ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাবার হত্যাকাণ্ড দেখে ফেলায় শিশুটিকেও খুন

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ৪ নভেম্বর ২০১৭

বাবার হত্যাকাণ্ড দেখে ফেলায় শিশুটিকেও খুন

অনলাইন রিপোর্টার ॥ বাবার হত্যাকাণ্ড দেখে ফেলায় নয় বছরের শিশু নুসরাত জাহানকে খুন হতে হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ, যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল তার মাও। রাজধানীর বাড্ডায় জামিল শেখ (৩৮) ও তার মেয়ে নুসরাত হত্যাকাণ্ডে তদন্তে শিশুটির মা আর্জিনা বেগম এবং তাদের ভাড়াটিয়া দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পর আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায় পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, গাড়িচালক জামিল ও তার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটিকে হত্যা করে আর্জিনা এবং তাদের বাসায় সাবলেট থাকা শাহিন মল্লিক। আর্জিনা ও শাহীনের বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় তারা। হত্যাকাণ্ডের পরপরই বৃহস্পতিবার সন্দেহবশত আর্জিনাকে আটক করে পুলিশ। শুক্রবার খুলনা থেকে শাহিন ও তার স্ত্রী মাসুমাকে গ্রেপ্তারের পর তদন্তে পাওয়া তথ্য জানাতে শনিবার ডিএমপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ডিএমপির গুলশান জোনের উপকমিশনার মোশতাক আহমেদ বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুমস্ত অবস্থায় একটি কাঠের টুকরা নিয়ে আঘাত করা হয় জামিলকে। তখন জামিল তার দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে শুয়েছিলেন। অন্যদিকে তাকে হত্যা পরিকল্পনা সাজান আর্জিনা ও শাহিন। মোশতাক বলেন, “রুমটি অন্ধকার ছিল। কাঠের টুকরা দিয়ে ঘুমন্ত জামিলের মাথায় আঘাত করে শাহিন। তখন সে জেগে উঠলে আবার আঘাত করা হয়। আর কিছু বলতে পারেনি জামিল। তখন তার মৃত্যু ঘটে। বাবাকে আঘাতের শব্দে পাশে থাকা নুসরাত জেগে ওঠে বলে জানান মোশতাক। “সে তখন বলতে থাকে, কী হয়েছে, আমার বাবাকে আঘাত করছ কেন? তখন তাকে রুমের বাইরে নিয়ে আসে আর্জিনা।” নুসরাত বাবাকে মারার কারণ জানতে চাইলে তখন তাকেও হত্যা সিদ্ধান্ত তার মা ও তার ‘প্রেমিক’ শাহিন নেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। মোশতাক বলেন, “প্রাথমিকভাবে আর্জিনা রাজি ছিল না। কিন্তু মেয়ের কথায় ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে নিজে বাঁচতে পরে সম্মতি দেয়।” এরপর নুসরাতকে ওই কক্ষে পুনরায় ঢুকিয়ে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে তিনি জানান। মোশতাক বলেন, জামিলকে হত্যার সময় তার ঘুমন্ত ছোট ছেলেটি জেগে উঠলেও সে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ায় বেঁচে যায়। একই ঘরে অন্য একটি কক্ষে সাবলেট থাকা শাহিনের স্ত্রী মাসুমা বেগম তার স্বামী ও আর্জিনার এই পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে জানতেন না বলে মনে করছে পুলিশ। মোশতাক বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর জেগে উঠে রক্ত দেখে ঘটনাটি জানেন তিনি। তখন স্বামীর কথামতো তার সঙ্গে তিনি পালিয়ে যান খুলনায়। অন্যদিকে আর্জিনা ঘরে থেকে ঘটনাটি ডাকাতের হামলা বলে সাজানোর চেষ্টা করেছিলেন, যা পুলিশের তদন্তে ভেস্তে গেছে। গোপালগঞ্জের বনগ্রামের জামিল গত ১৮ বছর ধরে বাড্ডা এলাকায় থাকেন। গুলশানে এক ব্যক্তির গাড়ি চালান। ৭ হাজার টাকায় তিন মাস আগে বাড্ডার ময়নারবাগ কবরস্থানের পাশে ‘পাঠানবাড়ি’র এই বাসাটি ভাড়া নেন তিনি। কিন্তু ভাড়া বেশি হওয়ায় ৩ হাজার টাকায় একটি কক্ষ পূর্বপরিচিত শাহিনকে সাবলেট দেন তিনি। পুলিশ কর্মকর্তা মোশতাক বলেন, মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে স্ত্রীর দীর্ঘ সময় কথা বলা নিয়ে জামিলের সঙ্গে আর্জিনার দাম্পত্য কলহ হলেও ব্যক্তিটি যে শাহিন, তা জামিল জানতেন না। জোড়া খুনের এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় একটি মামলা করেছেন জামিলের ভাই শামীম শেখ। তাতে আর্জিনা ও শাহিনকে আসামি করা হয়েছে।
×