ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জরুরী

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২৪ জুন ২০১৭

বাজেট বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জরুরী

বর্তমান অর্থমন্ত্রীর নবমতম বাজেট যাকে উল্লিখিত করা হয়েছে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ : এখন সময় আমাদের।’ এই সময়ে বর্তমান সরকার তথা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভিশন-২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন দল, মত, হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে সবাই মিলে সে পথ ধরে সামনে এগিয়ে চলার দিন এসেছে বিশেষত সমৃদ্ধ, উন্নত, সুখী ও শান্তিময় বাংলাদেশ গড়ার জন্য। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা যা দেশের মোট জিডিপির অর্থাৎ ২২ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ যা চলতি বছরের বাজেটের চেয়ে ১৭.৩৭ শতাংশ কিছু বেশি হলেও শতাংশের অংশে বাজেট তেমন বৃদ্ধি পায়নি যদিও টাকার অঙ্কে তা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৯ হাজার ৬শ’ ৫১ কোটি টাকা। যদিও অনেকে বলেছেন এই বাজেট উচ্চাভিলাষী ও নির্বাচনমুখী যা কোন যৌক্তিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। কারণ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সাম্প্রতিক জনসংখ্যা জরিপ মতে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৮ লাখ এবং প্রস্তাবিত বাজেটকে যদি এই সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা হয় তা হলে মাথাপিছু বার্ষিক ব্যয় দাঁড়ায় ২৫ হাজার ১৬ টাকা আর মাসিক ব্যয় দাঁড়ায় ২ হাজার ৮৫ টাকা। সে যাই হোক না কেন এই বৃহদাকার বাজেটের ব্যয়ের প্রায় ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ৭২ শতাংশ আসবে রাজস্ব আয় থেকে যা বর্তমানে চলতি বছরে আসে ৭১ শতাংশ যা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি অর্থাৎ প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের অংশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ভ্যাটের ওপর যার লক্ষ্যমাত্রা হলো ৯১ হাজার কোটি টাকা; দ্বিতীয় গুরুত্ব পড়েছে আয়করের ওপর যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৮৬ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। এই কাজটি করার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হলো এনবিআর যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬২২ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন জনগণকে তুষ্ট করতে হলে ব্যাপক উন্নয়ন দরকার যার ভিত্তি হলো রাজস্ব আয় বাড়ানো। তাই বিদ্যমান করের আওতায় সম্প্রসারণসহ নতুন নতুন খাত থেকে কর আদায় বাড়ানো ও বিতর্কিত ভ্যাট আইন ১ জুলাই থেকে ধার্যকর করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে বিবেচিত। যদি তা বাস্তবায়িত হয় তবে তার প্রভাব ভুক্তা, দ্রব্যমূল্য, মূল্যস্ফীতি, উৎপাদনমুখী শিল্প ইত্যাদির ওপর পড়বে যা অনেকাংশেই নেতিবাচক ও ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও নতুন ভ্যাট আইনে ১৭০টি আমদানি পণ্য ছাড়াও ১ হাজার ১৯২টি পণ্য থেকে সম্পূরক শুল্ক বিলুপ্তের বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছ ২ লাখ ৩০ হাজার ১৩০ কোটি টাকা যা চলতি বিদায়ী বছরের বাজেটের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি যা দিয়ে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা মেটানো, ভর্তুকি, ঋণের সুদ পরিশোধ এবং সরবরাহ সেবা মেটানো হবে। আবার উন্নয়ন বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা যা জিডিপির ৭.৪ শতাংশ এবং এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা যা জিডিপির ৯ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.৪ শতাংশ যা চলতি বছরে রয়েছে ৭.২ শতাংশ যা অর্জিত হবে বলে আশা করছে সরকার। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংক বলছে এই হার ৬.৮ শতাংশের বেশি হবে না এবং ২০১৯ সাল নির্বাচনীর বছর তাই রাজনৈতিক অস্থিরতা, রফতানি, রেমিটেন্স ও বিনিয়োগ পরিস্থিেিত প্রতিকূলতা থাকবে বিধায় প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কম থাকবে আর প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপর থাকা স্থিতিশীল ও শক্তিশালী অর্থনীতির পরিচায়ক। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ এবং বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা যা জিডিপি এর ৫ শতাংশ। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক প্রকল্প সাহায্য থেকে আসবে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা (জিডিপি এর ২.৩ শতাংশ), অভ্যন্তরীণ উৎস ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা (জিডিপির ২.৭ শতাংশ), ব্যাংক ব্যবস্থাপক থেকে ঋণ নেয়া হবে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা (জিডিপির ১.৩ শতাংশ), সঞ্চয় পত্র/অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগকে জিডিপির ৩১.৯ শতাংশ করতে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে যার মধ্যে ব্যক্তি খাত ২৩.৩ শতাংশ ও সরকারী খাতে ৮.৬ শতাংশ রয়েছে যা চলতি বছর এই হারটি ছিল ৩০.০ শতাংশ তাই বিনিয়োগ বাড়াতে এ পর্যন্ত ২২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং আগামী অর্থবছরে আরও ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন ও ১১টি উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে সেখানে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য/ সেবা উৎপাদন ও প্রায় ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের কথা রয়েছে। তাছাড়াও ১০টি মেগা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা যার মধ্যে অর্ধেক ব্যয় হবে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য। এখন খাতওয়ারী প্রাধান্যের প্রাধিকারে বাজেট বিশেষণ করা যাক। কারণ বাজেট কেবল একটি বছরের ক্ষমতাসীন সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি দেশের অর্থনীতির আয়-ব্যয়ের হিসাবই নয়, একটি দলের রাজনৈতিক অঙ্গীকারও বটে। সেই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের ঘোষিত ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী ইশতেহারে জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়ে ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্য্রমুক্ত বাংলাদেশ, সংসদ সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, প্রভাবমুক্ত প্রশাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনকরণ ইত্যাদি করার জন্য যার প্রতিফলন লক্ষনীয় বিশেষত অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় তারি ধারাবাহিকাতয় প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ৬৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে যা মোট বাজেটের ১৬.৪০ শতাংশ যার উদ্দেশ্য শিক্ষাকে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের শক্তিশালী কৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। তাই ২০১০ সালের প্রণীত শিক্ষানীতি ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ, প্রশিক্ষিত শিক্ষক তৈরি ইত্যাদি। এর পরেই রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুত অবকাঠামো যেখানে প্রস্তাবিত বরাদ্দ হলো ২০ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। তার পর রয়েছে যোগাযোগ খাত যেখানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মোট বাজেটের ১২.৫ শতাংশ। উন্নয়ন বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত (ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করে) যার পরিমাণ ৫০ হাজার ৮০ কোটি টাকা যা মোট উন্নয়ন বাজেটের ২৭.৪ শতাংশ। আবার এই খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ যা ১০ হাজার ৯শ’ ১০ কোটি টাকা, সেতু বিভাগ ৯ হাজার ২৮৮ কোটি, রেলপথ ১২ হাজার ৯৫০ কোটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ২০৫৫ কোটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ৫৪৯ কোটি, ডাক/টেলিযোগাযোগ ২৫১৩ কোটি টাকা। সরকারের অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গীকার পদ্মা সেতুতে আগামী এডিপিতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ হাজার ৫২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা যা চলতি বছরের বরাদ্দের চেয়ে ৮৫০ কোটি ২৬ লাখ টাকা বেশি যা আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা রয়েছে নির্বাচনকে সামনে রেখে। সরকার সর্বদাই কৃষি খাতে গুরুত্ব দিয়ে আসছে যার প্রতিফল ঘটেছে প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৬.১ শতাংশ। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে রয়েছে ১ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা এবং অনুন্নয়ন খাতে রয়েছে ১১ হাজার ৮শ’ ৪ কোটি টাকা। তা ছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য স্বাভাবিক ভর্তুকির অতিরিক্ত হিসেবে কৃষিজাত সামগ্রী রফতানির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, সেচ যন্ত্রে বিদ্যুত বিলের ওপর ২০ শতাংশ হারে ছাড় প্রদান, কৃষি যান্ত্রিককরণে উন্নয়ন সহায়তার হার হাওর ও দক্ষিণাঞ্চলের জন্য ৭০ শতাংশ করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নারীরা দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক যাদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সার্বিক বাজেট মূল্যায়নে দেখা যায় যে, বাজেট আসে বাজেট যায় আকার বড় হয় অর্থনীতির কলেবরের বৃদ্ধির সঙ্গে কিন্তু সমাজ চিন্তায় রূপান্তর আসার ক্ষেত্রে এই প্রস্তাবিত বাজেটের ভূমিকা কি তা আলোচনার দাবি রাখে। কারণ সরকারের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো সমাজের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যা অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতায় উঠে এসেছে যা সমাজকে এগিয়ে নেয়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বাজেট বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বেড়েছে সত্যি যার ফলে এত বড় উচ্চাভিলাষী বর্তমান সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব করার বাজেট যা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এ ক্ষেত্রে আরও উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ অর্থমন্ত্রীর। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ঘোষণা পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্টেটিস্টিকস (বিবিএস) বলছে দেশে বর্তমানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ। দেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের আওতায় আছে এবং ইউএনডিপি সূত্র মতে বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনশক্তি ১০ কোটি ৫৬ লাখ যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ যা দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি বড় সুযোগ করে দিতে পারে যদি সঠিক পরিকল্পনা থাকে। একি সংস্থার এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৬ এপ্রিল, ২০১৬ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশ এখন তরুণ জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র। এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বিনিয়োগ কিংবা উৎপাদনে দেশটি অনেকের চেয়ে এগিয়ে যাবে এবং আশা করা যায় আগামী বাজেট প্রস্তাবনা আমাদের সেই সুযোগটি সৃষ্টি করে দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে। আরও দুটি বিষয় সকলের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে এসে দাঁড়িয়েছে তা হলো ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় ও এক লাখ টাকার উর্ধে ব্যাংক জামানতের ওপর আবগারি শুল্ক অর্থাৎ অর্থমন্ত্রীর মতে ১ লাখ টাকার উর্ধে ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমাদানকারী ব্যক্তি সম্পদশালী। ব্যবসায়ীদের আলোচনার প্রেক্ষিতে তিন হাজারেরও বেশি পণ্যের ওপর ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে এবং ভ্যাট অব্যাহতির সীমা বছরে ৩০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে যা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ, যার উদাহরণ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত ব্যাংক হিসাবের ওপর আবগরি শুল্কের হার বিভিন্ন টাকার মেয়াদে যে বাড়ানো হয়েছে তার ওপর ব্যাংক হিসাব হোল্ডারদের ব্যাপক আপত্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে বিভিন্ন মিডিয়াতে যা অবশ্য পরিহারের সুযোগ রয়েছে বিশেষত আগামী সংসদ নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে যার সঙ্গে ভোটের রাজনীতি জড়িত। উল্লেখ্য, সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট এটি হওয়ায় সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়টি সামনে এসেছে যদিও এর নানামুখী চ্যালেঞ্জ সরকারকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তার পরও প্রস্তাবিত বাজেটে বিপুল জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে বিশেষত যোগাযোগ অবকাঠামো, কৃষি/পল্লী উন্নয়ন, জ্বালানি ও বিদ্যুত, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়গুলোকে কাছে নিয়ে আসার কারণে। এখন রূপকল্প বাস্তবায়নে, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) এর সফল প্রয়োগের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা একটি প্রধান পূর্বশর্ত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাই আগামী ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্চাবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এতে যদি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল সফল হয় তা হলে মাথাপিছু আয়, প্রবৃদ্ধির হার, বিদ্যুত উৎপাদন, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, যোগাযোগ এবং সাধারণের জীবন মানের উন্নতি ঘটবে তা নিশ্চয়। এ জন্য আগামী বছরের মধ্যে নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রূপকল্প ২০৪১ উপহার দেয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায়। তাই বাজেট বাস্তবায়নে অংশগ্রহণকারী সরকারী সংস্থা আলোচিত ভিশন সামনে রেখে কাজ করবে এবং একটি সমৃদ্ধ ক্ষুধামুক্ত গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়তা করবে এই প্রত্যাশা রইল। লেখক : গবেষক ও ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি; [email protected]
×