ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আলাদা শহর গড়ে উঠছে চাঁপাইয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২০ আগস্ট ২০১৬

আলাদা শহর গড়ে উঠছে চাঁপাইয়ে

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ জেলা শহরের আদলে আরও একটি শহর বা মহানগর গরে উঠছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর এলাকায়। এর তত্ত্বাবধান ও পরিচর্যা হবে একেবারে আলাদাভাবে। ইতোমধ্যেই এটিকে পৌরসভা বা উপশহর বা নতুন একটি আবাসিক নগর হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা চলছে। এই নগরীর আংশিক ইতোমধ্যেই রূপান্তর হয়ে বসে রয়েছে শিল্প নগরী হিসেবে। ৫০টি অধিক অটো রাইস মিল, একাধিক এগ্রো কারখানা, একাধিক কৃষি খামার ও নার্সারি, একটি বেসরকারী কৃষি (এক্সিম) বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, একাধিক বিনোদন কেন্দ্র ও পিকপিনক স্পট, একাধিক বেসরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি প্রস্তাবিত (প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু) গ্যারিসন ও ক্যান্টনমেন্ট, শতাধিক চালু ও মজা পুকুর, ১০টি অধিক চলমান খালবিল, উপজাতি সম্প্রদায়ের স্কুল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ১৫ একরের অধিক (প্রত্যেকের সাবেক ও বর্তমান এমপির) জুড়ে দুটো বাংলো, পুকুর, বিনোদন কেন্দ্র বা রিসোর্ট টাইপের ব্যবস্থাপনা চালু রয়েছে এই নতুন নগরীতে। ইতোমধ্যে এই এলাকাটিকে দক্ষিণ শহর হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। পঞ্চাশের অধিক মৌজা নিয়ে বরেন্দ্রর এই শহরের অবস্থান। বর্তমানে এটি ঝিলিম ইউনিয়নের মধ্যে হলেও আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে অবস্থান দৃঢ় করতে শহরের রূপ নিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নয়াগোলা পেরিয়ে আমনুরা জংশন মুখী সড়ক শুরু হওয়া মাত্র নতুন শহরের উত্থান ঘটেছে। দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। মধ্যখানে বুলনপুর, আতাহার ও জামতলা পেরিয়ে আমুনরা জংশন রেল স্টেশন। এই শহরের মধ্যে রয়েছে একাধিক আবাসিক এলাকা। তবে রাস্তার ধারের অধিকাংশ জমি দখলে চলে গেছে প্রস্তাবিত মিলকারখানা তৈরির প্রস্তাবনার মধ্যে। ৫০টির অধিক মিল কারখানার পাশাপাশি আরও সমপরিমাণ মিল কারখানা (অটোমেটিক রাইস মিল) করার প্রস্তুতি চলছে বলে এলাকা থেকে জানা গেছে। ভেতরের গভীর বরেন্দ্রে উঁচুভূমি বা লালমাটি হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলোতে বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে আগামী এক যুগের মধ্যে একই সঙ্গে অন্তত ৩০ এর অধিক মহল্লা গজিয়ে উঠবে। যার কারণে এসব মৌজায় মাটির দাম হু হু করে বেড়ে চলেছে। এ ছাড়াও বহু মিলমালিক বা শিল্পপতি এসব এলাকায় প্রতিযোগিতা করে মাটি কেনা শুরু করেছে। অনেকে প্রতিযোগিতা করতে নেমে কয়েকগুণ বেশি মূল্য দিয়ে মাটি মালিকদের প্রলোভন দিচ্ছে তার কাছে বিক্রি করার। বহু গরিব কৃষক প্রলোভনে পড়ে মাটি হস্তান্তর করছে পানির দরে। যা এক সময়ে সোনা হয়ে উঠবে। এসব এলাকায় এখন আমন, আউশ ও বোরো ধানের আবাদ হয়ে থাকে। সরকারী পর্যায়ে এলাকা চিহ্নিত করতে পারলে ভবিষ্যতে আবাসন এলাকা তৈরি করতে পারত সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে সরকার। কিন্তু তা আর হয়ে উঠবে না বেসরকারী পর্যায়ে মাটি কেনার হিড়িকের কাছে দাম চড়ে গেছে। এ ছাড়া আতাহার থেকে শুরু করে আমনুরা জংশন পর্যন্ত দুই ধারের গভীর অভ্যন্তর ভাগের জমি খুবই উঁচ ও উর্বরা। কয়েক শতাব্দীর রেকর্ড থেকে জানা গেছে, কোনদিন এ সমস্ত মাটি বা জমিন বন্যার পানির নিচে যায়নি। এমনকি ’৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরো জেলা বন্যার পানির নিচে চলে গেলেও এলাকাটি উঁচু হবার কারণে বন্যা উপদ্রুত এলাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হেলিকপ্টারটি এই এলাকায় জরুরী অবতরণ করেছিল। বর্তমানে নতুন শহরের পরিধি যেভাবে বাড়ছে তাতে আমনুরা রেল জংশন এই শহরের মধ্যেই পড়বে ভবিষ্যতে। যার কারণে এই এলাকার দুটি তাপবিদ্যুত কেন্দ্র, একটি কলেজ ও স্কুল, মৎস্য হেচারি ও একটি জুটমিল নতুন গড়ে ওঠা শহর এলাকার মধ্যে এসে পড়বে। মন্তব্য এই শহরের নাম বা গড়ে ওঠা নতুন পৌরসভার নাম বুলনপুর বা আতাহার হবার সম্ভাবনা খুবই বেশি বলে জানা গেছে। নয়াগোলা আমুনরা রেল জংশন ১১ কিলোমিটার সড়ক খুবই প্রশস্ত ও এই প্রশস্ত সড়কের ধারে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার মধ্যে সবচেয়ে বড় অটো রাইস মিল হচ্ছে শিল্পপতি এরফান চৌধুরীর। তার পরেই রয়েছে মোজাম্মেল হক ও আকবর হোসেনের। প্রথমটির মধ্যে রয়েছে একাধিক রাইস মিল ও বিশাল লম্বা প্রশস্ত অবকাঠামো। মিলের মধ্যে রয়েছে চোখ জুড়ানো বহু জাতের আম বাগান, মাছ চাষের পুকুর ও ফুল বাগান। এই শৌখিন শিল্পপতি এরফান চৌধুরী আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী হবার কারণে যে কোন সময় ঘোষণা দিয়ে সরাসরি রাজনীতিতে এসে সংসদ নির্বাচন করতে পারেন। আতাহার ও বুলনপুরে নতুন শহর গড়ে ওঠার পেছনে একাধিক শিল্পপতি থাকলেও মূল নায়কের ভূমিকা পালন করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের এমপি বা জনপ্রতিনিধি আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস। তিনি ইতোমধ্যেই এলাকার দক্ষিণ শহরে ১৫ একর জমির ওপর একটি রিসোর্ট স্টাইলে বাংলো করে তাতে সময় কাটান প্রায় সময়। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ভবিষ্যতে গড়ে ওঠা নতুন শহরটিকে পৌর এলাকায় রূপান্তর করার ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা দেবে। কারণ পদ্মার ভাঙ্গনে বাড়িঘর ছাড়া প্রতিষ্ঠিত লোকজন গড়ে ওঠা এই নতুন শহর মুখী হচ্ছে। কারণ এই বিশাল এলাকা মহানগরে রূপান্তর হলেও সেভাবে গড়ে ওঠেনি সুপেয় পানির ব্যবস্থা, পানি নিষ্কাশন ড্রেন, পাকা রাস্তাঘাট। এসব নির্মাণে প্রয়োজন হবে আরবান এলাকা ঘোষণার প্রজ্ঞাপন। তবে যেভাবে সম্প্রসারণ কাজ এগিয়ে চলেছে তাতে শীঘ্রই ঘোষণা আসতে পারে এলাকাটি আবাসিকসহ শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
×