ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কঠিন শিলা ও কয়লা পরিবহন উদ্যোগ ভেস্তে গেছে

৩৯ কিলোমিটার রেলপথ এখন পরিত্যক্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা, পার্বতীপুর

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

৩৯ কিলোমিটার রেলপথ এখন পরিত্যক্ত

রেলপথ এখন পরিত্যক্ত

রেলপথে কঠিন শিলা (গ্রানাইট পাথর) ও কয়লা পরিবহন ছাড়াও রাজস্ব আয়ের বিষয়টি মাথায় নিয়ে ভবানীপুর থেকে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি ও ভবানীপুর থেকে পার্বতীপুর জংশন পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার রেলপথ বসায় রেল কর্তৃপক্ষ। ১৯৯০ সালের দিকে নির্মিত এই রেলপথ এখন সম্পূর্ণ অকেজো ও  পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।   
বৃহস্পতিবার সকালে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে গিয়ে জানা যায়, রেললাইন স্থাপনের কাজ সমাপ্ত করে ২০০৫ সালে রেল কর্তৃপক্ষ তা খনি কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করে। তখন থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত রেলপথে কঠিন শিলা পরিবহন হয়েছে। এর পরে পাথর পরিমাপ স্কেল নষ্ট হলে বন্ধ হয়ে যায় পাথর পরিবহন। সেই সঙ্গে ভেস্তে গেছে রেলপথে কঠিন শিলা ও কয়লা পরিবহনের উদ্যোগ। এদিকে পাথর পরিমাপ স্কেলটি কেন যথাসময়ে মেরামত করা হলো না? কোন মহলের নিরুৎসাহে রেলপথে পাথর পরিবহন বন্ধ হলো? যার ফলে রেল ও খনি কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত, তার সদুত্তর কোনো পক্ষের কাছ থেকে মিলেনি। 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘ এই রেলপথ অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকায় রেললাইনের ফিস প্লেটসহ অনান্য উপকরণ চুরি ও লুটপাট হয়ে গেছে। অবকাঠামো ও রেললাইন সংলগ্ন জমি স্থানীয় ভূমিদস্যুরা কব্জায় নিয়েছে। পরিত্যক্ত থাকায় এই রেলভূমির ওপর উদ্বাস্তুদের বাড়িঘর নির্মিত হয়েছে। উজাড় হয়েছে রেলভূমির গাছপালা। অবস্থা যা হয়েছে, তাতে আর কিছুদিন গেলে এ রেলপথের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না । 
খনির ও রেলওয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, খনির সীমানায় রেলপথের দায়িত্ব খনির ও তার বাইরের অংশের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষের। তবে কার অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় কোটি টাকার সম্পদ চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে, তার দা কে নেবে?   
এ ব্যাপারে রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত পার্বতীপুরের পি ডাবলু আই আল আমিন জানান, এই রেলপথ অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকায় প্রতিনিয়তিই চুরির ঘটনা ঘটছে। তার দপ্তরের যে ক’জন লোক রয়েছে, তা দিয়ে তো এই দীর্ঘ রেলপথ পাহারা দিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনবলের চাহিদা দিয়ে দেড় বছর ধরে চিঠিপত্র দিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি । 
এ ব্যাপারে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ ডি এম ফরিদুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে প্রতিবারই ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেছেন।  
পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রানাইট পাথর ও কয়লা পরিবহন চালু থাকলে রেলপথের এই অবস্থা হতো না। এর নানাবিধ কারণ রয়েছে। বিভিন্ন কারণে মধ্যপাড়ার গ্রানাইট পাথরের চেয়ে ভারতীয় পাথরের প্রতি ঠিকাদারদের আগ্রহ বেশি। সে কারণে এই পাথর ক্রয়ের ব্যাপারে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। জনবল সংকট অচিরেই কেটে উঠতে আমারা সক্ষম হব।

ইতোমধ্যে ১৮৭ স্টেশন মাস্টার, ৩১৮ পয়েন্টস ম্যান ও ৫শ’ খালাসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওয়েম্যান নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এসব নেওয়া হলে মধ্যপাড়ার রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা কেটে যাবে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানাচ্ছে যে, নতুন করে এই পরিত্যক্ত রেলপথটি সংস্কার করতে আবারও বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হবে।

×