ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

কাল আখেরি মোনাজাত

বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু, জুমায় লাখো মুসল্লি

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু, জুমায় লাখো মুসল্লি

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নূরুল ইসলাম টঙ্গী থেকে ॥ টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে চার দিন বিরতি দিয়ে শুক্রবার শুরু হয়েছে পবিত্র হজের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত তাবলিগ জামাতের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। পথে পথে নানা ভোগান্তি উপেক্ষা করে দেশের ১৩ জেলা থেকে মুসল্লিদের কাফেলা আসছে টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমাস্থলে। ইতোমধ্যে অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশ গ্রহণ ও মুসল্লিদের আগমনে টঙ্গীর এজতেমাস্থল এবং আশপাশের এলাকা এখন মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত। প্রথম পর্বের তুলনায় এ পর্বে শীতের তীব্রতা হ্রাস পেয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা জামাতভুক্ত হয়ে এখনও এজতেমাস্থলের দিকে ছুটে আসছেন। আসছেন বিদেশী মুসল্লিরাও। জুমা’বারে লাখো মুসল্লির ঢল নামে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। নামাজের আগেই এজতেমার পুরো প্যান্ডেল ও ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা অংশ নেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের সড়ক ও গলিগুলোর ওপরে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। এদিকে এজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে এবারের এ পর্বেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আগামীকাল রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব এজতেমা শেষ হবে। শুক্রবার বাদ ফজর তাবলিগ জামাতের বাংলাদেশের মাওলানা ফারুক হোসেনের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব এজতেমার ২য় পর্বের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। মূলমঞ্চ থেকে দেয়া এ বয়ান বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ (তরজমা) করে প্রচার করা হয়। দুপুরে বৃহত্তম জুমাার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। ওই নামাজের ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের। এতে লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নেন। এজতেমার দ্বিতীয় পর্বে পুরো ময়দানকে ২৮টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এতে ঢাকাসহ (একাংশ) দেশের ১৩টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। এদিকে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো বিশ্ব এজতেমা ময়দানকে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যাতে টঙ্গীর এজতেমাস্থলে স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপদে পৌঁছতে পারে সেজন্যও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাজীপুরে র‌্যাব ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহত্তম জুমার নামাজ ॥ বিশ্ব এজতেমার শুরুর দিন জুমা বার হওয়ায় এজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহত্তম জুমার জামাত। জুমা নামাজের ইমামতি করেন তাবলিগ জামাতের মুরব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের। এজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি এজতেমাস্থলে হাজির হন। প্রথম পর্বের তুলনায় এ পর্বে শীতের তীব্রতা কম হওয়ায় ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে এজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। জুমার নামাজ আদায় করতে রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি ছুটে আসেন। এজতেমার মাঠ উপচিয়ে জামাত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের পাশ ঘেঁষে এজতেমা মাঠের উত্তর দিকের রাস্তায়ও জামাত দাঁড়ায়। মূল প্যান্ডেলে জায়গা না পেয়ে অগণিত মুসল্লিদের রাস্তায় কিংবা মহাসড়ক ও খোলা জায়গার উপর খবরের কাগজ, জায়নামাজ, পলিথিন এবং হোগলা বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। ভিআইপিদের জুমার নামাজ আদায় ॥ বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বে প্রথম দিন শুক্রবার এজতেমা ময়দানে অবস্থানরত লাখো মুসল্লির সঙ্গে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ আদায় করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, পুলিশের আইজি একেএম শহিদুল হক, অতিরিক্ত আইজিপি ড. জাভেদ পাটোয়ারী, জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ প্রমুখ। দ্বিতীয় দফার প্রথম দিনে যারা বয়ান করেন ॥ শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মাধ্যমে এজতেমার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা আব্দুল রেহমান রাভিয়ানা বয়ান করেন। শুক্রবার বাদ ফজর বাংলাদেশের মাওলানা ফারুক হোসেন এবারের এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের কার্যক্রম শুরু করেন। বাদ জুমা থেকে ভারতের মাওলানা শেখ আহমদ মাসুদ, বাদ আসর থেকে ভারতের মাওলানা ইউনুছ পলানপুরী ও বাদ মাগরিব- ভারতের হযরত মাওলানা আকবর শরীফ বয়ান করেন বলে জানান বিশ্ব এজতেমার মুরব্বি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ গিয়াস উদ্দিন। আখেরি মোনাজাত রবিবার সকালে ॥ বিশ্ব এজতেমার মারকাজের শূরা সদস্য মুরব্বি মোঃ মাহফুজ বলেন, প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের আরবী ও বাংলা ভাষায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন। মুসল্লিদের ভোগান্তি কমাতে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ॥ গাজীপুরের সিভিল সার্জন জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারখানার গেট ও টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল মাঠসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে বেড বাড়ানো হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, এ্যাজমা, ট্রমা, বার্ন, চক্ষু এবং ওআরটি কর্নারসহ কয়েকটি ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ চিকিৎসা দিচ্ছেন। বিদেশী মুসল্লির অংশগ্রহণ ॥ বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন বিশ্বের ৮৩টি দেশের তিন হাজার ৯৭৮ জন বিদেশী মুসল্লি এজতেমায় অংশ নিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে এজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিদেশী মেহমানদের জন্য ট্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল ॥ এজতেমার মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দিতে এবারও সরকারী ও বেসরকারীভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগের প্রায় সব ক’টি জেলা থেকে শতাধিক চিকিৎসক এখানে আনা হয়েছে। এসব চিকিৎসকগণ দৈনিক তিন শিফটে (পালায়) এজতেমাস্থলে ডিউটি করবেন। এজতেমায় মাওলানা সাদ ইস্যুর প্রভাব পড়েনি- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এবারের বিশ্ব এজতেমায় মাওলানা সাদ ইস্যুতে কোন প্রভাব পড়েনি এবং পড়বেও না। শুক্রবার দুপুরে বিশ্ব এজতেমা ময়দান সংলগ্ন পুলিশ কন্ট্রোল রুমে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে আরও বলেন, ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের সদস্যদের মধ্যে মতভেদ আছে। তারই একটি ধারবাহিকতা বাংলাদেশে এসেছে। এ মতভেদ যাতে মিটে যায় এবং এজতেমা যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সরকারের সে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে প্রথম পর্বে এজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
×