ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষকের স্বপ্ন পানির নিচে

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ০০:৪০, ১৬ অক্টোবর ২০২২

কৃষকের স্বপ্ন পানির নিচে

হঠাৎ বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া ফসলের মাঠ

অতি বৃষ্টিতে রাজবাড়ীতে কৃষকের শত শত একর জমির টমেটো, বেগুন, পেঁয়াজ, শসা, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে। অনেক কৃষক পানি নিষ্কাশন করে বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া ফসল রক্ষা করার চেষ্টা করছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে জরিপ করছে গোয়ালন্দ উপজেলার কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।

শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলা পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত। এসব উপজেলার মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ও উজানচর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর পারে অনেক জমি জেগে উঠেছে।
জেগে ওঠা আবাদি জমিতে কৃষক আগাম ফসল উৎপাদন করার জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অনেক কৃষক আগাম ফসল লাগানো জন্য জমি তৈরি করছে। অনেকে টমেটো, পেঁয়াজ, বেগুন, শাক-সবজি লাগিয়েছে। অনেক কৃষক এরই মধ্যে আগাম সবজি বাজারে বিক্রি করছে।

এদিকে হঠাৎ অতি বৃষ্টিতে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা পারের শত শত একর জমির ফসল ডুবে যায়। কৃষক পানি নিষ্কাশন করে ডুবে যাওয়া ফসল রক্ষা করার চেষ্টা করছে। বাচ্চু ফকীর নামের এক কৃষক বলেন, আমাদের স্বপ্ন এখন বৃষ্টির পানি নিচে। আগাম এই ফসল নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি। ফসল উঠে পাওনাদারের দেনা পরিশোধ করব।

ছেলেমেয়েদের চাহিদা পূরণ করব। স্ত্রী এবং অসুস্থ বাবা-মায়ের কাপড় কিনে দেব। কিন্তু অতি বৃষ্টিতে আমাদের বেগুন, টমেটো ডুবে গেল। আবার পুনরায় এই ফসল চাষ করতে ২০/২৫ দিন পেছনে পড়ে গেলাম। এই জমিতে চাষ করতে পারলেও এবার লাভের মুখ দেখতে পারব না। বরং এবারো অনেক লোকসান গুনতে হবে। কৃষক মালেক বেপারি বলেন, প্রতি বছর বিভিন্ন প্রকার আগাম ফসল উৎপাদন করি।
এবারও টমেটো, বেগুন ও পেঁয়াজ লাগিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টির কারণে আমার টমেটো, বেগুন ও পেঁয়াজ পানিতে ডুবে যায়। তিনি বলেন, ডুবে যাওয়া জমি জেগে উঠতে আরো ৭/৮ দিন সময় লাগবে। এই জমিতে পুনরায় ফসল আবাদ করতে ১০/১২ দিন সময় লাগবে।

এতে আমরা লাভবান হতে পারব না। বরং লোকসান গুনতে হবে। দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোস্তফা ফকীর নামের এক কৃষক বলেন, আমাদের পরিবারের সবাই কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। লাভ-লোকসান যেটাই হোক কৃষি কাজ করে চলতে হয়। এবার হঠাৎ অতি বৃষ্টির কারণে আমাদের ৬ বিঘা জমির টমেটো ও বেগুন ডুবে যায়। ২০/২৫ দিনের মধ্যে এসব ফসল আমরা বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারতাম।

এখন পুনরায় ডুবে যাওয়া জমি জেগে ওঠা না পর্যন্ত চাষ করতে পারব না। এতে এবার আমাদের অনেক লোকসান হবে। কৃষক আসমত মোল্লা বলেন, আমার ৩ বিঘা জমি টমেটো ডুবে গেছে। টমেটোর চারাগুলো অনেক বড় হয়ে ছিল। হয়ত ২০ দিন পর টমেটো বাজারে নিতে পারতাম। এখন আমার পুরো লোকসান গুনতে হচ্ছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ খোকন উজ্জামান বলেন, হঠাৎ অতি বৃষ্টি। এতে নিচু এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়। পদ্মা নদীর পারের জমি নিচু হওয়ার কারণে অনেক টমেটো, বেগুন ও শাক-সবজি ডুবে যায়। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়নি। জরিপ চলছে। রবিবারের মধ্যে জানা যাবে কি পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

×