ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ দোয়া ইউনুসের প্রকৃষ্টতা

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ৩ এপ্রিল ২০২০

 প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ দোয়া ইউনুসের প্রকৃষ্টতা

(গত শুক্রবারের পর) হযরত ইউনুস ‘আলায়হিস্ সালাম ৪০ দিন মাছের উদরে ছিলেন। মুহররম মাসের ১০ তারিখে অর্থাৎ আশুরার দিনে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু তার দোয়া কবুল করেন এবং ওই দিনই আল্লাহর নির্দেশে সেই বৃহদাকার মাছটি তাকে দরিয়ার কিনারে এক তৃণহীন প্রান্তরে উগরিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, আশুরা দিবসে তিনি মাছের পেট থেকে মুক্তি পান, সেই হিসেবে তাকে যেদিন মাছটি গিলে ফেলে সেদিন ছিল জিলহজ মাসের ১ তারিখ। সে যাক, কুরআন মজিদে হযরত ইউনুস ‘আলায়হিস্ সালামের মুক্তি পাওয়ার ঘটনারও উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : অতঃপর আমি ইউনুসকে নিক্ষেপ করলাম এক তৃণহীন প্রান্তরে এবং সে ছিল রুগ্ন। আর আমি তার ওপর একটি লাউগাছ উদ্গত করলাম (সূরা সাফ্ফাত : আয়াত ১৪৫-১৪৬)। উল্লেখ্য যে, হযরত ইউনুস ‘আলায়হিস্ সালাম দীর্ঘ ৪০ দিন মাছের পেটে নিকষকালো অন্ধকারে পানি-খাদ্যবিহীন অবস্থায় দিন-রাত গুজরান করায় ফ্যাকাসে এবং ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, যে কারণে এই অবস্থা থেকে নিরাময়ের জন্য আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু পরিবেশ দূষণমুক্তকারী এবং নির্মল ছায়াদানকারী লাউগাছ সেখানে গজিয়ে দেন। সেই লাউগাছটি এত দ্রুত গজিয়ে ওঠে যে, মুহূর্তের মধ্যে ঘন লতাপাতায় তা তাঁবুর আকার ধারণ করে। তিনি কচি লাউ খাবার হিসেবে গ্রহণ করেন এবং একটি বক্রি মতান্তরে হরিণী সেখানে সহসা হাজির হলে তিনি তার দুধ পান করেন। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। লাউ, লাউলতা, লাউপাতার ঔষধি ও ভেষজগুণ তখন থেকেই প্রকাশ পায়। তারপর তিনি আল্লাহর নির্দেশে নিজের কওমের কাছে ফিরে যান এবং এক লাখ মানুষ তাঁর কাছ থেকে হিদায়াত লাভ করে। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : তাকে (ইউনুসকে) আমি এক লাখ বা ততোধিক লোকের নিকট প্রেরণ করেছিলাম এবং তারা ইমান এনেছিল, ফলে আমি তাদের কিছুকালের জন্য জীবন উপভোগ করতে দিলাম (সূরা সাফ্ফাত : আয়াত ১৪৭-১৪৮)। উল্লেখ্য যে, ইরাকের মসুল অঞ্চলে নিনেভার অবস্থান ছিল। আর যে দরিয়ায় হযরত ইউনুস ‘আলায়হিস্ সালামকে মাছে গিলে ফেলছিল সেই দরিয়া হচ্ছে দজলা নদী। এই দজলার তীরেই বর্তমান বাগদাদ নগরী অবস্থিত। দোয়া ইউনুস লাইলাহা ইল্লা আন্তা সুব্হানাকা ইন্তি কুন্তু মিনাজ্ জলিমীন-এর মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহর নবী হযরত ইউনুস ‘আলায়হিস্ সালাম এই দোয়া পাঠ করেই আল্লাহ্্র রহমতে মৎস্য উদর তথা মৃত্যু গহ্বর থেকে নাজাত পেয়েছিলেন। যদি কেউ দোয়া ইউনুস কয়েকবার পড়ে দোয়া করে তার দোয়া কবুল হয়, কেউ যদি বিপন্ন বা বিপদগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পাঠ করে আল্লাহর রহমতে সে বিপদ থেকে উদ্ধার পায়। এক বর্ণনায় আছে যে, সিজদায় গিয়ে ৪০ বার দোয়া ইউনুস পাঠ করে অঙ্গুলি ইশারা দিয়ে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর দরবারে দোয়া করলে আল্লাহ্ তা কবুল করেন। আরও বর্ণিত আছে যে, দৈনিক এক হাজার বার দোয়া ইউনুস পড়লে পদমর্যাদা সমুন্নত হয়, আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু তার রুজি-রোজগারে সমৃদ্ধি দান করেন, তার দুঃখ-যন্ত্রণা, পেরেশানি, অশান্তি, কষ্ট প্রভৃতি নিবারিত করেন, সকল প্রকার কল্যাণের দ্বার তার জন্য খুলে দেন, শয়তানের প্ররোচনা হতে তাকে রক্ষা করেন। খতমে ইউনুসের মজলিস করে এক লাখ পঁচিশ হাজার বার পড়লে তাবত অপকার হতে রক্ষা পাওয়া যায়, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, রোগ-শোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। দোয়া ইউনুসে রয়েছে আল্লাহর তাওহীদের সুস্পষ্ট ঘোষণা, তাঁর পবিত্রতার ঘোষণা এবং নিজের অপরাধের স্বীকারোক্তি, যে কারণে এটা এত মাহাত্ম্যপূর্ণ হয়েছে। এক তথ্য থেকে জানা যায় যে, যেদিন হযরত ইউনুস ‘আলায়হিস্ সালামকে মধ্য দরিয়ায় পানিতে ফেলে দেয়া হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সেই বৃহদাকার মৎস্যটি গিলে ফেলে সেদিন সময়টি ছিল চাশ্ত নামাজের ওয়াক্ত। আর তিনি ৪০ দিন পরে যে সময় মৎস্য উদর থেকে নাজাত পান তখন ছিল আসরের নামাজের ওয়াক্ত। নিয়মিত দোয়া ইউনুস আমলের মধ্যে অনেক ফায়দা রয়েছে। হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিআল্লাহ্ তায়ালা আন্হু বলেন, আমি হযরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম : হে আল্লাহর রসুল! এই দোয়ার (দোয়া ইউনুসের কবুলিয়াত) গ্রহণীয়তা কি কেবল হযরত ইউনুস ‘আলায়হিস্ সালামের জন্যই প্রযোজ্য, না সব মুসলিমের জন্য? জবাবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন : তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর জন্য এই দোয়াটি খাসভাবে কবুল হলেও কবুলের ব্যাপারে এটা সব মুসলিমের জন্য সব সময়ই প্রযোজ্য। তুমি কি কুরআন মজিদে পাঠ করোনি : ওয়া কাযালিকা নুন্জীল্ মুমিনীন- আর এভাবেই আমি (আল্লাহ্) মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি। হযরত ইউনুস ‘আলায়হিস্ সালামকে সেই বৃহদাকার মাছটি উদ্গীরণ করেছিল দজলা নদীর তীরবর্তী যে স্থানে সে স্থানে একটি মসজিদ স্থাপিত হয়। আর এই মসজিদের অভ্যন্তরেই রয়েছে আল্লাহর নবী হযরত ইউনুস আলায়হিস্ সালামের মাজার শরীফ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন নবী। কয়েক হাজার বছর আগে লক্ষাধিক লোককে হিদায়াত দান করে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। জানা যায়, তিনি যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন তাঁর আব্বার বয়স ছিল সত্তর বছর। অতি শৈশবে তিনি পিতৃহারা হন। তাঁর অনেক মুজিযা রয়েছে। (সমাপ্ত) লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ
×