ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জন্মদিনে নানা আয়োজনে হুমায়ূন স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

জন্মদিনে নানা আয়োজনে হুমায়ূন স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একইসঙ্গে সাহিত্য ও শিল্পকে আলিঙ্গন করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর রচিত গল্প ও উপন্যাস আজও আলোড়িত করে পাঠককে। তেমনিভাবে তাঁর সৃষ্ট নাটক ও সিনেমা আঁচড় কাটে দর্শকের হৃদয়ে। এভাবেই সৃষ্টির আলোয় শরীরীভাবে না থেকে উজ্জ্বল তাঁর উপস্থিতি। সোমবার ছিল এই কিংবদন্তি এই সাহিত্য ও শিল্পস্রষ্টার জন্মদিন। শুভ দিনটিতে অগণন অনুরাগী স্মরণ করেছে তাদের সবচেয়ে প্রিয় এই লেখককে। অপার ভালবাসায় উদ্যাপিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকের জন্মদিনটি। তাঁকে নিবেদন করে গণগ্রন্থাগারে অনুষ্ঠিত হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের একক মেলা। তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে হয়েছে হুমায়ূন মেলা। সেগুন বাগিচার শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে তাঁর রচিত মঞ্চনাটক নৃপতি। লেখকের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর প্রকাশকরা এবারও যৌথভাবে আয়োজন করেন ‘হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের একক মেলা’। শাহবাগের জাতীয় গণগ্রন্থাগার আঙিনায় সোমবার বিকেলে সপ্তাহব্যাপী এ বইমেলার সূচনা হয়। একঝাঁক বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে এ মেলার উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই পাঠকরা ভিড় জমাতে শুরু করে প্রিয় লেখকের বইয়ে সাজানো মেলায় কিনতে। প্রিয় লেখক স্মরণে হলুদ পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরে এসেছিল অনেক তরুণ-তরুণী। দেখা যায় নবীন-প্রবীণ পাঠকদেরও। স্টলে স্টলে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন না পড়া বইটি। কেউ বা আবার নিজস্ব লাইব্রেরির জন্য সংগ্রহ করেছেন পছন্দের বইটি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অবসর প্রকাশনা সংস্থা স্বত্বাধিকারী ও হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আলমগীর রহমান। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে লোকসঙ্গীত ও সংস্কৃতি নিয়ে নানা ধরনের উৎসব আয়োজিত হচ্ছে ঢাকায়। নিঃসন্দেহে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। হুমায়ূন আহমেদ অনেক আগেই এ দেশের লোকসঙ্গীতকে নগরে এনেছিলেন, শহরের মানুষের কাছে তুলে ধরেছিলেন। অনেক মাধ্যমেই তিনি পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে গেছেন। কথাসাহিত্যিক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত বলেন, হুমায়ূন আহমেদের মতো এত বিপুল জনপ্রিয় সাহিত্যিক আর বাংলাদশে জন্মগ্রহণ করেননি। ভবিষ্যতে তাঁর মতো আর কেউ আসবেন কিনা কে জানে। তাঁর সৃষ্টিশীল রচনা ও সাহিত্য অবলম্বন করে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ হতে পারে। তাতে নতুন প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে আরও জানতে পারবে। হুমায়ূন অনুজ লেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব বলেন, হুমায়ূন আহমেদের কিছু বইয়ে মুদ্রণ ত্রুটি রয়ে গেছে। সেই বইগুলো আবার নতুন করে প্রকাশ করা উচিত। বানান ভুল ও মুদ্রণ ত্রুটি দূর করা উচিত। হুমায়ূন আহমেদের সহধর্মিণী অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন বলেন, প্রতিবছর হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে প্রকাশকরা যৌভভাবে বইমেলা আয়োজন করছেন। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছেন তাঁর রচনা। ব্যক্তিগতভাবে এজন্য প্রকাশকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।’ অনুষ্ঠানে তিনি হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠজন ও তাঁর রচনাসমগ্রের সম্পাদক প্রয়াত সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘মৃত্যুর যে বিস্তার, হুমায়ূন আহমেদ তা অতিক্রম করে গেছেন। তিনি আমাদের মাঝে সদা জাগরুক তাঁর সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে। অসংখ্য পাঠক সৃষ্টি করেছেন তিনি, মানুষকে বইমুখী করেছেন। তরুণ প্রজন্মকে নতুন পথের সন্ধান দিয়েছেন। সাহিত্যে তাঁর অবদানের তুলনা মেলা ভার।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, কাকলী প্রকাশনীর এ কে এম নাসির আহমেদ, আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনি, অনুপম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মিলন কান্তি নাথ, সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ, অনন্যার স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্সের জাকির হোসাইন প্রমুখ। বইমেলা চলবে ১৯ নবেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে। চ্যানেল আইতে হুমায়ূন মেলা ॥ চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে মুখরিত হুমায়ূন মেলায় ছিল তার ভক্তদের চঞ্চল পদচারণা। সঙ্গীত, নৃত্য, স্মৃতিচারণার পাশাপাশি ছোট ছোট দোকানে সাজানো ছিল নানা পসরা। ‘হিমু’ হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট এক জনপ্রিয় চরিত্র, যার জীবন বিচিত্র কর্মকা- আর রহস্যময়তায় ঘেরা। আর এই হিমুর পছন্দের পোশাক হলুদ পাঞ্জাবি। তাই মেলায় আগতরা এসেছিলেন হলুদ-বসনে। তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে এসেছিলেন মেলায়। ছেলেরা পরে ছিল হলুদ পাঞ্জাবি আর মেয়েদের পরনে হলুদ রঙের শাড়ি। বিকেলের শুরুতে জন্মদিনের বর্ণিল উৎসবের পরিবেশে হলুদ রঙের বেলুন হেমন্তের রৌদ্রকরোজ্জ্বল আকাশে অবমুক্ত করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মেলার আনুষ্ঠানিকতা। উদ্বোধন পর্বে উপস্থিত ছিলেন হুমায়ূন-পুত্র নুহাশ হুমায়ূন, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, নাট্যজন আতাউর রহমান, শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম, মেলার পৃষ্ঠপোষক এসিআই পিওর সল্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর, এনআরবি বাজারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ই চৌধুরী শামীম, কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস আরা, সেলিম চৌধুরী প্রমুখ। একবাক্যে বাবাকে নিয়ে আয়োজনের কথা শেষ করলেন নুহাশ হুমায়ূন। বললেন ‘বাবা থাকলে অনেক বেশি খুশি হতেন আজ।’ ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ কেমন ছিলেন তা ভক্ত-অনুরাগীদের জানান দেয়ার জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। যে কাপে হুমায়ূন চা খেতে পছন্দ করতেন, প্রদর্শনীর জন্য প্রথমবারের মতো সেটিও রাখা হয়েছে। তার একটাই উদ্দেশ্য প্রিয় লেখকের জীবন সম্পর্কে অল্প হলেও জানিয়ে দেয়া।’ সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিকে অমলিনভাবে ধরে রাখার জন্য এই আয়োজন বেশ প্রশংসনীয়।’ আলী ইমাম বলেন, ‘সাহিত্য সংস্কৃতির সবক্ষেত্রেই হুমায়ূনের বিচরণ ছিল। এমন কোন বিষয় নেই যা তিনি জানতেন না।’এর আগে সমবেত নৃত্যের মধ্য দিয়ে মেলার সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সূচনা হয়। চ্যানেল আই ভবনের চেতনা চত্বরে স্থাপিত অনুষ্ঠান মঞ্চে তার পছন্দের গান এবং হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত গান পরিবেশন করেন ফেরদৌস আরা, কিরণ চন্দ্র রায়, তপন চৌধুরী, সেলিম চৌধুরী, চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ, ক্ষুদে গানরাজ ও বাংলার গানের শিল্পীবৃন্দ। হুমায়ূন রচিত নাটকের প্রদর্শনী ॥ লেখকের জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে তাঁর রচিত নাটক নৃপতি। নান্দনিক নাট্য সম্প্রদায় প্রযোজিত নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন বদরুদ্দোজা।
×