ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার ॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০১:১০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার ॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দফায় দফায় বাড়ার কারণে দেশের চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, চালের বাজার বর্তমানে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। চলতি সপ্তাহে এক লাফে সব চালের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। চালের দাম দেশের ইতিহাসের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় দিশেহারা সাধারণ মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষ অনাহার-অর্ধাহারে থেকে তাদের আসন্ন দিনগুলো নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ৭৪ এর ন্যায় ভয়াল দুর্ভিক্ষ চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে। আর এজন্য সরকারই দায়ী। রিজভী বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৫৫ টাকা, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ ে কে ৭০ টাকা। অথচ বিএনপির শাসনকালের শেষ দিনেও মোটা চালের দাম ছিল ষোল টাকা। বর্তমানে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন মধ্যবিত্ত, দিনমজুর, শ্রমিক তথা খেটে খাওয়া মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সরকারের তরফে মজুতদারি ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষনার পর গত দু’দিনে আরও বেড়েছে চালের দাম। বানিজ্যমন্ত্রীর ঘোষনার পর দেশের বিভিন্নস্থানে যে অভিযান চলছে তা নিস্ফল অভিযানে পরিণত হয়েছে। কোথাও তারা অবৈধ চালের সন্ধান পায়নি। বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে সরকারি গোডাউন খালি, বেসরকারিভাবেও চালের তেমন মজুদ নেই। তারপরও প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন কোটি কোটি টন চালের মজুদ আছে। তাহলে চালের বাজারের অস্থিরতা কমছে না কেন? সরকার মিথ্যাচার করে দেশবাসীর ক্ষুধা ও ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশে যে খাদ্য সঙ্কট চলছে তা আড়াল করা যাবেনা। রিজভী বলেন, চালের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। সংস্থাটি বলেছে, গত তিন মাসে দেশে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এই সময়ে দেশে খাদ্যের দাম, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও খাদ্যের মান, এই তিন ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অবিলম্বে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং চালের সরবরাহ বৃদ্ধির জোর দাবি জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের মানুষসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত হলেও বর্তমান সরকার নির্বিকার। তারা শুধুমাত্র বিরোধী দল নিধনেই সদাতৎপর। তাদের ভাবখানা এরকম যেন না খেয়ে মানুষ মারা গেলেও তাদের কিছু যায় আসেনা। সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, বেপরোয়া লুটপাট, দখল ও চাঁদাবাজীতে রাষ্ট্র ও সমাজে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। তাদের বিশৃংখল অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারনে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আজ চরম ঝুঁকিতে। চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই বলেই মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের পরম বন্ধু ভারত বাংলাদেশে চাল রফতানী বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত সরকার সুস্পষ্টভাবে বলেছে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর দুই মাস তারা কোন চাল বাংলাদেশে রফতানী করবে না। এই সময়ে কৃষকদের কোন কাজ থাকেনা, এ কারনে আমাদের দেশে মরা কার্তিক বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। এই সময়ে কৃষকদের অকৃষি কাজেরও কোন সুযোগ নেই। রিজভী বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও বর্বর নির্যাতনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়লেও সরকার এখনও কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে খাদ্য নেই, খাবার পানি নেই, আহত-গুলিবিদ্ধ ও অসুস্থ নারী-পুরুষ-শিশুরা খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গাদের শরীর পচে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা খাবার ও পানির সংকটে ছটপট করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে শুরু থেকেই সরকারের বাধা উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। রিজভী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নতুন নয়। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের আমলে এবং ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে এই সঙ্কট প্রকটভাবে দেখা দিয়েছিল। সেসময়ও মিয়ানমার বাহিনীর বর্বর ও পৈশাচিক নির্যাতনে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তুজিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও জোরালো আন্তর্জাতিক তৎপরতায় মিয়ানমার সরকার তাদেরকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। তাই জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আবারো মিয়ানমার ইস্যুতে জোরালো আন্তর্জাতিক কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের পূর্ণনিরাপত্তায় স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। দুর্গাপুজার প্রাক্কালে দেশব্যাপী বিভিন্ন পুজা মন্ডপে প্রতিমা ভাঙ্গার ঘটনা ঘটছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, মানিকগঞ্জে ১৫টি, নাটোরে ১৮টি এবং সাতক্ষীরা ও নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুজামন্ডপে ভাংচুর করা হয়েছে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
×