ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিলাসবহুল ‘ভারটু’ মোবাইল ফোন সেট ঢাকায় জব্দ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২০ নভেম্বর ২০১৭

বিলাসবহুল ‘ভারটু’ মোবাইল ফোন সেট ঢাকায় জব্দ

আজাদ সুলায়মান ॥ একটি মোবাইল ফোনসেটের দাম প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এটা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানে তেমনই একটি মোবাইল ফোনসেট ধরা পড়েছে। নাম ‘ভারটু’। এটি বিশ্বখ্যাত নকিয়া ব্র্যান্ডের। নকিয়ার অরিজিনাল প্রস্তুতকারক দেশ ফিনল্যান্ড হলেও এ ব্র্যান্ডটি তৈরি হয়েছে যুক্তরাজ্যে। শুল্ক গোয়েন্দা মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেছেন, বাংলাদেশে এ ধরনের বিলাসবহুল ফোনসেট ব্যবহারের লোকও আছে, এটাই আমাদের কাছে বিস্ময়কর ঠেকছে। তিনি জানান, সোমবার গুলশানের ফোন এক্সচেঞ্জ নামে একটি দোকান থেকে এ ফোনসেটটি উদ্ধার করা হয়। এটি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা। এতে নেই বিটিআরসির আইএমইআই নম্বর। যা অবৈধ, সম্পূর্ণ অবৈধ। অনুমোদন ছাড়া আমদানি করায় এগুলো আটক করা হয়। এর মধ্যে তিনি জানান, ভারটু সেটটি (রেড গোল্ড ব্ল্যাক সিরামিক এডিশন) আসলেই দেখার মতো। হাতে নেয়ার মতো। নকিয়ার তৈরি ২৩৮ গ্রাম ওজনের সেটটির পার্শ্বদেশ ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণে মোড়ানো। এর স্ক্রীনটি সলিড স্যাফায়ার (নীলকান্তমণি) ক্রিস্টালের। স্যাফায়ার ক্রিস্টাল হচ্ছে ডায়মন্ডের পরে দ্বিতীয় শক্ত ধাতু। ফলে এতে কোন স্ক্র্যাচ পড়ে না। ফোনসেটটি ইংল্যান্ডের সুদক্ষ হস্তশিল্প কারিগর দিয়ে সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করা হয়। মূলত বিশেষ শ্রেণীর ক্রেতাদের ফরমায়েশের ভিত্তিতে এটি তৈরি হয়। এটির কী-প্যাডে রয়েছে ৪.৭৫ ক্যারেট রুবি পাথর। সেটটির ডাইমেনশন-৫.১২ ইঞ্চি দীর্ঘ, ১.৬৫ ইঞ্চি প্রস্থ, ০.৫১ ইঞ্চি পুরু। পুরো ফোনটি উত্তর ইউরোপের বিশেষ হার্ডকাট চামড়া ও প্লাটিনাম ধাতুর মিশেলে তৈরি। ক্রেতারা চাইলে নিজেদের পছন্দমতো রং এবং সেলাইয়ের নক্সার ফরমায়েশও করতে পারেন। একাডেমি এওয়ার্ডজয়ী সুরশিল্পী দারিও মারিয়ানেলি এ ফোনের জন্য আলাদাভাবে এক্সক্লুসিভ রিংটোন ও এ্যালার্ট টোন সুর করেছেন, যা পরে বিখ্যাত লন্ডন সিম্ফনি অর্কেস্ট্রার যন্ত্রশিল্পীদের দিয়ে রেকর্ড করানো হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ সেটে কোন ক্যামেরা নেই এবং এতে মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করে ইন্টারনাল স্টোরেজ এক্সপ্যানশন করা যায় না। এ সেটের উৎপাদন মূল্য বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩৫ লাখ টাকা (২৬ হাজার ইউরো)। কিন্তু বাংলাদেশে কেউ এটি বৈধভাবে ব্যবহার করতে চাইলে তাকে শতকরা ২৫ টাকা হারে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। সে হিসেবে সেটটির বৈধ ক্রয়মূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এখন দেখতে হবে বাংলাদেশে কে বা কারা ভারটু সেট এনেছেন। অবশ্যই এটি আগে থেকে ফরমায়েশ দিয়ে আনা হয়েছে। একটি বিলাসবহুল সম্পদ হিসেবে আয়কর রিটার্নে এটি উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। ড. মইনুল খান বলেন, যে দোকান থেকে ভারটু জব্দ করা হয়েছে তার মালিককে তলব করা হবে। তার কাছেই জানতে চাওয়া হবে কে এটি অর্ডার দিয়ে এনেছেন কিংবা কিভাবে কোন দেশ থেকে আনা হয়েছে। এর আগে আর কারা কারা এ ধরনের সেট এনেছেন কিংবা ব্যবহার করছেন সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিতর্কিত ব্যবসায়ী ড. মুসা বিন শমসের ভারটু হ্যান্ডসেট ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দার একটি সূত্র।
×