ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নপূরণের ৩ নায়ক...

প্রকাশিত: ২১:২৩, ১৮ জুলাই ২০২০

স্বপ্নপূরণের ৩ নায়ক...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ২০১৮ সালে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো দলছুট হওয়ার পর রিয়াল মাদ্রিদের কর্তাব্যক্তিসহ সমর্থকদের কপালে পড়েছিল দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এটি আরও ঘনীভূত হয়েছিল ওই বছরেই কোচ জিনেদিন জিদান সান্টিয়াগো বানাব্যু ছাড়লে। এরপর গ্যালাক্টিকো শিবিরে ভর করে নিদারুণ হতাশা। সঙ্গী হয় ব্যর্থতাও। যে কারণে ২০১৯ সালে আবারও জিদানকে ফিরিয়ে আনে লস ব্লাঙ্কোসরা। ফেরাটা যে বৃথা যায়নি সে প্রমাণ ফরাসী গ্রেট ভালভাবেই রেখে চলেছেন। প্রত্যাবর্তনের পর গত জানুয়ারিতে রিয়াল মাদ্রিদকে উপহার দেন প্রথম ট্রফি। এবার পুনরুদ্ধার করে দিলেন লা লিগার মুকুট। বৃহস্পতিবার রাতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সিলোনার কাছ থেকে ট্রফি নিজেদের শোকেসে ফিরিয়ে এনেছেন ফ্রান্সের হয়ে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ী এই সুপারস্টার। তবে মাঠের লড়াইয়ে জিদানকে যোগ্য সাপোর্ট দিয়েছেন দুই তারকা সার্জিও রামোস ও করিম বেনজেমা। একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হয়েও রক্ষণ সামলে রামোস যেভাবে নিয়মিত গোল করেছেন সেটা রীতিমতো বিস্ময়কর। আর রোনাল্ডো বার্নাব্যু ছাড়ার পর সেই জায়গাটা ভালমতোই পূরণ করেছেন ফরাসী তারকা বেনজেমা। তাকে তো এই মুহূর্তে লিওনেল মেসির চেয়েও ভাল বলা হচ্ছে। রিয়ালের শিরোপা তাই জয়ে পুরো দলের কৃতিত্ব থাকলেও মূলত জিদান-রামোস-বেনজেমা এই তিন তারকার অবদানই সবচেয়ে বেশি। জিদান খেলোয়াড়ী জীবনে জিতেছেন সম্ভাব্য প্রায় সব শিরোপা। কোচ হিসেবেও একের পর এক সাফল্য নিজের করে নিচ্ছেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জিদান খেলোয়াড় হিসেবেও মাঠ মাতিয়েছেন রিয়ালের পক্ষে। এখন কোচ হিসেবেও নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়। ২০১৬ সালে কোচ হিসেবে রিয়ালের দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৮ সালে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এক বছর পর আবারও ফিরেছেন কোচ হিসেবে। এই অল্প সময় রিয়ালের হয়ে ১১টি শিরোপা জিতেছেন জিদান। এই শিরোপা জিততে মাত্র ২০৯ ম্যাচ ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন তিনি। অর্থাৎ ম্যাচ ও শিরোপার অনুপাতে প্রতি ১৯ ম্যাচে একটি করে শিরোপা জিতেছেন ৪৮ বছর বয়সী জিদান। ২০১৬ সালে মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে রিয়ালের ক্রান্তিকালে যুব দলের দায়িত্ব ছেড়ে মূল দলের কোচ হয়েছিলেন জিদান। তখন টানা তিন মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতে ২০১৮ সালে ছেড়ে দেন দায়িত্ব। তবে পরের বছরই আবার ধরেন দলের হাল এবং জিতে নিলেন ২০১৯-২০ মৌসুমের লা লিগা। সবমিলিয়ে কোচ হিসেবে জিদানের শিরোপাগুলো হলো ২টি লা লিগা, ২টি স্প্যানিশ সুপার কাপ, ২টি উয়েফা সুপার কাপ, ২টি ক্লাব বিশ্বকাপ এবং ৩টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। রিয়ালের হয়ে শিরোপা জয়ে তার সামনে রয়েছেন শুধু মিগুয়েল মুনোজ। যিনি রিয়ালকে ৬০৫ ম্যাচে কোচিং করিয়ে জিতেছেন ১৪টি শিরোপা। রোনাল্ডো চলে যাওয়ার পর রিয়ালের আক্রমণভাগ একাই সামলাচ্ছেন বেনজেমা। নিজে গোল করছেন আবার সতীর্থদের দিয়ে করাচ্ছেন। আক্রমণ গড়ে দিচ্ছেন প্লেমেকারের ভূমিকায়। আবার নিজের স্ট্রাইকার পরিচয়ও ভুলছেন না। এই প্রথম রিয়ালের জার্সিতে টানা দুই মৌসুম ২০-এর বেশি গোল করেছেন। ২১ গোলের সঙ্গে এবারের মৌসুমে গোলে সহায়তা করেছেন আটবার। সবচেয়ে বেশি গোল করা মেসি করেছেন ২৩টি। কিন্তু জিততে পারেননি ট্রফি। যে কারণে বেশি গোল করলেও অন্তত এবারের মৌসুমে মেসির চেয়ে বেনজেমাকে সেরা বলছেন অনেকে। রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্টিনো পেরেজ ফরাসী তারকার প্রশংসা করে বলেন, বেনজেমার ব্যালন ডি’অর জেতা উচিত। এ বছর বা গত বছর ওরচেয়ে ভাল কাউকে খেলতে দেখিনি। নায়ক বললে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হবে না। বরং বলা চলে মহানায়ক। সার্জিও রামোস এখন ঠিক এমনই। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে একের পর এক গোল করছেন আর গড়ছেন কীর্তি। একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হয়ে স্প্যানিশ তারকা মুড়ি মুড়কির মতো গোল করেছেন এবারের লীগে। গোলগুলোর আবার বেশিরভাগ পেনাল্টি থেকে। লা লিগায় বিলবাওয়ের বিরুদ্ধে লক্ষ্যভেদ করে স্পেন জাতীয় দল ও রিয়ালের হয়ে টানা ২২টি পেনাল্টি থেকে গোল করার রেকর্ড গড়েন রামোস। লা লিগায় ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমের পর প্রথম সেন্টারব্যাক হিসেবে ন্যূনতম ১০ গোলের দেখাও পেয়েছেন। ২০০৫ সালে সেভিয়া থেকে রিয়ালে যোগ দেয়ার পর দলটির অন্যতম সেরা তারকা তিনি। লা লিগার মুকুট পুনরুদ্ধারের পর বর্তমানে স্পেন ও রিয়াল অধিনায়ক রামোস বলেন, এটা আমাদের কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার। টানা ১০ ম্যাচ জয় পাওয়াটা প্রশংসার দাবি রাখে। স্প্যানিশ এই ডিফেন্ডারের দৃষ্টিতে ফরাসী কিংবদন্তিই সাফল্যের চাবিকাঠি। এ প্রসঙ্গে রামোস বলেন, জিদানই সাফল্যের কারিগর। তিনি এই জাহাজের ক্যাপ্টেন। সব খেলোয়াড়ের প্রতি তিনি বিশ্বাস রেখেছিলেন। তাকে পাশে পেয়ে আমরা নিরাপদ বোধ করেছি। তিনি অনন্য একজন কোচ।
×