ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুয়াকাটায় পর্যটকরা জিম্মি, তিনগুণ হোটেল ভাড়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২

কুয়াকাটায় পর্যটকরা জিম্মি, তিনগুণ হোটেল ভাড়া

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। ছবি: জনকণ্ঠ

কুয়াকাটায় পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়কে পুঁজি করে আবাসিক ও খাবার হোটেল মালিকরা গত তিন দিনে কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নিয়েছে। আগত পর্যটকদের জিম্মি করে দ্বিগুন-তিনগুণ বেশি হোটেল ভাড়া নেয়া হয়েছে। 

একই চিত্র ছিল খাবার হোটেলগুলোতে। হাতে গোনা ১০-১২টি অভিজাত আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট ছাড়া শতাধিক আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষ এভাবে পর্যটকদের কাছ থেকে গলাকাটা বাণিজ্য করেছে। ফলে এখানে আসা অধিকাংশ পর্যটক ক্ষুব্ধ ছিল। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটিসহ প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। ফলে কুয়াকাটায় পর্যটন ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরকারি দুই দিনের ছুটির সঙ্গে বড় দিনের ছুটি মিলে তিনদিনকে উপভোগ্য করতে কুয়াকাটায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকের ঢল নামে। কেউ কেউ বৃহস্পতিবার রাত থেকেই অবস্থান করতে থাকেন। ফলে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট আগাম বুকড হয়ে যায়। হোটেল-মোটেলে সংকুলান না হওয়ায় স্থানীয়দের বাসবাড়ি পর্যন্ত দৈনিক দুই থেকে তিন হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে অবস্থান করেছেন।

অভিজাত, তারকা মানের সেবা দেয়া সিকদার রিসোর্ট, খান প্যালেস, গ্রেভার-ইনসহ ১৫-১৬টি হোটেলে কাপল, ডাবল, ভিআইপি ও ভিভিআইপি কক্ষগুলোয় পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকার ভাড়া ঠিকই ছিল। বাড়ানো হয়নি। এসব হোটেলে বুফেসহ ব্রেকফাস্ট ফ্রি রয়েছে। রয়েছে নির্দিষ্ট ডিসকাউন্ট। এসব অভিজাত হোটেল উপচেপড়া ভিড়েও নির্দিষ্ট ভাড়াই রেখেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ওইসব হোটেলে অবস্থান করা পর্যটকরা। 

কিন্তু এর বাইরে সাধারণ মানের অসংখ্য আবাসিক হোটেলে যাদের রুম ভাড়া ইতিপূর্বে পাঁচ শ’ থেকে এক/দেড় হাজার, সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা ছিল। ওইসব হোটেল মালিকরা পর্যটকদের জিম্মি করে রুমের ভাড়া আদায় করেছে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকারও বেশি। এভাবে অন্তত ১৩০ হোটেলের প্রায় চার হাজার কক্ষ ভাড়া দিয়ে দৈনিক প্রায় কোটি টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। 

একই দৃশ্য ছিল খাবার হোটেলগুলোতে তারাও জনপ্রতি পর্যটকের কাছ থেকে একেক বেলা খাবারের বিল বাবদ অতিরিক্ত দেড় শ’ থেকে দুই শ’ টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নেয়।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মোসাম্মৎ লায়লা জানান, এখানে হোটেল ভাড়াটা বেশি। আগের চেয়ে রুম প্রতি দুই হাজার টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। 

পর্যটক মো. ইকবাল জানান, এখানে খাবারের মানের তুলনায় দামটা খুব বেশি। সবচেয়ে মজার বিষয় অধিকাংশ খাবার এবং আবাসিক হোটেলে নেই কোন রেট চার্ট। ফলে যে যার মতো করে ফ্রি-স্টাইলে পর্যটকের পকেট কেটেছে। রবিবার বিকেলে কুয়াকাটা ফেরত বহু পর্যটক কুয়াকাটার পর্যটক সেবার মান নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, তাদের সংগঠনভুক্ত আবাসিক হোটেল-মোটেলের সংখ্যা ৭৩টি। আর মোট আবাসিক হোটেল সংখ্যা প্রায় দেড় শ’। যেখানে ১৫-২০ হাজার পর্যটকের সংকুলান হয়। ধারণ ক্ষমতার বেশি পর্যটক হওয়ায় কোন মহল এমনটি করলে তা দুঃখজনক বলে তিনি মন্তব্য করেন। সংগঠনের তালিকাভুক্ত হোটেলে ভাড়ার রেট টানিয়ে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। তবে কোন পর্যটক অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়ে অভিযোগ করলে তারা বিষয়টি দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া সকল আবাসিক হোটেলে রুমের ভাড়ার রেটচার্ট টানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
 

 

 এসআর

সম্পর্কিত বিষয়:

×