ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইজতেমা মাঠ জোবায়ের গ্রুপকে দেয়ায় সাদ গ্রুপের প্রতিবাদ

নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী, গাজীপুর

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ইজতেমা মাঠ জোবায়ের গ্রুপকে দেয়ায় সাদ গ্রুপের প্রতিবাদ

সংবাদ সম্মেলন

আদি তাবলীগ জামাতের বর্তমান আমির মাওলানা সাদের অনুসারীরা তাদের প্রতি একটি মহলের বৈষম্যের অভিযোগ তুলে এক সংবাদ সম্মেলনে তাবলীগের সার্বিক কার্যক্রম ও বিশ্ব ইজতেমা শুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় প্রশাসনের সহযোগিতায় নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত একটি কমিটি গঠন করার দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। 

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠের জিম্মা এক তরফা সিদ্ধান্তে জোবায়ের পন্থীদের কাছে হস্তান্তরে তারা খুবই মনোক্ষুণ্ণ হয়েছেন। পরিস্থিতি সহনশীল এবং স্বাভাবিক রাখতে ইজতেমা মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেন সাদ গ্রুপের শীর্ষ মুরুব্বিরা।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে উত্তরার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা দাবি জানান সাদ পন্থীরা। 

সাদ ও জোবায়ের গ্রুপের দু'পক্ষই আগামী বিশ্ব ইজতেমার আগ পর্যন্ত ইজতেমা মাঠের জিম্মাদার থাকতে চাইলে দুপক্ষের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়। জটিলতা নিরসনে স্হানীয় এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর টঙ্গীর নোয়াগাঁও বাসভবনে দুপক্ষের এক বৈঠক হয়। বৈঠকের দুদিন পর বিশ্ব ইজতেমা মাঠ জোবায়ের গ্রুপের জিম্মায় হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসনের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম। 

এসব ঘটনাকে সাদ পন্থীরা বৈষম্যমূলক আচরণ অভিহিত করে নানা অভিযোগ তোলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে তাবলীগের সাদ পন্থী অনুসারী অ্যাডভোকেট আব্দুল কুদ্দুস বাদল লিখিত বক্তব্যে বলেন, আগামী ২০২৪ সালে বিশ্বে ইজতেমার প্রথম পর্ব সাদ পন্থীরা আয়োজন করবেন। বিশ্ব ইজতেমার মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বে রাখতে হবে। তাবলীগ জামাত একটি আধ্যাত্বিক ও ধর্মীয় সংগঠন। এখানে রাজনীতির কোন সুযোগ নেই। বর্তমান তাবলীগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টির একমাত্র কারণ তৃতীয় একটি পক্ষের রাজনৈতিক অবৈধ হস্তক্ষেপ। একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল সুকৌশলে তাবলীগ জামাতে ঢুকে বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা করছে। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সাদ মিডিয়া প্রধান মোহাম্মদ সায়েম, এডভোকেট ইউনুস মিয়া, মাওলানা সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, মোহাম্মদ সোহেল ও মোহাম্মদ আতাউল্লাহ ও মনির হোসেন প্রমুখ।

সাংবাদিক সম্মেলনে মাওলানা সাদ অনুসারীরা আরো বলেন, যেখানে সরকার বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন, সেখানে বিশ্ব ইজতেমার ময়দান নিয়ে তাবলীগ জামাতের সাদ পন্থীদের সাথে বরাবরের মতো বৈরী ও বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে তাবলীগের বিশ্ব মারকাজ দিল্লির নিজামুদ্দিনের অনুসারী মূলধারার তাবলীগের সাথীরা টঙ্গীর মাঠ সরল বিশ্বাসে প্রসাশনের কাছে হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু হেফাজত সমর্থিত মাওলানা জুবায়ের গ্রুপকে রহস্যজনক এক তরফা ২০২৩ সাল পর্যন্ত টঙ্গীর ময়দান মাদ্রাসা এলাকা, টিনশেড মসজিদ এবং গোডাউন এলাকা ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছে। 

এছাড়া বিশ্ব ইজতেমার মাঠে বিদ্যমান টিনশেডের পাশে আরেকটি সেড নির্মাণের কাজ শুরু করেছে কে বা কারা। তারা প্রশ্ন তোলেন, এসব কার অনুমতিক্রমে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তাবলিগের মূল ধারার সঙ্গীদের সঙ্গে কোন প্রকার পরামর্শ করা হয়নি বলে তারা  অভিযোগ তোলেন। 

টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে তাদের একচ্ছত্র অধিকার কে দিয়েছে? এই বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দিল্লির নিজামুদ্দিন বিশ্ব মারকাজ থেকে পরিচালিত তাবলীগ জামাতকেই  বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। 

সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ বছর ধরে মাওলানা জুবায়ের গ্রুপকে ৪ সপ্তাহের জন্য কাকরাইন ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। মূলধারার তাবলীগের সাথীদের মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য ব্যবহার করছেন। অথচ এহেন বিভাজনের কোন আইনগত এমনকি নৈতিক ভিত্তিও নেই কারোর। আমাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে এবং হেফাজতে ইসলাম সমর্থক এই বিচ্ছিন্ন তাবলীগ গ্রুপের মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে প্রশাসন এই একতরফা বিভাজন করে আসছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশাসনের কাছে সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলি হচ্ছে- 

১. আমাদের অনুরোধ বিশ্ব ইজতেমার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই মাঠের প্যান্ডেল নির্মাণ ও খোলার কাজ করবেন। প্রয়োজনে প্রসাশনের তদারকিতে উভয় পক্ষ  বিশ্ব ইজতেমার ময়দান ব্যাবহার করবেন। 

২.কাকরাইল ও বিশ্ব ইজতেমার মাঠ থেকে দুই মাদ্রাসাকে  অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা, শুধুমাত্র তাবলীগের কাজের জন্য এই মাঠ ও কাকরাইল মসজিদ।

৩. প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ তাবলীগের সার্বিক কার্যক্রম ও বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় প্রসাশনের সহযোগিতার জন্য নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত একটি কমিটি গঠন করা।

৪.কাকরাইল মসজিদ পূর্বের মতো দিল্লীর নিজামুদ্দিন মারকাজের অধিনে পরিচালনার যাবতীয় ব্যাবস্থা করা।

৫. দেশের সকল মসজিদে  তাবলীগের সমস্ত কার্যক্রমের জন্য অনুমতি দেওয়া।  ধর্মীয় কাজে বাঁধা দিলে ও অপপ্রচার চালালে সংবিধান মোতাবেক আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা।  সারা দেশে স্বাধীনভাবে ধর্মীয় দাওয়াতি কাজ করার পরিবেশ তৈরি করে দেয়া।

৬. টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় সকল মুরুব্বীদের আসার বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করা।

৭. বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রতি অক্ষুণ্ণ রাখতে ও দেশের শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে, তাবলীগের যাবতীয় কাজ পরিচালনায় হেফাজতসহ তৃতীয় পক্ষের রাজনৈতিক  অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ করা, যাতে করে ইসলামের নামে কোন পক্ষ সাধারণ ধর্মপ্রান মুসলমানকে তাবলীগের নামে কেউ ভুল বুঝিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা এবং হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করতে না

 

এসআর

×