ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুৎ চুরির নতুন আইন পাস

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

বিদ্যুৎ চুরির নতুন আইন পাস

অনলাইন রিপোর্টার ॥ বিদ্যুৎ চুরির সাজা বাড়ানো, উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার এবং সেবা নিশ্চিত করতে নতুন আইনের খসড়া সংসদে পাস হয়েছে। মঙ্গলবার ‘বিদ্যুৎ বিল-২০১৮’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের উপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। গত ১৪ নবেম্বর বিলটি সংসদে তুলেছিলেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তখন বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ১৯১০ সালের ‘ইলেকট্রিসিটি অ্যাক্ট’ সংশোধন করে নতুন আইন করতে বিলটি পাস হয়েছে। যেখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন প্রতিষ্ঠান করার কথাও বলা হয়েছে। সংশোধিত আইনে বিদ্যুৎ চুরির জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা চুরি হওয়া বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার (যেটা বেশি হয়) বিধান রাখা হয়েছে। আগে এ অপরাধের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। চুরি ঠেকাতে বিদ্যুৎ খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও শাস্তির আওতায় আনা হল এখন, যা আগের আইনে ছিল না। এছাড়া বিদ্যুৎ স্থাপনায় নাশকতা করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান যোগ করা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন কোনো পূর্তকর্ম সম্পাদনকালে লাইসেন্সি কোনো ক্ষতি, অনিষ্ট বা অসুবিধার সৃষ্টি করলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে অথবা বৈদ্যুতিক টাওয়ার নির্মানের জন্য ব্যবহৃত জমির জন্য ভূমির মালিককে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ দেবে। কোন অপরাধে কী সাজা ১.বিদ্যুৎ চুরির জন্য সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা চুরি হওয়া বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার (যেটা বেশি হয়) সুযোগ থাকবে। আগের আইনে এ অপরাধে কেবল ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। ২.বিদ্যুৎ চুরির জন্য কোনো যন্ত্র বা ডিভাইস ব্যবহার করলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগে এ অপরাধের জরিমানা ছিল ২০ হাজার টাকা। ৩.বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ চুরি করলে ওই ব্যক্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা চুরি হওয়া বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ বা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৪.বিলে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ অপচয়ের জন্যও এক থেকে তিন বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সংসদে উত্থাপিত বিলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান ছিলো, সংসদীয় কমিটি এটি কমিয়ে তিন বছর করেছে। ৫.কেউ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চুরি বা অপসারণ করলে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৬.কেউ চুরি করা কোনো যন্ত্রপাতি বা বিদ্যুতের লাইনের সামগ্রী দখলে রাখলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৭.বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, বিদ্যুৎ লাইন, খুঁটি বা অন্য যন্ত্রপাতি নাশকতার মাধ্যমে ভেঙে ফেললে বা ক্ষতিগ্রস্ত করলে বা বিদ্যুৎ সরবারহ বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বা যন্ত্রের উপর কোনো বস্তু নিক্ষেপ করলে বা রাখলে সাত থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হবে বলে বিলে বলা হয়েছে। ৮.আগে বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো শাস্তির বিধান ছিল না। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, যদি কোনো বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী বিধি লঙ্ঘন করেন, তাকে শাস্তি পেতে হবে। ৯.বিলে বলা হয়েছে, সরবরাহ এলাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে বা বিদ্যুৎ লাইন বা কোনো অবকাঠামো বসালে, আইন বা বিধির কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখলে, ত্রুটিযুক্ত বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। ১০.প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন বা বিতরণ কাজে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারী এ আইনে অপরাধ করলে বা অপরাধ সংগঠনে সহায়তা, প্ররোচনা বা ষড়যন্ত্র করলে তিনি সাজার আওতায় আসবেন। ১১.আইনে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই- এমন অপরাধে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিদ্যুতের কোনো লাইন মেরামত, সংস্কার বা নতুন সরবরাহ লাইন বসানোর কাজে যাতে টেলিফোন, ইন্টারনেট বা সাবমেরিন কেবলের কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য কাজ শুরুর আগেই সংশ্লিষ্ট সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিস দিয়ে জানানোর বিধান যুক্ত করা হয়েছে আইনে। বিলে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সমন্বিত আকারে পরিচালনা করতে সরকার একটি স্বতন্ত্র সিস্টেম অপারেটর প্রতিষ্ঠা করবে। এই অপারেটর নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রবাহ মনিটরিং, সিডিউলিং এবং মেরিট ডেসপাস ও বিতরণ সংস্থা বা কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে লোড বরাদ্দ করবে।
×