ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

শাল্লায় জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণ, পানি সংকটে ফসলী জমি

নিজস্ব প্রতিনিধি শাল্লা(সুনামগঞ্জ)

প্রকাশিত: ১৩:১১, ৩ জানুয়ারি ২০২৩

শাল্লায় জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণ, পানি সংকটে ফসলী জমি

জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণ

শাল্লায় জলমহাল শুকিয়ে মাছ আহরনের হিড়িক পড়েছে। সরকারি নীতিমালার কোনো তোয়াক্কা না করে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবে ইজারাকৃত জলমাহল শুকিয়ে মাছ করছেন ইজারাদাররা। ফলে বর্তমানে শাল্লার সবচেয়ে বড় হাওর ছায়ার হাওরে পানির অভাবে হাজার হাজার হেক্টর বোরো ধানের খেত শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। এ হাওরে এবার বোরো আবাদ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক। তারা অভিযোগ করে জানান, জলমহাল ইজারাদাররা তাদের স্বার্থে হাওর রক্ষা বাঁধ কেটে পানি ছেড়ে দিয়েছেন। এতে করে বোরো চাষের জমি পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। শুধু ছায়ার হাওর নয়, উপজেলার ছোট বড় সকল হাওরে একই অবস্থা। এতে বোরো চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে হাওরের কৃষকের মাঝে। তাই বোরো ধানের জমি বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

শাল্লা উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ছায়ার হাওরে  ৪ হাজার ৬শ হেক্টরের বেশি ফসলী জমি রয়েছে। এই হাওরের জলমহালগুলো শুকিয়ে মাছ আহরণ করে হাজার হাজার হেক্টর ফসলী জমি হুমকির মুখে ফেলেছে।

সরজমিনে শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, শাল্লা ইউনিয়নের সহদেবপাশা হাওরে চিলারডুবি গাঙ্গুয়া গাগনী গ্রুপ জলমহাল শুকিয়ে মাছ আহরণ করেছেন ফেনখাই সমবায় সমিতির সভাপতি  আহাদ নুর। এই হাওরের বোরো ধানের ফসলী জমি রয়েছে পানি সংকটে। ফলে কৃষকরা পড়েছেন বিপদে। অথচ এই জলমহালটি উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতাভুক্ত ইজারাদার। যার নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে জলমহাল শুকিয়ে মাছ আহরণ করা আইনের পরিপন্থী। কিন্তু এসব নীতিমালার কোনো তোয়াক্কা না করে ইজারাদার স্থানীয় প্রভাবে জলমহাল শুকিয়েছে। কৃষকরা প্রদিতবাদ করলেও তাদেরকে নানাভাবে ভয়ভীতির হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  

সহদেবপাশা গ্রামের কৃষক লুৎফুর রহমান জানান, এখন পৌষ মাস। এই মাসে হাওরে চারা রোপনের কাজ ধুমধামে চলছে। আর এসব ফসলী জমিতে পানি দেয়ার একমাত্র বিল হচ্ছে চিলারডুবি। আর এই বিলটি অসময়ে শুকিয়ে ফেলায় আমরা কৃষকরা পানির মহাসঙ্কটে পড়েছি। তাই প্রশাসনের কাছে দাবী ছায়ার হাওরের কৃষকদের ফসলী জমি রক্ষা করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। 

এই এলাকার কৃষক হারুন অর রশীদ বলেন, গত বছর বন্যায় বোরো ধান নষ্ট হয়েছে। এবার বোরো ধান লাগানোর আগেই পানি সংকট দেখা দিয়েছে। হাওরবাসীর কাছে এটি এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূল কারণ ছায়ার হাওরের জলমহালের ইজারাদাররা বিলগুলোতে বেশি মাছ ও লাভের আশায় হাওর রক্ষা বাঁধগুলো কেটে দিয়ে পানি ছেড়ে দিয়েছে। এরপরে মেশিন দিয়ে পানি শুকিয়ে জলমহাল মাছ ধরে ফসলী জমি পানির সংকটে ফেলেছে। তিনি আরো জানান এই হাওরে ৩৫ কেয়ার জমি রয়েছে তাঁর। রোপনের পরে জমিগুলো পানি সংকটে রয়েছে।

তবে ইজারাদার আহাদ নুরের ছেলে এই জলমহালের দায়িত্বে থাকা নাসির উদ্দিন  জানান, কৃষকদের সুবিধার্থেই এই জলমহাল শুকানো হয়েছে। আবার নীতিমালায় জলমহাল শুকানোর কথা উল্লেখ রয়েছে বলে তিনি জানান 
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ জামান খান বলেন, সরকারি নীতিমালায় জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করা আইনের পরিপন্থী। কেউ যদি এমন কাজ করেন, তাহলে ব্যক্তি স্বার্থে করা হবে। তিনি আরো বলেন, সরজমিনে পরিদর্শন করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

টিএস

×