ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পুঁজিবাজারে শক্তি ফেরাতে-

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পুঁজিবাজারে শক্তি ফেরাতে-

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে সাম্প্রতিককালে। এ লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এই বিনিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত নয়টি শর্ত পরিপালন করে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। এই উদ্যোগের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে। একই সঙ্গে যাদের শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের আর এটির প্রয়োজন পড়বে না। ঢাকার পুঁজিবাজারে বর্তমানে মন্দাভাব বিরাজ করছে। অথচ সর্বশেষ বড় ধরনের ধসের পর নানা সংস্কার উদ্যোগের কারণে বিগত কয়েক বছরে দেশের শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল। মানুষের মধ্যেও আস্থা ফিরে এসেছিল। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক সেমিনারে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘এতদিনে পুঁজিবাজার একটি ভিত্তি পেয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে শেয়ারবাজারের উন্নতি দৃশ্যমান হবে। শেয়ারবাজারের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আইন-কানুনে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।’ অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলো চলতি বছরের শুরু থেকেই কমবেশি দরপতনের প্রবণতার ভেতরে রয়েছে পুঁজিবাজার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে বাজারে প্রায় টানা দরপতন চলেছে। ৩০ জুন বাজেট পাসের পর ১৪ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচকটি প্রায় ৪০০ পয়েন্ট কমে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছিল। শেয়ার বাজারের চাঙ্গা ভাবের জন্য কয়েকটি শর্ত জরুরী। প্রধান শর্ত হলো দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে কিনা। যদি থাকে, তবে সরকারী ও বেসরকারী নানা প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয় এবং চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ বিঘœহীনভাবে এগিয়ে চলে। সেইসঙ্গে বিনিয়োগের সম্ভাবনাও দেখা দেয়। বলাবাহুল্য প্রধান শর্থটি পূরণ হলেই পরের শর্তগুলো পূরণের পথ তৈরি হয়। সরকারের যদি দেশের মানুষের প্রতি অঙ্গীকার থাকে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেয়ার, তবে দেশের উন্নয়ন ঘটবে। একই সঙ্গে বেসরকারী কোম্পানিগুলোও উৎপাদনমুখী এবং সচল থাকবে। তার মানে হলো অর্থের প্রবাহ থাকবে, মুনাফা হবে। সেক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর শেয়ারও পুঁজিবাজারে সচল থাকবে। মানুষও শেয়ার বেচাকেনায় আগ্রহী হবে। বর্তমান সরকার জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব। সরকার বিগত দশ বছর ধরে তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশের অর্থনীতিকে উন্নয়নের গতিময় রেলে তুলে দিয়েছে। সে অবস্থায় শেয়ারবাজারকে পূর্বাবস্থায় নিতে হলে কর্তৃপক্ষকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এটি অনস্বীকার্য যে, শেয়ারবাজারে চলমান তারল্য সঙ্কট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকের মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশ গ্রহণে শেয়ারবাজার নতুন মাত্রা পাবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। ব্যাংকের উদ্বৃত্ত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন হবে বলে আমরা আশা করতে পারি। মানুষ আশা করে, সঙ্কট কাটিয়ে শেয়ারবাজার আবারও চাঙা হয়ে উঠবে। তবে সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য চাই আন্তরিকতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ।
×