আইনজীবী ও সাংবাদিকের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় বিস্তারিত অভিযোগ শুনেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকিরের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। 
বৃহস্পতিবার সকালে সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে বিএনপিপন্থী আইনজীবী মনোনীত সভাপতি প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বাইরে এসে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

×