ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

সুলতানমেলা আনন্দমেলা

প্রকাশিত: ০১:০৫, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩

সুলতানমেলা  আনন্দমেলা

‘মহিনের ঘোড়াগুলি গানে মেলা’ নিয়ে গান আছে।

‘মহিনের ঘোড়াগুলি গানে মেলা’ নিয়ে গান আছে। ‘পেরিয়ে মাঠের সীমানা ওই মেলা বসেছে/ চর্কি ঘোরে, পাঁপড় ভাজায়/ মাতালিয়া ঢোলকে মনকে মাতায়/ তোরা কে কে যাবি রে, কে কে যাবি রে/ কে কে যাবি রে তোরা আয়/ পয়সা যদি নেই পকেটে ভাবনা কী আছে?’ এ সব গান আর বাস্তবতা নিয়েই জমে উঠেছে সুলতান মেলা। প্রতিদিন শেষ পৌষের এই নরম রোদের বিকেলে নড়াইল শহরের বিভিন্ন সড়কে মানুষের স্রোতের গন্তব্য ভিক্টোরিয়া কলেজ মাঠের দিকে। এই মাঠেই চলছে ‘সুলতানমেলা’।

এখানকার ‘সুলতান মঞ্চে’ প্রতিদিন চলছে আলোচনা সভা ও সংাস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলা উৎসবে রূপ নিয়েছে। এই উৎসবে ছোট-বড় সব বয়সের লোকজন অংশ নেওয়ায় উৎসব আরও জমেছে।
মা-মাটি ও মানুষের শিল্পী এসএম সুলতান স্মরণে নড়াইলে ১৪ দিনব্যাপী ‘সুলতানমেলা’ শুরু হয়েছে ৭ জানুয়ারি। মেলায় বিভিন্ন পণ্যের ৯২টি স্টল বসেছে। চিত্রপ্রদর্শনীতে শিশুশিল্পীসহ দেশী-বিদেশী দেড় শতাধিক চিত্রশিল্পী অংশগ্রহণ করছেন। এ মেলা ২০ জানুয়ারি শেষ হবে। জেলা প্রশাসন ও সুলতান ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই মেলার আয়োজন করেছে।
মেলায় শিশুদের জন্য দোলনা, খেলনা ট্রেন-নৌকা, কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, কাপড়, চুড়ি-ফিতা, বিভিন্ন প্রকার পিঠা-পুলিসহ দেশীয় খাবারের পসরা সাজিয়ে শতাধিক স্টল মেলাপ্রাঙ্গণে বসেছে। এবার স্থানীয় ৫০টি সাংস্কৃতিক সংগঠন নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও নাটকের পাশাপাশি কুষ্টিয়ার লালন একাডেমিসহ ঢাকা ও খুলনার শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করছেন। এ সব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উৎস আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই মেলার উদ্দেশ্য মানুষের মাঝে সুলতানকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। পাশাপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে তুলে ধরা। মেলায় ৯ জানুয়ারি লাঠি খেলার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রচুর দর্শক হয়েছিল খেলা দেখতে। একটু পেছনে ফেরা যাক। লাঠিখেলা, লাঠি দিয়ে আত্মরক্ষা শেখায়। ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার জমিদাররা (পূর্ব বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গ) নিরাপত্তার জন্য লাঠিয়ালদের নিযুক্ত করত।

চরাঞ্চলে জমি দখলের জন্য মানুষ এখনো লাঠি দিয়ে মারামারি করে। মহরম ও পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানে এই খেলাটি পরাক্রম ও সাহস প্রদর্শনের জন্য খেলা হয়ে থাকে। এই খেলার জন্য ব্যবহৃত লাঠি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা এবং প্রায়ই তৈলাক্ত হয়। অত্যাশ্চর্য কৌশলের সঙ্গে প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করেন। শুধুমাত্র বলিষ্ঠ যুবকরাই এক সময় এই খেলায় অংশ নিতে পারতেন।

কিন্তু বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের পুরুষরাই লাঠিখেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। নড়াইলের সুলতান মেলায় তাই দেখা গেল যুবকদের সঙ্গে বৃদ্ধরাও অংশ নিয়েছেন। মানুষের প্রয়োজন থেকে উদ্ভব হয় এ খেলাটি। এক সময় ছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। মনের খোরাক মেটাতে এখনো এই খেলার কদর কমেনি সাধারণ মানুষের কাছে। বাদ্যের তালেতালে চারপাশে যেন উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয় গ্রাম-বাংলার লোক ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। আত্মরক্ষা ও শারীরিক ভারসাম্য রক্ষায় লাঠি খেলার গুরুত্ব দেখানো হয় এই প্রদর্শনে। অন্যান্য খেলার মতোই লাঠিখেলাতে রয়েছে আনন্দ।

একত্রে সামনের বিপদকে মোকাবিলা করার দীক্ষাও রয়েছে এই খেলায়। সুলতানমেলায় লাঠিখেলা প্রদর্শন করে নড়াইলের বাঁশগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ লাঠিখেলা দলের ৩২ জন খেলোয়াড়। লাঠি খেলার আনন্দ আর অতীত ঐতিহ্য মনোমুগ্ধকর পরিস্থিতি উৎসবকে আরও সজীব করে তুলেছে।
একই দিন তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে ওঠা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন অনিক পা-ে। তিনি বলেন, ‘একবার না পারিলে দেখো শতবার। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ওই কবিতার লাইন বারবার মনে আসছিল। কারণ  তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে ওঠা সহজ কাজ হয়।
‘ওপরে উঠতে গিয়ে বারবার পিছলে পড়েছি। তাপরও শত চেষ্টায় সফল হয়েছি। চেষ্টা করলে যে সফল হওয়া যায়, এই প্রতিযোগিতাটি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। জীবনের প্রতিটিক্ষেত্রেই আমাদের প্রতিযোগিতা করেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়।’ প্রতিযোগিতা শুরুর আগে বিশাল আকৃতির তিনটি কলাগাছে ভালোভাবে সরিষার তেল মাখা হয়। এরপর শুরু হয় প্রতিযোগিতা। এতে ৩০ জন প্রতিযোগী অংশ নেন। বিকেল শুরু হওয়ামাত্র এ প্রতিযোগিতা দেখতে এলাকার সকল বয়সের শত শত নারী-পুরুষ জড়ো হয়। প্রতিযোগীদের কলাগাছ বেয়ে ওপরে উঠতে অনেকবার ব্যর্থ হতে হয়েছে। উপস্থিত দর্শকরা করতালি দিয়ে তাদের উৎসাহ দিয়েছেন। এ সময় প্রতিযোগিতাস্থল মুখরিত হয়ে ওঠে।
মেলা উপলক্ষে ষাঁড়ের লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। নড়াইল জেলার প্রত্যন্ত পল্লি অঞ্চলে একটি উপভোগ্য ক্রীড়া হলো ষাঁড়ের লড়াই। এবার সুলতানমেলায় লাল, কালো ধারালো শিংওয়ালা, মালা পরিহিত চুট ওয়ালা ষাঁড়গুলো লড়াইয়ের জন্য যখন প্রস্তুত  হয়, তখন অপেক্ষমাণ হাজার হাজার দর্শক করতালি ও উল্লাসধ্বনি দেয়। প্রতিটি  ষাঁড়ের  সঙ্গে দুইজন ওস্তাদ থেকে দুটি  ষাঁড়কে লড়াইয়ের  মুখোমুখী করিয়ে দেন। বিভিন্ন মন্ত্র ও যাদুটোনা করা হয় বলে লোকমুখে প্রচলিত আছে। বাঁশগ্রামের  ষাঁড়ের  লড়াই এই অঞ্চলে অত্যন্ত বিখ্যাত। সেই বাঁশগ্রামের কয়েক ব্যক্তি ষাঁড় এনেছিলেন লড়াইয়ের জন্য। লড়াই শেষে বিজয়ী ষাঁড়ের মালিকদের পুরস্কৃত করা হয়।
মেলা মানেই হচ্ছে ‘মিলন’। মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন, ভাবের ও সংস্কৃতির মিলন ও আদান-প্রদান। মেলাতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই স্বাগত। এক সময় সব থেকে বেশি গ্রামীণমেলা অনুষ্ঠিত হতো পৌষ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে। কোথাও একদিনের হয়, কোথাও চারদিনের, কোথাও বা আরও বেশি দিনের। এই সমস্ত মেলা ঘিরে গ্রামের মানুষের উদ্দীপনার শেষ ছিল না। তেমনি সুলতানমেলা ছোটদের কাছে এক অনাবিল আনন্দের উৎস, আর বড়দের কাছে প্রয়োজনের পরিপূরক।

এক সময় গ্রামীণমেলা উপলক্ষে ছোটরা একটা মেলা শেষ হলেই আর একটা মেলার জন্য পয়সা জমাতে শুরু করত। কত কী কেনার পরিকল্পনা চলত। সুলতানমেলায় দেখা নড়াইলের কুড়িগ্রামের সামাদ বিশ^াস এসেছেন তার ছোট পুত্র অন্তর বিশ^াসকে (৭) সঙ্গে নিয়ে। অন্তরের ইচ্ছা, টোটার রিল লাগানো বন্দুক কিনবে। ওই গ্রামের রিপন হোসেন এনেছেন কন্যা মায়াকে সঙ্গে নিয়ে। নড়াইলের ওপর দিয়ে রেলপথ হচ্ছে পদ্মা সেতুর সঙ্গে তার সংযোগ হবে। পিতার সঙ্গে বাইকে একদিন রেলপথের কাজ দেখতে গিয়েছিল। মেলায় এসে তার বায়না রেলগাড়ি কিনবে, জানাল রিপন হোসেন।

মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা গেল, কেউ কিনছে দম দেওয়া মোটরগাড়ি, কেউ আবার একটা তালপাতার বাঁশি কিনতে পারলেই যেন খুশি। তা ছাড়া পাঁপড়ভাজা, কাঠিগজা, জিলাপি, কদমা কিনছে। নাগরদোলার পাশে ঘুরঘুর করছে ছোট্ট শিশু অনিক। এসেছে মায়ের সঙ্গে তুলারামপুর থেকে। তার কিছু চাই না, শুধু নাগরদোলায় ওঠা ইচ্ছা তার। ছোট্ট মেয়ে শিশুদের অন্য জিনিসে মন, তাদের চাই প্লাস্টিকের পুতুল, কারও মাটির পুতুল হলেও চলবে। আর চাই চুলের রঙিন ফিতা, রংবাহারি চুড়ি, আলতা, কুমকুম, চুলের প্রজাপতি ক্লিপ আরও কত কী! এ সব জিনিস সুলতানমেলায় পাওয়া যাচ্ছে। 
সুলতান মেলায় কী নেই? কৃষিকাজ ও ঘর-গেরস্থালির জন্য নানারকম জিনিসপত্র এসেছে মেলায়। কুমোররা মাটির হাঁড়ি, কলসি, কুঁজো, ঘট, সরা, মালসার সঙ্গে মাটির পুতুল, হাতি-ঘোড়া ইত্যাদির পসরা সাজিয়ে বসেছে। কামাররা নিয়ে এসেছে দা, কাটারি, হাঁসুয়া, ছেনি, বাটালি, কাস্তে, কুড়াল, বঁটি, চাটু, খুন্তি, হাতা ইত্যাদি। রয়েছে ঝুড়ি, কুলা, চালুনি, ধুচুনি, আরও অনেককিছু। যারা এ সব মেলায় এনেছেন, তারা মেলার জন্যই এ সব জিনিস বানান। গোপালগঞ্জের বেতগ্রাম থেকে এসেছেন অধির মল্লিক। বললেন, সারাবছর বিক্রি করি বাড়ির পাশের বাজারে। যখন আশপাশে কোনো মেলা হয়, তখন সেখানে নিয়ে আসি। যে কয়দিন মেলা চলবে, সে কয়দিন এখানে থাকব। জিনিসপত্র বিক্রি করে একেবারে মেলা শেষ হলে বাড়ি যাব। 
মেলার একপাশে বিক্রি হচ্ছে খাবারের জিনিস। শালগ্রামের লোকমান হোসেন এনেছেন শীতের শাঁকআলু। ভালো বিক্রি হচ্ছে। ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করছে। বেশ মিষ্টি। মুড়কি, গুড় ও চিনির সুটি বা কাঠিগজা, তিলের খাজা, গুড়ের লবাত (বাতাসা), গজা জিলিপি, সন্দেশ ইত্যাদি অনেক পরিমাণে উঠেছে মেলায়। মেলায় এসেছেন হিজলডাঙ্গার মতলেব আলী (৭৫)। অতীত স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় বেতেঙ্গায় চড়ক মেলা হতো। গরুর গাড়িতে করে মানুষজন মেলা দেখতে আসত। মেলার কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত গরুর গাড়ির ছই বানানো। গরুকে ভালো করে স্নান করিয়ে তাদের শিংয়ে তেল মাখিয়ে দেওয়া হতো। মেলার আগের রাতে উত্তেজনায় বাচ্চারা ঘুমাত না। তাদের সঙ্গে বড়রা যেতেন। তারা ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস তো কিনতই, সেই সঙ্গে শাঁকআলুও কিনত। 
নড়াইল অঞ্চলের হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলেই বেতেঙ্গার মেলা থেকে এই সমস্ত ম-া-মিঠাই শুধু যে নিজেরা খাবার জন্য কিনতেন তা নয়, আত্মীয়-স্বজনদের ঘরে, মেয়ের শ্বশুরঘরে পাঠানো হতো। এটা এ অঞ্চলের রীতি ছিল বলা যায়। জামাইকে মেলা দেখার জন্য শ্বশুরমশাই টাকা দিতেন। এখনো হয়তো দেন। তবে জেলায় এখন সুলতানমেলা চালু হওয়ায় অতীতের কথা মনে পড়ছে। মেলায় সেই আমেজ নেই। হয়তো ছোট ছিলাম, তাই সেই মেলায় অনেক মজা করতাম বা করেছি, তাই মনে আছে।
শিশু, বৃক্ষ, মানুষ, প্রকৃতি- সবকিছুর প্রতিই তার অফুরন্ত ভালোবাসা। শুধু রং-তুলির স্পর্শে এর মধ্যে তিনি সৌন্দর্য অন্বেষণ করেননি, বাস্তবেও প্রমাণ দিয়েছেন ভালোবাসার। তাই ঢাকার ফুটপাত থেকে দুর্লভ নাগালঙ্গম বৃক্ষ নিধন হতে দেখে তার চোখ প্লাবিত হয়েছিল। বলতেন, এটা তো একটি বৃক্ষের নিঃশেষ নয়, গোটা জীবনের পরিসমাপ্তি। সারাজীবনের সমস্ত সঞ্চয় তিনি ব্যয় করেছেন শিশুদের কল্যাণে নির্দ্বিধায়। সেই মহান মানুষটি হলেন শিল্পী এসএম সুলতান। নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন ও সুলতান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ১৪ দিনব্যাপী এ মেলায় আলোচনা সভা, বিভিন্ন গ্রামীণ খেলা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য একজন চিত্রশিল্পীকে ‘সুলতান পদক’ প্রদান করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন পণ্যের শতাধিক স্টল বসেছে এ মেলায়। আগামী ২০ জানুয়ারি শেষ হবে এই প্রাণের উৎসব। গুণী এই শিল্পী ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মেছের আলী। মা মাজু বিবি। চেহারার সঙ্গে মিলিয়ে পিতা-মাতা আদর করে নাম রেখেছিলেন লাল মিয়া। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর খ্যতিমান এই শিল্পীর মৃত্যুর পর তার বাসভবন, শিশুস্বর্গ ও সমাধিস্থল ঘিরে ‘এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা’ নির্মাণ করা হয়। ২০০৯ সালে স্থাপন করা হয় এসএম সুলতান আর্ট কলেজ, যা বর্তমানে এসএম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয় নামে প্রতিষ্ঠিত। এ ছাড়া সংগ্রহশালার পাশে ‘শিশুস্বর্গ-১’ এবং সুলতান আর্ট কলেজের পাশে ‘শিশুস্বর্গ-২’ ও লাল বাউল সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নড়াইলের সদস্য সচিব শরফুল আলম লিটু জনকণ্ঠকে জানান, ১৯৯৪ সালে সুলতানের বাড়িতে ছোট পরিসরে সুলতান মেলার সূচনা হয়। চিরকুমার শিল্পী ছবি এঁকেছেন দু’হাতে। ব্যবহার করেছেন দেশজ লতাপাতা শিকড়ের নির্যাস থেকে সংগৃহীত রং। মোট ছবির সংখ্যা তিনি নিজেও জানতেন না। তবে লক্ষাধিক হবে, যা তিনি কখনো সংরক্ষণের তাগিদ অনুভব করেননি। যাকে খুশি তাকে দিয়েছেন অকাতরে। তার অনন্য সৃষ্টির মধ্যে আছেÑ ‘চরদখল’ ‘প্রথম বৃক্ষরোপণ’ ‘মাড়াই’, ‘গ্রামের দুপুর’, ‘দেশপ্রেম’। আটপায়ে একজন, মাছ ধরা, বনভূমি ও স্বাধীনতা, বিপ্লব প্রভৃতি। উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বহু ছবি নষ্ট হয়ে গেছে। তার ছবিতে গাঁয়ের কৃষকও পেশীবহুল। আদিম সাম্যবাদী সমাজে একজন কৃষক যেমন পুষ্টিহীনতার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না, পেশিবহুল ছবির শিল্পী হিসেবেই খ্যাতি যার। বাংলা ভাষার অন্যতম শক্তিমান কবি আল মাহমুদের এই উক্তিতে তা সহজেই অনুমেয়। আল মাহমুদ বলেন, ‘তার চেয়ে বড় শিল্পী নিশ্চয়ই আছেন, এই উপমহাদেশেই কয়েকজন আছেন। তবে তার মতো মৌলিক নিরপেক্ষতা তাদের মধ্যে প্রায় অনুপস্থিত বলা চলে। তার আঁকা সব নর-নারীই বাস্তবের চেয়ে একটু সুন্দর, পেশীবহুল, নিখুঁত ও কর্মপরায়ণ। ফিগারগুলো বাস্তবের চেয়ে একটু বিস্তৃত। এই বাহুল্যই সুলতানের প্রতিটি রচনাকে মহিমা দিয়েছে।

×