ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিস ও ব্রেক্সিট

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

 বরিস ও ব্রেক্সিট

শুধু ব্রিটেন নয়, একই সঙ্গে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বরিস জনসন। প্রাণপণ চেষ্টা করেও জেমস ক্যামেরন, টেরেসা মে যা পারেননি, তা গত জুলাইয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করে মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে একেবারে ব্রেক্সিটের ফসল ঘরে তুললেন সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ বিজয়ীর বেশে। আপাতদৃষ্টিতে উড়নচন্ডি স্বভাবসহ একাধিক নারীর সঙ্গে বিতর্কিত কর্মক‍ান্ডের জন্য ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হলেও ব্রিটেনের বর্তমান প্রতিকূল অবস্থা এবং অর্থনীতির দুঃসময়ে বরিসের এই বিজয় নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এদিক থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার অনেক মিল, যিনি তাকে প্রকাশ্যে সমর্থনও করেছেন। মনে রাখতে হবে যে, লৌহমানবী হিসেবে খ্যাত মার্গারেট থ্যাচারের পর গত তিন দশকে কনজারভেটিভ পার্টির এত বড় বিজয় প্রত্যক্ষ করা যায়নি। অন্যদিকে লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন পরাজয়ের দায়িত্ব স্বীকার করে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রিটেনের এবারের সাধারণ নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে এক কথায় বলা যায় যে, যাকে অনেকেই ভেবেছিলেন সংক্ষিপ্ত সময়ের প্রধানমন্ত্রী, সেটি ভুল প্রমাণ করে আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন বরিস জনসন। অন্যদিকে, নির্বাচনের এই ফল নিশ্চিত করেছে যে, ব্রেক্সিটের প্রথম ধাপটি কার্যকর হবে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে, যা সম্পন্ন হবে ২০২০-এর ডিসেম্বরে। তবে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য ও সেবাখাত, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তার মতো বিষয়ের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে আরও সময় লাগতে পারে, যা স্বাভাবিক ও সঙ্গত। একই সঙ্গে এই নির্বাচনের ফল হুমকি সৃষ্টি করেছে এই ব্র্রিটেনের অখন্ডতা সুরক্ষার হুমকি হিসেবে। কেননা, ইতোমধ্যেই স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে অস্থিরতা ও উত্তেজনা প্রকট হয়ে উঠেছে ব্রেক্সিট ইস্যুতে। এখন দেখার অপেক্ষা, ব্রেক্সিটকে ঘিরে দেশটিতে এই যে বিভক্তি ও বিভাজন, তা কিভাবে মোকাবেলা করেন বরিস জনসন। এর জন্য তাকে ঘরে ও বাইরে প্রবল প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতে পারে। ব্রেক্সিট চুক্তিতে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে গেলে ইইউভুক্ত দেশে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের কী হবে? অনুরূপ ব্রিটেনে বসবাসকারী ইউরোপীয়দের! সেসব দেশে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগুলো কি ধরনের সুবিধা পাবে, সেটিও একটি বিষয়। এর পাশাপাশি বের হয়ে যাওয়ার জন্য কত অর্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে খোয়াতে হবে দেশটিকে? সেই পরিমাণ অর্থ ব্রিটেনের দেয়ার সামর্থ্য আছে কিনা, উপেক্ষণীয় নয় সেটিও। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েছিল। ২০১৬ সালের জুন মাসে ঐতিহাসিক একটি গণভোটে সে দেশের মানুষ ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অবশ্য গণভোটের ব্যবধান ছিল সামান্য। এরপর থেকেই ব্রিটেনের রাজনীতিবিদরা বিতর্ক করে চলেছেন ব্রেক্সিট কিভাবে হবে। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কি ধরনের বিচ্ছেদে যাবে? ব্রেক্সিট চুক্তির ভোটাভুটি নিয়ে বিরল এক রাজনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত হয়েছিল যুক্তরাজ্য। দেশটির পার্লামেন্টে কোন ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে রাজনীতিকদের এমন দৌড়ঝাঁপ ও উত্তেজনার ঘটনা নিকট অতীতে দেখা যায়নি। ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদনে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইইউ বেশ কৌশলী খেলা খেলেছে। এখন যুক্তরাজ্যের খেলার পালা। এর পাশাপাশি ব্রেক্সিটের অভিজ্ঞতা ও প্রভাব যে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও অনিবার্য পড়বে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিশেষ করে গ্রীস, ইতালি, স্পেন ও অন্যত্র তথাকথিত পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী সরকারের যে প্রবল বাতাস বিরাজমান, তারা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। কেননা, ঐক্যের সুফলের তুলনায় ভাঙ্গনের কুফল সর্বদাই তিক্ত এমনকি বিদ্বেষপূর্ণ হতে পারে।
×