ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জ -২ আসন0

রাজনীতিতে বিভক্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

নিজস্ব সংবাদদাতা, শাল্লা (সুনামগঞ্জ)

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩

রাজনীতিতে বিভক্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

দিরাই শাল্লার রাজনীতি নিয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে নানা কৌতুহল

দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দিরাই শাল্লার রাজনীতির মাঠে দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই দুটি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। তবে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উভয়দলের রাজনীতিতে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দিরাই শাল্লার রাজনীতি নিয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে নানা কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। 

সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সরকার ক্ষমতায় তারপরও দিরাই শাল্লায় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। ফলে কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকার চেষ্টা করলেও দলের নেতাদের অনুগামী হয়ে পড়ায় তারাও এখন বিভক্ত হয়ে পড়ছেন।

দলীয় কর্মসূচি পালন থেকে কমিটি গঠনেরও চলছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই আসনে সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় দিরাই শাল্লায় আওয়ামী লীগে একসময় ঐক্যের রাজনীতি ছিল। পরে উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে তার সহধর্মীনি ড. জয়াসেন গুপ্তা দিরাই শাল্লা আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে ঐক্যের রাজনীতিতে ফাটল ধরে। দলটির একাংশ অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আবার দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক পৌরসভার মেয়র মোশারফ মিয়ার নেতৃত্বে দলের বড় একটি অংশ গত উপজেলা নির্বাচনে প্রকাশ্যেই নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করেছে।

২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত একটানা তিনটিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বিএনপির নাছির উদ্দিন চৌধুরী। সুরঞ্জিতের মৃত্যুর পর এখানে নৌকার হাল ধরেছেন তার স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তা। আগামী নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড. অবনী মোহন দাস, শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল মন্নান চৌধুরীর ছেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল-আমিন), সাবেক যুবলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির আইন বিষযক সম্পাদক ব্যারিস্টার অনুকূল তালুকদার ডাল্টন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামছুল ইসলাম, যুক্ত্যরাজ্য প্রবাসী সামছুল হকও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

এদিকে, আবার প্রায় এক যুগেরও বেশী সময় ধরে ক্ষমতায় বাইরে থাকা বিএনপি নেতাদের মধ্যেও বিভক্তির সুর উঠেছে। সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন বলয় ও বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেলের বলয়ে রাজনীতি করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবে নির্বাচনী মাঠে তাহির রায়হান চৌধুরী ও তার অনুসারীরা সরব রয়েছে। এই দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মীরা পাবেল অনুসারী বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা। তবে নির্বাচনী মাঠে কাজ করলেও আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির এই দুই নেতা।    

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, দিরাই শাল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সেন পরিবারই নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য জয়াসেনকে ঘিরেই চলছে দিরাই শাল্লা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। পাশাপাশি উনার বলয়ের নেতাকর্মীরা দখল করে আছে সংগঠনের গুরুতপূর্ণ পদ-পদবী। তাই তৃণমুল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে।

তবে তৃণমুল নেতাকর্মীদের অভিযোগ দিরাই শাল্লা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে পারিবারিক বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে পারলে পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো কোন্দল থাকবে না। দলীয় কোন্দল ও বিভেদের কারনেই দিরাই শাল্লার দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে চলছে নানা জটিলতা। দলীয় কোন্দল থাকায় দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। তবে সামনে শাল্লা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এই সম্মেলনকে ঘিরেও চলছে নানা জটিলতা। ফলে দিরাই শাল্লা আওয়ামী লীগের আবারও নতুন কোন্দল সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

অপরদিকে বিএনপি সূত্রে জানা যায়, নেতাকর্মীদের মাঝে অব্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দুভাগে বিভক্ত হলে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে নয় তারা। দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে সরব থাকলেও দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বিএনপির এই দুই নেতা।

দিরাই শাল্লা আসনের এমপি ড. জয়াসেন গুপ্তা দলীয় কোন্দলের কথা স্বীকার করে জনকণ্ঠকে জানান, অসুস্থতা থাকায় অনেকদিন এলাকায় ছিলেন না। এ জন্যই দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে কিছু বিভাজনের সৃষ্টি হয়। তবে এগুলো অচিরেই নিরসন হয়ে যাবে।

শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, দিরাই শাল্লা মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আশা করি প্রধানমন্ত্রী যোগ্য ব্যক্তি দেখেই মনোনয়ন দেবেন। আর মনোনয়ন পেলে দিরাই শাল্লা আসনে নির্বাচন করবেন বলে তিনি জানান।

ব্যারিস্টার অনুকুল তালুকদার জানান, দলের দু:সময়ে পাশে থেকে রাজনীতি করেছি। সেই সুবাদে আরো দুবার আমি মনোনয়ন চেয়েছি। আশা করি এবারের নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষিত এবং যোগ্য ব্যক্তি দেখেই মনোনয়ন দিবেন। 

তিনি আরো জানান, দিরাই শাল্লা জনগণের পাশে থেকে সবসময় কাজ করে আসছি। বন্যা দুর্গত সময়ে এই দুই উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের খোঁজ খবর নিয়েছি। আর দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখে দলীয় মনোনয়ন পেলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো।

জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এড. তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল জনকণ্ঠকে জানান, জন্মলগ্ন থেকেই তাদের পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই আগামী নির্বাচনে দল অংশগ্রহণ করলে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে বিশ্বাসী। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে তিনি নির্বাচন করবেন না বলে এ প্রতিবেদককে জানান। 

বিএনপি দুভাগে বিভক্তির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, দলের বাহিরে কেউই নয়। তবে উনার বলয়ের কর্মী ও নাসির উদ্দিন চৌধুরীর বলয়ের কর্মীরা স্বীকার করেছেন দিরাই শাল্লায় বিএনপি দুভাগে বিভক্ত।

 

এমএইচ

×