ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রবিবার ও মঙ্গলবারের এসএসসি পরীক্ষা পেছাল

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

রবিবার ও  মঙ্গলবারের এসএসসি  পরীক্ষা পেছাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবরোধের মধ্যেই বিএনপি-জামায়াতের হরতালে আজ ও আগামী মঙ্গলবারের এসএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে গেল। পিছিয়ে যাওয়া আজকের পরীক্ষা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ১০টায় এবং মঙ্গলবারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৬ মার্চ শুক্রবার সকাল ৯টায়। হরতাল-অবরোধের কারণে আজকের পরীক্ষাসহ এ পর্যন্ত আট দিনে মোট ১৩৫টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে গেল। এদিকে ৬ মার্চ ৩৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারী পরীক্ষা সকালের পরিবর্তে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সময় পরিবর্তনের পর পরই সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি) বিসিএস পরীক্ষা বিকেলে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পিএসসির চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে শনিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেছেন, এসএসসিতে আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করে। তাই তাদের সকালে পরীক্ষা হলেই ভাল হয়। এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে আমরা সকালের পরীক্ষা বিকেলে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে নাশকতামূলক কর্মসূচী পরিহার না করায় দুপুরে নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আজ ও মঙ্গলবারের পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ৩৫তম বিসিএসে অংশ নিতে দুই লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন, যা বিসিএসের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আগে সাত দফা পরীক্ষা পিছানোর পর দেশজুড়ে দাবি উঠেছিল ভবিষ্যতের পরীক্ষাগুলোকে হরতাল-অবরোধের বাইরে রাখার। এসব দাবিতে দেশজুড়ে প্রতিবাদ মানববন্ধন ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা। কিন্তু ১৫ লাখ নতুন প্রজন্ম ও তার পরিবারের স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ায় দুপুর ১২টায় নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষা পেছানোর ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সময়সূচী পরিবর্তনের বিষয়টি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভয়ভীতির মধ্যে পরীক্ষা নেয়া সমীচীন মনে করছি না। পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হলো। শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, আজ রবিবার এসএসসিতে রসায়ন (তত্ত্বীয়), পৌরনীতি ও নাগরিকতা/পৌরনীতি, ব্যবসায় উদ্যোগ পরীক্ষা ছিল। দাখিলে সাধারণ গণিত ছাড়াও এসএসসি ভোকেশনালে আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ (১৯২৮) (সৃজনশীল), আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ (৮১২৬) (সৃজনশীল/সাধারণ) এবং দাখিল ভোকেশনালে আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ (১৯২৮) (সৃজনশীল), আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ (৮১২৮) (সৃজনশীল/সাধারণ) বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে আগামী মঙ্গলবার এসএসসিতে ভূগোল ও পরিবেশ/ভূগোল, বাণিজ্যিক ভূগোল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। মাদ্রাসার দাখিলে বাংলা (শুধু অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য), বাংলা প্রথমপত্র ছাড়াও কারিগরির এসএসসি ভোকেশনালে ট্রেড-২ দ্বিতীয়পত্রের (নতুন সিলেবাস) ৩০টি বিষয়, ট্রেড-১ দ্বিতীয়পত্রের (পুরাতন সিলেবাস) ৩১টি বিষয় এবং ভোকেশনাল দাখিলে আরবি-২ (১৭১৪), আরবি-২ (৮৪২৩) বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। সব মিলিয়ে এ দুুদিনের ১০ শিক্ষা বোর্ডে মোট ৭৮টি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অবরোধ ও হরতালের মধ্যে এ পর্যন্ত এসএসসির ও সমমানের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়েছে কেবল পাঁচ দিন। তাও ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৭ হাজার ৮০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছে। হরতালের কারণে এসএসসি ও সমমানে গত ২, ৪, ৮, ১০, ১৭ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা পেছানো ছাড়াও ১২ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী আবারও বলেছেন, দেশে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী ছাড়াও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের মিলিয়ে আছেন আরও এক কোটি। দেশের সবচেয়ে বড় পরিবার শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন আমরা ছেলেমেয়েদের রক্ষা করতে চাই। আশা করেছিলাম তাদের (বিএনপি জোট) মন নাড়া দিবে। কিন্তু না তারা দেশের নতুন প্রজন্মের কথা ভাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে বিচ্ছিন্নভাবে হামলার ঘটনা ঘটছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও জীবন আমাদের কাছে অনেক বড়। আমরা জেনেশুনে তাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারি না। এজন্য পরীক্ষা পেছানো হলো। তবে হরতাল অবরোধে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রস্তুতির যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে তাতে আগামী ৩০-৪০ বছর পর ফল ভোগ করতে হবে আমাদের পুরো জাতিকে। পরবর্তী পরীক্ষাগুলো যেন যথাযথভাবে অনুষ্ঠিত হয় সে বিষয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করেন শিক্ষামন্ত্রী। উল্লেখ্য, বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালে ২০১৩ সালে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পেছানো হয়। ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দু’বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেয়া হয়। গত বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়ে। হরতালে জেএসসি-জেডিসির চার দিনে নয়টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। চলতি বছরের এসএসসির লিখিত পরীক্ষা আগামী ১১ মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
×