ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

রসিক নির্বাচন

আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী বিদ্র্রোহী নিয়ে সঙ্কটে বিএনপি, জাপায় অস্বস্তি

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী বিদ্র্রোহী নিয়ে সঙ্কটে বিএনপি, জাপায় অস্বস্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ২৪ নবেম্বর ॥ গত ২২ নবেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিল শেষ হয়েছে। সেই সঙ্গে শেষ হয়েছে মেয়র প্রার্থী হওয়া নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। মেয়র পদের জন্য শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিল করেছেন মোট ১৩ জন। দিন যত এগোচ্ছে ততই প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের তৎপরতা বেড়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময় না আসায় এখনও মিছিল-মিটিং, পোস্টার বা মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচার চালানো যাচ্ছে না। তবে, থেমে নেই প্রচার ও জনসংযোগ। স্বল্পসংখ্যক কর্মী সমর্থক নিয়ে প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন মহানগরের পাড়া-মহল্লা, অলি-গলি। রংপুরে বেশ কয়েকদিন থেকে শীত পুরোপুরি নেমে পড়েছে। শীত উপেক্ষা করে চাদর জড়িয়ে প্রার্থীরা জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন কাক ডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। হাট-বাজার, অফিস-কাছারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চায়ের দোকান সর্বত্র এখন প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে রংপুর সিটি নির্বাচন। সিটি নির্বাচন ছাড়া, রোহিঙ্গা সঙ্কট বা ঠাকুরপাড়ার সন্ত্রাসী হামলা বা অন্য কোন বিষয়ই এখন আর রংপুর সিটির নাগরিকদের আলোচনায় তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। চায়ের আড্ডায় বসে ভোটার-সমর্থকরা নিজের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নানা যুক্তি দেখাচ্ছেন। পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে প্রতিপক্ষের কাছে নিজের পছন্দের প্রার্থীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার প্রয়াস পাচ্ছেন কেউ কেউ। নির্বাচনকে ঘিরে নগর জুড়ে যেন শুরু হয়েছে উন্মুক্ত টকশো। উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে ভোটারদের মাঝে। সিটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ১৩ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে আছেন আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা কমিটির উপদেষ্টা সদ্য সাবেক মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মহানগর কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দলের মহানগর সহ-সভাপতি কাওছার জামান বাবলা, সাবেক পৌর মেয়র এবং জাপার সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রউফ মানিক। এছাড়া, জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু ও জাপার সাবেক এমপি এবং কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন। দেখা যাচ্ছে, আ.লীগে কোন বিদ্্েরাহী প্রার্থী নেই। তাই এক প্রকার স্বস্তিতে আছেন নৌকার প্রতিনিধি সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তিনি বলেছেন, নমিনেশন দাখিলের আগেই দলের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সম্মান জানিয়ে নৌকা মার্কার জয়ের লক্ষ্যে আমার পক্ষে কাজ করছে। আপাতত দলের ভিতরে তেমন মতপার্থক্য বা মনোমালিন্য নেই। তিনি বলেন, সরকার চালাচ্ছে আ.লীগ। কাজেই সিটির উন্নয়নের স্বার্থে আ.লীগের মেয়র দরকার। রংপুরের মানুষ নিশ্চয়ই এই সহজ হিসাব বুঝতে ভুল করবে না। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় গত আমলে আমি রংপুরের অনেক উন্নয়ন করেছি। আমার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে প্রধানমন্ত্রী আবারও আমাকে দায়িত্ব নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আ.লীগের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতা কর্মীরা বলেছেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোটের ফলাফল আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। এর সঙ্গে দলে ইমেজ জড়িত। তাই এই নির্বাচনটিকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন তারা। সে কারণে, কে মেয়র প্রার্থী সেটা বিবেচনা না করে নৌকাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন তারা। অপরদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীকে মহাসঙ্কটে ফেলেছেন জেলা যুবদলের সভাপতি স্বতন্ত্র বিদ্রোহী প্রার্থী নাজমুল আলম নাজু। কারণ বিএনপি’র তরুণ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নাজমুল আলম নাজু’র যথেষ্ট গ্রহনযোগ্যতা আছে। এমনিতেই রংপুরে বিএনপির অবস্থান খুব একটা মজবুত নয়। তার ওপর ভোট ভাগ হয়ে গেলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা মুশকিল হবে। অন্যদিকে, জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের ভাতিজা, সাবেক এমপি হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় স্বস্তিতে নেই জাপা মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। আবার, জাপায় না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মোস্তফার অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন সাবেক পৌর মেয়র এবং জাপার সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রউফ মানিক। কারণ এরশাদ পরিবারের সদস্য হিসেবে জাপার ভোটারদের মাঝে আসিফের গ্রহণযোগ্যতা আছে। তেমনি একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী এবং সাবেক পৌর মেয়র হিসেবে যথেষ্ট ভোট টানার সম্ভাবনা আছে আব্দুর রউফ মানিকের। আসিফ এবং মানিক যে ভোট পাবেন তার অধিকাংশই জাপার ভোট বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন জাপা মনোনীত প্রার্থী মোস্তফা। এ বিষয়ে মোস্তফা বলেন, আসিফ এবং মানিক নির্বাচন করাতে তার কোন ক্ষতি হবে না। তারা জাপার লোক হলেও দলীয় প্রার্থী আমি। রংপুরের মানুষ এরশাদকে ভালবাসে। এরশাদ যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার বাইরে অন্তত জাপার লোকেরা ভোট দেবে না। তিনি দাবি করেন, দলের সব নেতা-কর্মী তার সঙ্গে আছে। এবার তার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কোনভাবেই এ জোয়ার থামানো যাবে না। তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে জাপার মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস.এম ইয়াসির বলেন, মোস্তফার সঙ্গে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মী সবাই আছেন। এ নির্বাচনে আসিফ এবং মানিক জাতীয় পার্টির জন্য কোন ফ্যাক্টর নন।
×