ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ধূলি দূষণের প্রভাবে যাপিত জীবনে ব্যত্যয়

সমুদ্র হক

প্রকাশিত: ০১:৩০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ধূলি দূষণের প্রভাবে যাপিত জীবনে ব্যত্যয়

বগুড়া নগরীর সড়কে বাতাসে উড়ছে ধূলি

ধুলাবালির অস্বাভাবিক আস্তরণে বগুড়া নগরীতে ধূলি-দূষণ বাড়ছে। বাতাসে ধূলিকণার আধিক্য এত বেশি যে কোনটি কুয়াশা আর কোনটি বাতাসে ভেসে থাকা ধুলা তা ঠাহর করা যায় না। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আবহাওয়া হয়ে উঠছে রুক্ষ। প্রায় সারাক্ষণ উড়ছে ধূলিকণা। নগরীর বাসা-বাড়ির আসবাবপত্রে বৈদ্যুতিক সামগ্রীতে মেঝেতে দিনে ধুলার আস্তরণ জমছে। দিনে বহুবার এই ধুলা মুছতে হয়। এ্যালার্জির প্রভাব পড়ে শরীরের ওপর। বসন্ত বেলায় ধূলির তা-ব বেশি।

হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরাঞ্চলে মারকারি মাত্রা ওঠানামা করছে। তাপমাত্রা বেড়ে গরম অনুভূত হচ্ছে। বাতাসে বাড়ছে ধূলিকণা। তার পরও তাপমাত্রার হেরফেরে ধুলা উড়ছে। ধূলি-দূষণে বাতাস ভারি হয়ে প্রকৃতির স্বাভাবিক গতির হেরফের ঘটাচ্ছে।
বসন্ত বেলার ঘূর্ণিহাওয়া, ধুলা ও বায়ু দূষণের প্রভাবে সর্দি-কাশি, আমাশয় ও নানা ধরনের রোগব্যাধি আক্রমণ করছে। বাড়তি হয়ে এসেছে বিষণœতা ক্ষোভ উদ্বেগ। হঠাৎ মেজাজ বিগড়ে গিয়ে খিটমিটে হওয়া ইত্যাদি। মনের ভেতরে ভিন্ন ধরনের ব্যাধিব্যামোর সৃষ্টি হচ্ছে। কঠিন হয়ে পড়েছে কোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখা। প্রচ- অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে। রুক্ষ ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বসন্ত বেলায় মানব মনে এই প্রভাব নতুন মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি করছে। 
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এরভায়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভে বিশে^র শীর্ষের দূষিত বায়ুর দেশগুলোকে নিয়ে গবেষণা করে। বিশে^র বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘এয়ার ভিজিুয়াল’ বলেছে বাতাসে ক্ষুদ্র ও ভারি বস্তুকণার মাত্রা যথাক্রমে পিএম ২ দশমিক ৫ এবং পিএম ১০ এর পরিমাণ বেড়ে গেলে মানুষের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। ওই দুই ভারি বস্তুকণার সঙ্গে অন্যান্য ভারি ধাতু মানব শরীরে প্রবেশ করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ কমে আসে। ফলে মানুষের মস্তিষ্কের ¯œায়ুগুলো ঠিকমতো কাজ করে না।

যা মনে নানা ধরনের বিক্রিয়া ঘটিয়ে ক্ষোভ-বিষণœœতা মেজাজ স্বাভাবিক না রাখার (রুক্ষ খিটমিটে বিগড়ে যাওয়া ইত্যাদি) বহুমুখী পথ সৃষ্টি করে। নগরীর বাতাসের ধূলিকণা শরীরে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। বগুড়ায় অবস্থিত রাজশাহী বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর জানাচ্ছে বাতাসে অধিক ধূলিকণার কারণে বগুড়ায় বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি।      
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিংস কলেজ, ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের পাঁচ বিজ্ঞানীর গবেষণায় বায়ু দূষণের মাত্রার প্রভাব উঠে এসেছে। তারা ১৯৭৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বায়ু দূষণে বিশে^র শীর্ষ ১৬টি দেশের দূষণ বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর কারণে মানুষের মাস্ক ব্যবহার বেড়ে যায়। এর আগে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক ছিল না। বায়ু দূষণের সঙ্গে রোগ-বালাইয়ের সম্পর্ক আগে থেকেই আছে। বর্তমানে বায়ু দূষণজনিত নানা রোগের নতুন নতুন উপসর্গের সৃষ্টি হয়েছে। বায়ু দূষণে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে ধূলি-দূষণ।

ধূলির দূষণ উপমহাদেশে ভারত ও বাংলাদেশে বেশি। ভর বছর ফসলের মাঠে শস্য বৈচিত্র্যে নানা ধরনের ফসল উৎপাদনে ফসল মাড়াই-কাটাইয়ে ধুলাবালি উড়ছে বেশি, যা বাতাসের সঙ্গে মিশে নতুন দূষণ সৃষ্টি করছে। ধূলি-দূষণের মাত্রা সহজে নির্ণয় করা যায় না। শুধু বাতাস কতটা ভারি তা বলে দেওয়া যায়। এই ভারি বাতাস প্রকৃতি সামাল দিতে না পাড়ায় আবহাওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে।   
উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি ধুলা ও বায়ু দূষণ ভারতের দিল্লি মহানগরীতে। এর পরের অবস্থানেই আছে বাংলাদেশের ঢাকা মহানগরী। বগুড়াসহ দেশের বড় নগরগুলোতেও দূষণের মান ঢাকার মতোই। দিল্লিতে প্রতি কিউবিক মিটার বাতাসে ভারি বস্তুকণা পাওয়া গেছে ১১৪ মাইক্রোগ্রাম। ঢাকায় পাওয়া গেছে ১০০ মাইক্রোগ্রাম। বগুড়ায় পাওয়া গেছে ৯৮ মাইক্রোগ্রাম। এই অবস্থার মধ্যে মানুষের স্বাভাবিক যাপিত জীবনের ব্যত্যয় ঘটেছে। ধূলিকণা মানুষের মনের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, উপমহাদেশের উচ্চচাপ বলয় বাংলাদেশের ওপর সক্রিয়।

শুকনো মৌসুমে দেশজুড়ে নির্মাণ কাজ বেড়েছে। গ্রামে ভর বছর ফসলের মাড়াই-কাটাই চলছে। বেড়েছে ধুলার আধিক্য। এদিকে আরব সাগর হয়ে মরুভূমি পেরিয়ে আসা ধুলা বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয়বাষ্প মিশ্রিত ধুলা বাতাসে মিশেছে। ফলে বায়ুমান ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে ধূলি দূষণজনিত রোগ-ব্যাধি। এক ব্যাধি থেকে আরেক ব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন উপসর্গের সৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ বেড়ে গেছে। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অসুখ বেড়েছে। ভারি বাতাসের ধাক্কা টের পাওয়া যায়। ধূলির দূষণে বসন্তের ভারি বাতাস মানসিক ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছে।

×