ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্য যানজট ॥ যাত্রী দুর্ভোগ চরমে, নির্বিকার ট্রাফিক পুলিশ

মালিবাগ থেকে কুড়িল- ২০ মিনিটের রাস্তা কতক্ষণে পৌঁছা যায়?

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৬ আগস্ট ২০১৬

মালিবাগ থেকে কুড়িল- ২০ মিনিটের  রাস্তা কতক্ষণে পৌঁছা যায়?

রাজন ভট্টাচার্য ॥ মালিবাগ রেলগেট থেকে কুড়িল বিশ্বরোড। সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার সড়কে এখন নিত্য জনদুর্ভোগ চরমে। এতে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে মাত্রা ছাড়িয়েছে যানজট। শুধু ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণেই এ পরিস্থিতি বলে মনে করেন যাত্রী থেকে শুরু করে যান চালকরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে, ২০ মিনিটের রাস্তা পার হতে কত সময় লাগবে এর নিশ্চয়তা নেই। অনেক সময় তিন ঘণ্টায়ও এটুকু রাস্তা শেষ হয় না। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অথচ সামান্য উদ্যোগেই পুরো রাস্তাটি যানজটমুক্ত করা সম্ভব। সরেজমিন দেখা গেছে, মালিবাগ রেলগেট থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত অন্তত দশটি পয়েন্টে যানজট হচ্ছে নিয়মিত। অথচ যানজট নিরসনে এ রাস্তাটিতে সাম্প্রতিক নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে। প্রথমে সামান্য সুফল মিললেও এখন সবকিছু ভেস্তে গেছে। ফের ফিরে এসেছে মহাভোগান্তি। অথচ দুর্ভোগ এড়াতেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টের ক্রসিং। বেশ কয়েকটি ইউ টার্নও। খোলা হয়েছে ইউলুপ। প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন এ যানজট? এছাড়া ১০ কিমি সড়কের অন্তত ১০ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বাস না থামানোর নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এর তোয়াক্কা করছে না কেউই। মালিবাগ রেলগেট থেকে কুড়িলের দিকে যেতে প্রথমেই যাত্রীবাহী যানগুলোর এলোমেলো দাঁড়িয়ে থাকা। যাত্রী উঠানোর প্রতিযোগিতা। ফলে অন্যান্য পরিবহন চলতে পারে না। আরেকটু সামনে রামপুরা বাজার এলাকার দৃশ্যও ঠিক একই রকম। ভোর থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত রাস্তার মাঝখান পর্যন্ত বাজার বসে। এরপর ইচ্ছেমতো যাত্রী তোলা ও নামানোর প্রতিযোগিতা। এটিও একটি ভোগান্তির পয়েন্ট। এরপর রামপুরা ব্রিজ! এ এলাকায় যানজটের দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের। তাই সঙ্কট সমাধানে ইউলোপ নির্মাণের পর তা চালুও হয়েছে। কিন্তু যানজট লেগেই আছে। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, যাত্রীবাহী সব গণপরিবহন ইচ্ছেমতো গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। এ পয়েন্টে আধাঘণ্টার বেশি যানজটের ভোগান্তি হয় সব সময়। সুপ্রভাত পরিবহনের চালক হিমেল বলেন, এখানে যাত্রী উঠানামা করালে পুলিশ কিছুই বলে না। তাই দিনভর সব বাসই থামে নিজেদের ইচ্ছেমতো। কিন্তু পেছনে যানজট লেগে যায়। অনেক সময় গাড়ির দীর্ঘ সারি মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। এর একটু সামনে গেলেই মূল রাস্তার সঙ্গে মিলেছে হাতিরঝিলের পথ। এ পয়েন্ট পাড়ি দিলে আবারও ইচ্ছেমতো যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা। এরকম গুলশান এক নম্বর অর্থাত নতুন রাস্তার গলি পর্যন্ত তিনবার থামে যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো। গুলশান নতুন রাস্তার অন্তত দুই কিলোমিটার আগে থেকেই ভোগান্তির আভাস মেলে। থেমে থেমে চলে গাড়ি। এ পয়েন্টে দুই ধরনের সমস্যা। একটি হলো বাড্ডা থেকে গুলশান এক নম্বরমুখী গাড়িগুলো যাত্রীর অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে মূল সড়কে অন্যান্য পরিবহনকে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। দ্বিতীয় সমস্যা হলো নতুনবাজারমুখী গাড়িগুলো সিগন্যাল পার হওয়ার পর ইচ্ছেমতো পার্কিং ও যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতায় নামে। এ পয়েন্টে কাজ করে ট্রাফিক পুলিশের অন্তত পাঁচ সদস্য। অথচ প্রয়োজনীয় তৎপরতা নেই তাদের পক্ষ থেকে। এমন অভিযোগ বিভিন্ন যান চালকসহ যাত্রীদের। এরপর শাহজাদপুরের ভোগান্তি কাটিয়ে ওঠার পরপরই নতুনবাজারের ভোগান্তির হাতছানি। এ পয়েন্টে রয়েছে তিন ধরনের সমস্যা। প্রথম সমস্যা হলো উত্তরা থেকে আসা গুলশান দুই নম্বরমুখী গাড়িগুলো যেতে নতুনবাজারে একটি ইউ টার্ন করা হয়েছে। ইউ টার্নের সময় মালিবাগ থেকে নতুনবাজারমুখী গাড়িগুলো সিগন্যালে পড়ে। এরপর আমেরিকান এ্যাম্বেসির সামনে সব গাড়ি নিরাপত্তা তল্লাশির পর ছাড়া হয়। এতে যানজটের মাত্রা বাড়তে থাকে। এছাড়া গুলশান দুই নম্বর থেকে আসা গাড়িগুলো রাস্তা পারাপারের সময় বিশ্বরোডমুখী গাড়িগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলোÑ সিগন্যাল পারাপারের পর যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা। মূলত এ কারণে এই পয়েন্টে যাত্রীদের দেড় ঘণ্টার বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশিরভাগ সময়। অথচ সিগন্যাল পারাপারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে সড়কে গাড়ি দাঁড়াতে না দিলে কোন সমস্যা সৃষ্টির সুযোগ নেই। ছালছাবিল পরিবহনের চালক কালাম জানান, আমরা সিটিং সার্ভিস চালু করেছি। সঙ্গতকারণে আমাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা নেই। অন্যদের কারণে অর্থাত লোকাল সার্ভিসের কারণে যাত্রীদের এ পয়েন্টে প্রতিদিন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। রাইদা পরিবহনের চালক মঞ্জু জানালেন, পুরো রাস্তায় যানজটের কারণে গাড়ি চালানো দায়। মূলত এলোপাতাড়ি পার্কিংয়ে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে রাস্তায় অবৈধ বা এলোমেলো পার্কিং বন্ধ করা সম্ভব হলে ৭০ ভাগ ভোগান্তি কমে আসবে। একই বক্তব্য দিলেন এই রুটে চলা একটি বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা সজীব চ্যাটার্জীও। তুরাগ পরিবহনের চালক আলালের বক্তব্য পুলিশ থামতে দিলে আমরা তো লাভের জন্য বাস থামিয়ে রাখবÑ এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, কোথায় বাস থামবে আর কোথায় থামবে নাÑ এরকম সাইনবোর্ড ঝোলানো হলেও তা যথাযথ পালন হচ্ছে না। নতুনবাজার থেকে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই বসুন্ধরার যানজটের হাতছানি। অথচ বসুন্ধরা সিগন্যালে গাড়ি পারাপারের ব্যবস্থা বন্ধ করে সড়কটি সরলীকরণ করা হয়েছে। তবুও দুর্ভোগ কমছে না। এর কারণ হলো এ পয়েন্টে যাত্রী ভিড়। তাই সব যাত্রীবাহী পরিবহন লাভের আশায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে মাত্রাছাড়া ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ সিগন্যালের এক পুলিশ কনস্টেবল বলেন, এই রুটে প্রাইভেটকার থেকে শুরু করে বাসসহ পণ্যবাহী পরিবহনের চাপ অনেক বেশি। সে অনুযায়ী সড়কটি তেমন প্রশস্ত নয়। তাই কিছুটা রাস্তা বন্ধ থাকলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। এজন্য রাস্তায় সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিশেষ করে এ সড়কে সকাল ও বিকেলে হাজার হাজার প্রাইভেটকারের চাপ থাকে। ফলে অল্প সময় রাস্তা বন্ধ থাকলে দ্রুত যানজট ছড়িয়ে যায়। কখনও কখনও বসুন্ধরা থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত গাড়ির ধীরগতি থাকে। বসুন্ধরা পার হয়ে সামনে কুড়িল ফ্লাইওভারের গোড়ায় যাত্রী ওঠানোর ঘটনায় ভোগান্তি নিত্যদিনের।
×