ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২২ মার্চ ২০২৩, ৮ চৈত্র ১৪২৯

monarchmart
monarchmart

বিক্রি হয় চার জেলার দই

সিরাজগঞ্জে দু’শ’ বছরের দই মেলা

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

সিরাজগঞ্জে দু’শ’ বছরের দই মেলা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে দই মেলা

মাঘের শীত অনেকটা কমেছে। ফাল্গুনি হাওয়ার আভাস মিলেছে। অনেকটা শুষ্ক আবহাওয়ায় সিরাজগঞ্জে দই মেলা মঙ্গলবার জমে উঠেছিল। মেলায় বিভিন্ন স্বাদের দই কেনার পাশাপাশি মুড়ি-মুড়কি, চিড়া, বাতাসা, কদমাসহ রসনাবিলাসী নানা ধরনের খাবারও বিক্রি হয়েছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে দই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজাও অনুষ্ঠিত হয়।
মেলায় বিভিন্ন ধর্ম বর্ণের ও পেশার নানা বয়সী মানুষ আনন্দে মেতে উঠে, অভিভাবকের সঙ্গে শিশুরা, কিশোর কিশোরীরা এসব খাবার কিনতে মেলায় আসে। দই মেলায় আসা এ অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। ক্ষীরখাসা দই, শাহী দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী দই, রাজাপুরের দই, এনায়েতপুরের দই ইত্যাদি বাহারি নামের দই, দামেও রয়েছে ভিন্নতা। বিশেষ করে বগুড়ার শেরপুর, সিরাজগঞ্জের রাজাপুর, এনায়েতপুর, গুরুদাসপুরের শ্রীপুর, উল্লাপাড়ার ধরইল, চাটমোহরের হান্ডিয়াল ও তাড়াশের দই প্রচুুর পরিমাণে বিক্রি হয়। দই মেলা বসেছিল সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়কের হৈমবালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও জ্ঞানদায়িনী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে। এখানে দই আসে, সিরাজগঞ্জের রাজাপুর, এনায়েতপুর অঞ্চল থেকে।
তাড়াশের দই মেলা বসে ঈদগা মাঠে। তাড়াশের দই মেলার ইতিহাস প্রায় আড়াইশ’ বছরের। দিনব্যাপী এ মেলা ঘিরে উপজেলা সদরের তাড়াশ ঈদগা মাঠে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। প্রায় আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলায় লোকজনের পদচারণে পুরো এলাকামুখর হয়ে ওঠে।
তাড়াশ সদরের গোপীনাথ সরকার তার স্ত্রী আর ছোট মেয়েকে নিয়ে এসেছেন মেলায়। কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সরস্বতী পূজা ঘিরে এ মেলার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে দাদা ও বাবার সঙ্গে মেলায় এসেছি। এখন আমার সঙ্গে স্ত্রী ও মেয়ে এসেছে।’ ঐতিহ্যের এ ধারা বেঁচে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ষাটোর্ধ্ব কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উপলক্ষে এ মেলা হলেও দই কিনতে আসেন সবাই। প্রতিবারের মতো এবারও পরিবারের জন্য দই কিনতে এসেছেন তিনি। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শামীম হোসেন। তিনিও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন দই মেলায়। ছেলের পছন্দের দই কিনবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঐতিহ্যের এ মেলায় সুযোগ পেলেই আসি।’
চলনবিল অঞ্চলের তাড়াশের দই মেলা নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জমিদারি আমলে তাড়াশের সেই সময়ের জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে, জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টি পছন্দ করতেন। তাই জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। সে থেকেই জমিদার বাড়ির সামনে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দই মেলার প্রচলন হয়। এখন এ মেলা বসে ঈদগা মাঠে।

 

 

monarchmart
monarchmart