ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০ বছর

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০ বছর

১৮৮৭ সালে ইংরেজ শাসনামলে প্রতিষ্ঠা পায় ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম বন্দর। যা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি থেকে ব্যবসা বাণিজ্য এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এক বিশিষ্ট ভূমিকা রাখছে। এই ঐতিহাসিক এবং বহু ঘটনার সাক্ষী চট্টগ্রাম বন্দর এখন ১৩০ বছরের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের যুগ সন্ধিক্ষণে। দেশের সঙ্গে চলমান বিশ্বের গতিশীল কর্মপ্রক্রিয়ায় এই বন্দরের অনবদ্য ভূমিকা অনস্বীকার্য। দীর্ঘ ১২৯ বছরের পথপরিক্রমায় এই বন্দর তার ওপর অর্পিত দায় দায়িত্বকে দক্ষতা এবং নিবিড় পরিচর্যায় সম্পন্ন করেছে। সময়ের সঙ্গে নিরন্তর গতিতে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার সুনাম রাখছে। নিত্যনতুন কর্মপ্রক্রিয়ার সফল অভিযোজনে চট্টগ্রাম বন্দর আজ সমৃদ্ধির স্বর্ণশিখরে। দেশের সামগ্রিক পরিকল্পিত প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করেও এই বন্দর আজ প্রতিবেশী দেশসমূহকেও সাহায্য সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত এবং সক্ষম। আর সেই কারণেই অব্যাহত রয়েছে অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ এবং নতুন টার্মিনাল তৈরির বিভিন্ন পরিকল্পনা। ২৫ এপ্রিল বন্দরটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্মরণ করা হয় ফেলে আসা গৌরবদীপ্ত ১২৯ বছরের সাফল্যগাথা এবং সুদীর্ঘ কর্মযোগের বহুমাত্রিক বিষয় সম্ভার। যা বন্দরটিকে আজকের এই স্বর্ণযুগের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। ফলে উৎসব আর আনন্দঘন পরিবেশ এবং বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালন করা হয় প্রতিষ্ঠানের এই উৎসব। বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে কর্মকর্তা- কর্মচারীরা পর্যন্ত অপেক্ষমাণ থাকেন স্মরণীয় এই দিনটিকে প্রতিবারের মতো নতুন করে বরণ করার আকুল আকাক্সক্ষা নিয়ে। ১৯৭৭ সালে নতুন পরিকল্পনায় চট্টগ্রাম বন্দর সংযোজিত হয় কন্টেনারযোগে। আর সেটাই ছিল বন্দরের অন্যতম একটি নতুন মাত্রা যোগ। ফলে কন্টেনারে প্রথম পণ্য আসা শুরু হলো। মাত্র ৬টি কন্টেনারের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে তা প্রায় ২২ লাখ টিইইউএস কন্টেনারে উন্নীত হয়েছে। এভাবে আপন বৈশিষ্ট্য এবং কর্মপরিকল্পনায় পথচলা চট্টগ্রাম বন্দরকে নতুন মাত্রা দেয়া হচ্ছে। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিলনমেলায়ও প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে ‘পোর্ট এক্সপো।’ যার অন্যতম লক্ষ্য বন্দরকে সারাবিশ্বের দরবারে নিয়ে যাওয়া। চট্টগ্রাম বন্দর যদিও অপ্রতিদ্বন্দ্বী, কিন্তু বর্তমানে দেশে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রে বিশেষ করে মিয়ানমারের সিটওয়ে বন্দরকে মাথায় রেখে বন্দরের বাণিজ্যিকীকরণের ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এখন চট্টগ্রাম বন্দর ভারত, নেপাল ও ভুটানের জন্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই বিরাট আয়োজনে স্টেক হোল্ডারদের শতাধিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয় এই পোর্ট এক্সপোতে। বর্ণিল এই আনন্দযজ্ঞে চট্টগ্রাম বন্দরকে অপরূপ সাজে রাঙিয়ে তোলা হয়। জাতীয় এবং বন্দর পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর এই দিবসটির সূচনা করা হয়। দেশের আমদানি এবং রফতানির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বন্দরের লক্ষ্যমাত্রার উত্তরোত্তর উন্নয়ন পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে হলে আর এমজি সেক্টরে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিকাকে আরও যুগোপযোগী করা জরুরী। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। হিসাব মতে বছরে ১০ হাজার কন্টেনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বৃদ্ধি করলে ২০১৯ সালে এই ক্ষমতা উন্নীত হবে ২৩ লাখ ৮০ হাজার টিইইউএস কন্টেনারে। কিন্তু সে পরিমাণ আমদানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলে কন্টেনার ঘাটতির আশঙ্কাও অমূলক নয়। সুতরাং সম্ভাবনা এবং ঘাটতির মধ্যে সমতা আনা বন্দর ব্যবস্থার স্বার্থেই আবশ্যক। এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম বন্দরের সাফল্য অর্জনকে প্রাধান্য দিয়ে এর প্রয়োজনীয় সক্ষমতা, দক্ষতা এবং ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর সমধিক জোর দিতে হবে। এই লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের আরও আধুনিক, অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ, যুগের দাবি মোটানো এবং সময়ের নিরন্তর গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলাকে গুরুত্ব দেয়া জরুরী।
×