ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিববিহীন প্রথম বিপিএল

প্রকাশিত: ১২:২১, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

সাকিববিহীন প্রথম বিপিএল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবারই প্রথম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিজেদের পুরো তত্ত্বাবধানে আয়োজন করছে বিশেষ বিপিএল। সপ্তম এই আসরটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নাম পেয়েছে বঙ্গবন্ধু বিপিএল। এর আগের ৬ আসরে দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। সর্বশেষ বিপিএলসহ ৩ আসরেই তিনি হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। বিপিএলের সামগ্রিক পরিসংখ্যানে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সাকিবের ধারেকাছেও অবস্থান নেই কারও। ব্যাট হাতে ৭৬ ম্যাচ খেলে ১৪৮৩ রান করেছেন যা বিপিএলের ব্যাটিং পারফর্মেন্সে সামগ্রিকভাবে চতুর্থ সেরা। আর বোলিংয়ে সবার সেরা বাঁহাতি স্পিনার সাকিব। ১০৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। কিন্তু এবার সেই সাকিবকে ছাড়া প্রথম কোন বিপিএল শুরু হবে আজ। জুয়াড়িদের কাছে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও তা ফিরিয়ে দিয়েছেন, তবে প্রস্তাবের কথা গোপন করায় তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছে। সেজন্য এবারের পুরো বিপিএলেই খেলতে পারবেন না সাকিব। অর্থাৎ সেরা হওয়ার লড়াইয়ে বড় এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে এড়াতে পারবেন এবার বাকি ক্রিকেটার। ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বিপিএল টি২০ আসর। কয়েকবার দুয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলে গেলেও শুধু ২০১৪ সাল বাদে ৬টি আসর হয়েছে। তবে এবারের বিপিএল একেবারেই আলাদা। কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি নেই। বিসিবি আয়োজন করছে এই আসরটি। ৬টি দলের জন্য স্পন্সর পাওয়া গেছে, শুধু কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের মালিকানা বিসিবির। প্রথমবারের মতো একই বছরে দুই বিপিএল হচ্ছে। বছরের শুরুতে ষষ্ঠ বিপিএল আসর শেষ হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের কারণে গত বছরের শেষভাগে তা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। কিন্তু এবার নির্ধারিত সময়েই হচ্ছে। তাই একই বছরে দুই বিপিএল! বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ এই আসরটিতেই খেলতে পারবেন না দেশের সেরা ক্রিকেটার সাকিব। এর আগে ৬ আসরের মধ্যে ৩ বারই সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন তিনি। বিপিএলের অভিষেক আসরেই (২০১২ সালে) টুর্নামেন্ট সেরা হন সাকিব। খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের হয়ে টুর্নামেন্টে ১১ ম্যাচ খেলেন তিনি। ব্যাট এবং বল হাতে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন সেবার। ব্যাট হাতে এক হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৮০ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৭.১১ ইকোনমিতে বোলিং করে ১৫ উইকেট নিয়ে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সবাইকে পেছনে ফেলেন। তাই টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতে নেন তিনি। পরে ২০১৩ বিপিএলেও অলরাউন্ডিং পারফর্মেন্স দেখিয়ে আবার টুর্নামেন্ট সেরা হন সাকিব। সেবার ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ১২টি ম্যাচ খেলেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। দুই হাফ সেঞ্চুরিতে ১২ ম্যাচে ৩২৯ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ৬.২১ ইকোনমিতে তুলে নেন ১৫ উইকেট। ঢাকার শিরোপা ঘরে তোলার পথে বড় ভূমিকা ছিল সাকিবের। মূলত ব্যাট-বলে সমান নৈপুণ্য দেখানোতেই আবার সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন সাকিব। ২০১৪ সালে বিপিএল আয়োজিত হয়নি। ২০১৫ সালে নতুন করে নানাবিধ পরিবর্তন নিয়ে নতুন আঙ্গিকে শুরু হয় এই আসরটি। তৃতীয় এই আসরে আর সাকিবকে আগের মতো করে দেখা যায়নি। বিশেষ করে ব্যাটিং পারফর্মেন্সে হতাশ করেছেন দলকে। এই আসরে তাই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলা পাকিস্তানের অলরাউন্ডার আশার জাইদি হন টুর্নামেন্ট সেরা। ব্যাট হাতে ১১ ম্যাচে এক হাফ সেঞ্চুরিতে ২১৫ রান এবং বল হাতে ৪.৭৮ ইকোনমিতে নেন ১৭ উইকেট। প্রথমবারের মতো কুমিল্লা বিপিএল শিরোপা ঘরে তোলে। যার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন পাক এই অলরাউন্ডার। সাকিবের পর দ্বিতীয় কোন অলরাউন্ডার ও ক্রিকেটার হিসেবে বিপিএল সেরা হওয়ার কৃতিত্ব দেখান তিনি। হারানো সেই মুকুট সাকিব ফিরে পাননি ২০১৬ ও ২০১৭ সালের বিপিএলেও। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় বাংলাদেশী খেলোয়াড় হিসেবে টুর্নামেন্টের সেরা হন খুলনা টাইটান্সের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ১৪ ম্যাচে ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৯৬ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। বল হাতেও রেখেছেন দলের জন্য অবদান। ৭.৪১ ইকোনমিতে বোলিং করে ১০ উইকেট নেন এই অফস্পিনার। মূলত অলরাউন্ড পারফর্মেন্সেই তিনি সেরা খেলোয়াড় হন। ২০১৭ বিপিএলে প্রথমবার কোন ব্যাটসম্যান সেরা ক্রিকেটার হন। রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিধ্বংসী ওপেনার ক্রিস গেইল ১১ ম্যাচ খেলে ২ সেঞ্চুরি এবং ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৮৫ রান করে হয়ে যান টুর্নামেন্ট সেরা। বিপিএলের সর্বশেষ আসরে (২০১৯) আবারও সেরা ক্রিকেটারের মুকুট ফিরে পান বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব। ২০১৯ সালের শুরুতে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে ১৫ ম্যাচ খেলেন তিনি। ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৩০১ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। বল হাতে ৭.২৫ ইকোনমিতে ২৩ উইকেট নেন সাকিব। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় শীর্ষে ছিলেন তিনি প্রথমবারের মতো। তিনবারই যে আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন সেখানে এবার অনুপস্থিত থাকবেন, এতে নিশ্চিতভাবেই কিছুটা জৌলুস হারিয়েছে বঙ্গবন্ধু বিপিএল। প্রথমবারের মতো এমন অলরাউন্ডারকে ছাড়া বিপিএল মাঠে গড়াচ্ছে আজ থেকে। ফ্র্যাঞ্চাইজি না থাকায় অনেক বড় বড় বিদেশী তারকাও আসেননি এই আসরটি খেলতে। সেখানে সাকিবও না থাকায় বিপিএলের সেরা হওয়ার দৌড়ে শেষ পর্যন্ত কে মুকুট পরবেন তার ধারণাটাও পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ বিপিএলের ৬ আসরে সাকিব ৭৬ ম্যাচের ৭৫ ইনিংসে ব্যাট করে ২৫.১৩ গড়ে ৫ অর্ধশতকসহ করেছেন ১৪৮৩ রান। তার ওপরে থাকা তিনজনই জাতীয় দলের সতীর্থ। তামিম ইকবাল ৫৮ ম্যাচে ১৮২৫, মুশফিকুর রহীম ৭১ ম্যাচে ১৭৮৩ ও মাহমুদুল্লাহ ৭৫ ম্যাচে ১৬১৯ রান করে সাকিবের ওপরে। আর বোলিংয়ে সাকিবের কাছাকাছিও নেই কেউ। তিনি ৭৬ ম্যাচে ১৭.৮৩ গড়ে ১০৬ উইকেট নিয়েছেন। বিপিএলে আর কোন বোলারেরই ১০০ উইকেট নেই। দ্বিতীয় স্থানে আছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা ৭৪ ম্যাচে ৭৩ ও রুবেল হোসেন ৫৬ ম্যাচে ৭০ উইকেট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছেন।
×