ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাঠ নেই, নেই পার্কও

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ৭ অক্টোবর ২০১৯

 মাঠ নেই, নেই পার্কও

দুই কোটির বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত রাজধানী ঢাকায় খেলাধুলার মাঠ প্রায় নেই এবং পার্ক হিসেবে যেটুকু অবশিষ্ট আছে, সেটকুরও মরণ দশা। এটি পুরনো ও বহুল কথিত বাস্তব। এখন ক্যাসিনো কা-ে ক্লাবগুলোরও যায় যায় অবস্থা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্প্রতি পরিচালিত অভিযানে দেখা গেছে যে, প্রায় সব ক্লাবেই গড়ে উঠেছে অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়ার আড্ডা। সর্বোপরি বারসমেত অনৈতিক কর্মকা-ের আখড়া। অথচ ঢাকা ও চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলো এক সময়ে গড়ে উঠেছিল ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, সাঁতারসহ খেলাধুলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিভাবান খেলোয়াড় ও এ্যাথলেটিক্স তৈরির কারখানা হিসাবে। এক শ্রেণীর দুর্বৃত্তের হাতে পড়ে ক্যাসিনো কান্ডে ক্লাবগুলোতে যখন তালা ঝুলছে, তখন আক্ষরিক অর্থে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ায় উপক্রম হয়েছে খেলোয়াড় ও এ্যাথলেটদের। খেলাধুলাসহ জীবন জীবিকার জন্য তারা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? হাত পাতবে কোথায়? একদিকে খেলাধুলার মাঠ নেই, অন্যদিকে ক্লাবের গেটেও ঝুলছে তালা। এহেন দুর্দশা ও শোচনীয় অবস্থা হয়েছে দেশীয় ক্রীড়াঙ্গনের। নগরজীবন মানেই যেন কবির ভাষায় ‘ইটের পরে ইট, মাঝে মানুষ কীট, নাইরে ভালবাসা, নাইরে খেলা।’ রাজধানী ঢাকা বৈশ্বিক শহর-নগর জরিপে ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় বসবাস অযোগ্য শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ঢাকার আকাশ বাতাস-পানি দূষিত ও অসাস্থ্যকর, নোংরা ও বর্জ্যকবলিত, জনস্বাস্থ্যের জন্য রীতিমতো হুমকিস্বরূপ। এহেন রাজধানীর পার্কগুলোর অবস্থাও নিতান্তই করুণ, হতচ্ছাড়া, দীর্ণ-শীর্ণ-ধুলোমলিন, সর্বোপরি বেদখলে ভারাক্রান্ত। রাজধানীর স্কুল-কলেজ মানে এখন অট্টালিকার সারি, বহুতলবিশিষ্ট ভবন। অন্যদিকে রাজধানীর ফুসফুস বলে খ্যাত রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ওসমানী, চন্দ্রিমা, বাহাদুর শাহ পার্ক, হাতিরঝিল এমনকি মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের অবস্থাও যে ভাল এমন বলা যাবে না কিছুতেই। পার্কগুলো বরং এখন হয়ে উঠেছে নাগরিক বিড়ম্বনা ও অস্বস্তির কারণ। অযত্ন অবহেলা ও দখলে বেশিরভাগ উদ্যানেরই বর্তমানে মরণদশা, শ্রীহীন ও বিবর্ণ। যতত্রত ময়লার ভাগাড়, ছিনতাইকারী-হকার-টোকাইয়ের দৌরাত্ম্য ও বিশ্রামস্থল। প্রবেশপথে নানা প্রতিবন্ধকতা। অসামাজিক কার্যকলাপ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সর্বোপরি অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে সেসব স্থান। সে অবস্থায় নগরবাসীর দৈনন্দিন চিত্তবিনোদন, হাঁটাহাঁটি, শরীর চর্চা, সপরিবারে ঘুরে বেড়ানো অথবা অবসর সময় কাটানোর ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাটুকু ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এর ফলে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। খেলাধুলার মাঠ ও বেড়ানোর পার্ক না থাকায় কার্যত তারা হয়ে পড়েছে গৃহ ও ফ্ল্যাটবন্দী। তাদের সবার সময় কাটে টিভি দেখে, অথবা মোবাইলে গেম খেলে। ছিমছাম ও সুন্দর একটি নগরীর জন্য মোট আয়তনের ১০ শতাংশ খোলা মাঠ ও পার্ক অত্যাবশক হলেও ঢাকায় আছে মাত্র ৪ শতাংশ। ঢাকা দক্ষিণে ৩১টি এবং উত্তরে ৫৪টি খেলার মাঠের কথা কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে এসবের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। অন্তত অধিকাংশ ক্ষেত্রে খেলাধুলার পরিবেশ নেই। তরুণ ও শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিভিন্ন খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করা গেলে নির্মল আনন্দ-বিনোদনের পাশাপাশি সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-মাদক ইত্যাদির ছোবল থেকে সুরক্ষা সম্ভব হয় অনেকাংশে। এতে করে নতুন নতুন প্রতিভাও উঠে আসবে সুনিশ্চিত। নাগরিক জীবনে ব্যস্ততার কারণে অনেকেই যেতে পারেন না মাঠে। স্টেডিয়ামগুলোতে দর্শকখরাসহ সময় সময় টিকেট সঙ্কট-কালোবাজারি-মারামারি এমনকি বাজি ধরার খবরও মেলে। এসব অপবাদ ও কালিমা থেকে মুক্তি দিতে নানা ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে নিয়মিত। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সুনিশ্চিত করতে খেলাধুলাসহ নির্মল বিনোদনের কোন বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি চাই নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের সুব্যবস্থা, মাঠ ও পার্কগুলোর পুনরুদ্ধার ও সংস্কার। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২টি পার্ক ও ৪টি খেলার মাঠ সংস্কারের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেটি ইতিবাচক। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনেও এ রকম উদ্যোগ প্রত্যাশিত বৈকি।
×