ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সার্কিট রিভার ক্রসিং টাওয়ারের উদ্বোধন

দুর্গম পদ্মার চরে বিদ্যুতের সুবিধায় লক্ষাধিক মানুষ

আবুল বাশার, শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:১০, ৩ মার্চ ২০২৩

দুর্গম পদ্মার চরে বিদ্যুতের সুবিধায় লক্ষাধিক মানুষ

সার্কিট রিভার ক্রসিং টাওয়ারের উদ্বোধন করেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি।

শরীয়তপুরে নড়িয়া উপজেলার পদ্মার দুর্গম চর নওপাড়ায় পল্লী বিদ্যুতের ৩৩ কেভি ডাবল সার্কিট রিভার ক্রসিং টাওয়ারের উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার (৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১ টায় পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ টাওয়ারের শুভ উদ্বোধন করেন। 

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মোঃ পারভেজ হাসান, পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল হক, ঢাকা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ সরদার, শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ জুলফিকার রহমান, মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার শেখ মোহাম্মদ আলী। 

জানা গেছে, শরীয়তপুর, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জের দুর্গম পদ্মার চরে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় বিদ্যুতের সুবিধা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। ফলে নওপাড়া, চরআত্রা, কুন্ডেরচর, কাঁচিকাটা, এখলাছপুর, জহিরাবাদ ও রাজ রাজেশ^র এই ৭টি ইউনিয়নের ৫৭টি গ্রামের ১২ হাজার ৫শ’ ৫৩টি পরিবার বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। 

এর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এসব দুর্গম চরাঞ্চলে বিদ্যুতায়ন করার লক্ষ্যে ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। বর্তমানে চারদিকে নদী পরিবেষ্টিত এসব দুর্গম চরাঞ্চলে ২০ হাজার পরিবার বিদ্যুতায়নের আওতায় আসলে লক্ষাধিক লোক বিদ্যুতের সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে। 

জানা গেছে, দুর্গম চরাঞ্চলে সাবমেরিন কেবলের ও সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হবে শরীয়তপুরের চারটি ও চাঁদপুরের তিনটি ইউনিয়নের ২০ হাজার পরিবারকে। শরীয়তপুরের মধ্য দিয়ে পদ্মা ও মেঘনা নদী প্রবাহিত হয়েছে। নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা, নওপাড়া, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা, জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেররচর ও চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপীর, এলাপুর ও জহিরাবাদ ইউনিয়ন পদ্মা-মেঘনা নদীর দুর্গম চরে অবস্থিত। 

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর তীর থেকে চরগুলোর দূরত্ব ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার। ওই দূরত্ব দিয়ে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুৎ-সংযোগ দিতে পারছিল না। শরীয়তপুর-২ আসনের সাংসদ পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমের উদ্যোগে মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ওই চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু করে। 

মুন্সিগঞ্জ আর নড়িয়ার নওপাড়ার মধ্যে পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য ১ কিলোমিটার। ওই ১ কিলোমিটার অংশ সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে ৩৩ কেভি ডাবল সার্কিট রিভার ক্রসিং টাওয়ারের উদ্বোধন করা হয়েছে। এখন আর দুর্গম চরাঞ্চলে বিদ্যুতের কোন লোডশেডিং হবে না। 

৩৩ কেভি ডাবল সার্কিট রিভার ক্রসিং টাওয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখান ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের প্রতিশ্রুতি পুরণে শরীয়তপুরের দুর্গম চরাঞ্চল নওপাড়া, চরআত্রা, কুন্ডেরচর, কাচিকাটায় সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুতায়নের স্বপ্ন পূরণ করেছেন ২০২০ সালে। 

বর্তমানে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জন্য সাবমেরিন ক্যাবলের পাশাপাশি ৩৩ কেভি ডাবল সার্কিট রিভার ক্রসিং টাওয়ারের মাধ্যমে নতুনভাবে বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন করা হলো। সাবমেরিন ক্যাবলের পাশাপাশি টাওয়ার হওয়ায এখানে শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে। এতে করে দুর্গম চরাঞ্চলের গ্রামগুলোও শহরে রূপান্তরিত হচ্ছে। শহরের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রামেই তৈরী হচ্ছে। 

পদ্মা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চল নওপাড়া, চরআত্রা, কুন্ডেরচর, কাঁচিকাটা এ চারটি ইউনিয়নে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতায়নের জন্য নওপাড়া ও মুন্সীঞ্জের পদ্মা নদীর শাখা নদীর উপর দিয়ে ৩৩ কেভি ডাবল সার্কিট রিভার ক্রসিং ৮ টি  টাওয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের সুব্যবস্থা করা হল। 

মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার বিদ্যুতের কর্মকর্তাগণ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ৮টি রিভার ক্রসিং এ্যাংকর টাওয়ার, সাসপেনশন টাওয়ার ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ব্যায় হয়েছে ১২ কোটি টাকা।

এসআর

×