ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিধবা নেছা ভানের কপালে জোটেনি একটি সরকারি ঘর

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ১ মার্চ ২০২৩

বিধবা নেছা ভানের কপালে জোটেনি একটি সরকারি ঘর

নেছা ভানের জীর্ণ ঘর

ষাটোর্ধ ভূমিহীন বিধবা নেছাভান বিবি। অন্যের জমিতে ছোট্ট একটি জীর্ণ ঘরে তার বসবাস। সেই ঘরটিও বসবাসের অনুপোযোগী হলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করেন এখানেই। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের নগরপাড়া গ্রামে তার ঘরটি। এ অবস্থায় জোটেনি কোন সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। কয়েকজন সেচ্ছাসেবী ঘরটি মেরামত করতে গেলেও জমির মালিকের বাঁধার কারণে ভেস্তে যায় ঘরের সংস্কার।

দশ বছর আগে ভিতরবন্দ বাজারের পাশের গ্রাম নগরপাড়ার জৈনক ব্যক্তির বাড়ির পিছনে পরিত্যক্ত জায়গায় ১২ হাত লম্বা এবং ৮ হাত প্রস্থের দো- চালা বা বাংলা কুড়ে ঘরটি নির্মাণ করেন নেছাভানের স্বামী জোনাই ফকির। সেখানেই এক ছেলেসহ বসবাস করতে থাকেন তারা। কয়েক বছর আগে জোনাই ফকির মারা যান। এরপর ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হয় নেছাভানকে। এরই মধ্যে থাকার ঘরটি বয়সের ভারে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে। 

নষ্ট হয়ে যায় ঘরের বাঁশের খুঁটি, বেঁড়া, এবং চালের টিন। প্রচন্ড বাতাসে এক বছর আগে ঘরটি একদিকে হেলে পড়ে। ঘরটির জীর্ণ বেঁড়া ছেড়া কাপড় আর চট দিয়ে জোড়াতালি দেয়া। ঘরে নেই চৌকি কিংবা অন্য কোন আসবাবপত্র। শীতে তীব্র ঠান্ডা আর বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যায়। এর মধ্যেই চলে রান্নার কাজ।

নেছাভান বিবি বলেন, অনেক কষ্টে এই ঘরে বাস করেন তিনি। কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই। বৃষ্টি হলে ঘরের কাঁথা বালিশসহ সবকিছু ভিজে যায়। এমনকি রাতে বৃষ্টি হলে তাকেও ভিজতে হয়। ভারী বৃষ্টিপাত হলে সবকিছু রেখে বাজারের দোকানের বারান্দায় রাত পার করতে হয়। বেশ কয়েকবার সরকারী ঘরের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সুফল জোটেনি।

সম্প্রতি ঘরটির এমন দূর্বস্থা দেখে স্থানীয় কয়েকজন সেচ্ছাসেবী ঘরটি মেরামতের উদ্যোগ নেন। ঘর মেরামতের অর্থ যোগার করে তারা। তবে ঘরটি মেরামত করতে গেলে জমির মালিক নিষেধ করেন। কারণ জমির মালিক চাচ্ছেন না নেছাভান সেখানে থাকুক।

স্থানীয় সেচ্ছাসেবী আশরাফুল আলম বলেন, ঘরটি মেরামতের জন্য আমরা ৩০হাজার টাকা সংগ্রহ করি। ফেব্রয়ারীর প্রথম সপ্তাহে ঘরটি মেরামতের জন্য গেলে জমির মালিক নিষেধ করেন। পরে ঘরটি আর ঠিক করা হয়নি। তিনি আরোও জানান, ঘরটির যে পরিস্থিতি আছে  তাতে করে সামান্য ঝড়েই পড়ে যাবে। তখন নেছাভান বিবির থাকার কেন জায়গা থাকবে না। সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের তালিকাতেও নাম নেই তার।

নাগেশ্বরী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখারুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প- ২ এর আওতায় চতুর্থ পর্যায়ের কাজ চলমান রয়েছে। উপজেলায় মোট ১শত ১৮জন  সুবিধাভোগি এবার ঘর পাবেন। তার মধ্যে ভিতরবন্দ ইউনিয়নে রয়েছে দুইজন সুবিধাভোগী। এদের মাছে নেছাভান বিবির নাম নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জাহান বলেন, নেছাভান বিবির বিষয়টি খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তিনি প্রকৃত ভূমিহীন হলে আগামীতে তাকে জমি ও ঘর দেয়া হবে।
                                  

এমএস

×