ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দখল-দূষণে নাব্য হারিয়ে আত্রাই এখন মরা খাল

কৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা

প্রকাশিত: ০১:০৮, ১৪ মার্চ ২০২৩

দখল-দূষণে নাব্য হারিয়ে আত্রাই এখন মরা খাল

কাশিনাথপুরে আত্রাই নদী দখল করে এভাবে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন

দখল দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে ইছামতির শাখা আত্রাই। স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে নদী শিকস্তি ও নদী পয়স্তি জমির জাল কাগজমূলে আত্রাই ভরাট করে নির্মাণ করেছে অসংখ্য ভবনসহ আধাপাকা দোকান। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই নদীর তলদেশ ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করায় ঐতিহ্যবাহী  আত্রাই নদীর চিহ্ন অনেক জায়গায় মুছে গেছে। এককালের ¯্রােতস্বিনী  নাব্য হারিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।
সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নে ইছামতির ¯্রােত থেকে আত্রাই নদীর উৎপত্তি। নদীটি সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাসুমদিয়া ইউনিয়নে বাদাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে যমুনায় মিশেছে। তবে সাঁথিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই নদীর বেশিরভাগ অংশই দখল করে গড়ে  তোলা হয়েছে স্থাপনা। পাবনা-ঢাকা, কাজিরহাট-বগুড়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত অন্যতম ব্যবসাস্থল কাশিনাথপুরে প্রভাবশালীরা আত্রাই নদীর জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া তুলছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন।
 অনুসন্ধানে দেখা গেছে কাশিনাথপুর ট্রাফিক মোড় থেকে কাশিনাথপুর হাটের শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী দখল করে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলায় এখানে নদীর কোনো অস্তিত্ব আর নেই। কাশিনাথপুর হাটের একাংশে নদীর মাঝখানে নির্মিত ছোট ব্রিজের দুই দিকে নদীর এপার-ওপার পর্যন্ত পাকা সড়কের দু’পাশ ভরাট করে ৩৫-৪০টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে বোঝার উপায় নেই যে এক সময়ের স্ব্রোতস্বিনী ইছামতি। এখানে নদীর মধ্যে বহুতল ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মার্কেট, আবাসিক ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। এ ধারা এখনো চলছে। অন্যদিকে আত্রাই নদীর বদ্ধ জলাশয়টি হাটবাজার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কাশিনাথপুরের উজান থেকে নন্দনপুর পর্যন্ত সেচ ক্যানেল নির্মাণ করায় আত্রাই নদী ¯্রােত হারিয়ে মজা পুকুরে রূপ নেয়। অভিযোগ উঠেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিতভাবে সেচ ক্যানেল নির্মাণ করায় আত্রাই নদী নাব্য হারাতে থাকে। এলাকার বয়োবৃদ্ধ জালাল, সুজা মিয়া জানান  দেড় শতাধিক বছরের পুরনো এ আত্রাইতে ইলিশসহ প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ উঠত। সেসব এখন অতীত।

তারা অভিযোগে জানান, প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও আইন প্রয়োগ না করায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর বুকে নির্মাণ করেছে অসংখ্য বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। আবার  কোথাও কোথাও ফসলের আবাদ করা হচ্ছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন থাকলেও তার প্রয়োগ না থাকায় প্রভাবশালীরা তাই অবাধে নদী দখল করছে বলেও তারা জানান।
 নদীর জায়গায় স্থাপনাকারী মোহাব্বত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যে জায়গায় সে বাড়ি ও দোকান করেছেন সেটি ১৯৯০ সালে কেনা। জায়গাটি অনেক আগে হাটের জায়গা হিসেবে রেকর্ড হয়েছিল তবে আগের মালিক আদালতে মামলা করে ব্যক্তি মালিকানাধীনা জায়গা হিসেবে রায় পান। আর নদী দখলের অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ নদী তার স্থাপনা থেকে অন্তত ৩০ ফুট দূরে। সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জালালউদ্দিন মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নদীর ওপর যে সড়ক ও ব্রিজের কথা বলা হচ্ছে তা পুরোপুরি সরকারি। এসএ, ডিএসসহ সরকারি বিভিন্ন রেকর্ডে সড়ক হিসেবে এর উল্লেখ আছে আর সেখানে আমি পৈতৃক সম্পত্তিতে দোকানঘর নির্মাণ করেছি। 
নদীর এক ফুট জায়গাও দখল করিনি। তাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় করতে একটি মহল তার বিরুদ্ধে নদী দখলের মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন বলে তিনি দাবি করছেন। কাশিনাথপুর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, স্থাপনা নির্মাণের কারণে নদী ছোট হয়ে গেছে, এ কথা ঠিক।

তবে সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন অংশে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে। কি পরিমাণ জায়গা দখল হয়েছে সে তথ্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নেই বলে তিনি জানান। সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার  মনিরুজ্জামান জানান, যেভাবে নদীটি দখল করা হয়েছে তা দেখে মর্মাহত হয়েছি। নদীটি দখলমুক্ত করতে অতিদ্রুত প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশ^স্ত করেন।

×