ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

করুনারত্নের শতকে রেকর্ড গড়া জয় শ্রীলঙ্কার

প্রকাশিত: ০৯:১১, ১৯ আগস্ট ২০১৯

 করুনারত্নের শতকে রেকর্ড গড়া জয় শ্রীলঙ্কার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রবিবার প্রথম টেস্টের শেষদিনে গলে শ্রীলঙ্কায় বিজয়ের অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। কারণ হাতে থাকা ১০ উইকেটে মাত্র ১৩৫ রান প্রয়োজন ছিল নিউজিল্যান্ডকে পরাজয়ের স্বাদ দিতে। আগের দিনই দুই ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে আর লাহিরু থিরিমান্নে চতুর্থ ইনিংসে দেশের পক্ষে রেকর্ড গড়া জুটিতে দলকে জয়ের আশা দেখাচ্ছিলেন। সেই করুনারত্নে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে লঙ্কানদের ৬ উইকেটে জিতিয়েছেন। ২৬৮ রানের লক্ষ্যটা ছুঁতে অবশ্য ৪ উইকেট হারাতে হয়েছে। কিন্তু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর পর প্রথম খেলতে নেমেই জয় পেয়েছে লঙ্কানরা বেশ কিছু রেকর্ডের জন্ম দিয়ে। ২ টেস্টের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা এবং ৬০ পয়েন্টও পেয়েছে। চতুর্থ ইনিংসে বরাবরই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন করুনারত্নে। ক্যারিয়ার ব্যাটিং গড় ৩৬.৮২ হলেও টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে তার গড়টা ৩৮.৫০! আর গলে তার ব্যাটিং রেকর্ডটা বরাবরই ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে অনেক ভাল। আগের তিনটি ইনিংসে তার রান ছিল এখানে ৬০*, ৯৭ ও ২৬। এখন অধিনায়ক হওয়াতে দায়িত্বটা বেড়ে গেছে অনেক বেশি। সেই কর্তব্য পালনে এ বাঁহাতি ওপেনার যথেষ্ট নিষ্ঠাবান তা গল টেস্টে প্রমাণ দিয়েছেন চতুর্থদিনেই। সফরকারী নিউজিল্যান্ডের ছুড়ে দেয়া ২৬৮ রানের লক্ষ্যটাকে তার দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ের জন্য বিন্দুমাত্র কষ্টসাধ্য মনে হয়নি লঙ্কানদের কাছে। ওপেনিং জুটিতে ১৩৩ রান তুলেছিলেন তিনি অভিজ্ঞ থিরিমান্নেকে সঙ্গে নিয়ে। এর আগে চতুর্থ ইনিংসে শ্রীলঙ্কার পক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে সেরা ছিল ১২৪ রান। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে করুনারত্নে ও কৌশল সিলভা ১২৪ রানের জুটি গড়েছিলেন। সেটিকে পেছনে ফেলে তারা দু’জন পঞ্চমদিনে আরও এগিয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত দেশের পক্ষে টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ১৬১ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে থেমেছেন তারা। এশিয়ায় এটি চতুর্থ ইনিংসে ওপেনিং জুটিতে তৃতীয় সেরা রান। বাঁহাতি স্পিনার উইলিয়াম সমারভিল এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন থিরিমান্নেকে। তিনি ১৬৩ বলে ৪ চারে ৬৪ রান করেছিলেন। ততক্ষণে সেঞ্চুরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন করুনারত্নে। কিন্তু কুসাল মেন্ডিস (১০) দ্রুতই এজাজ প্যাটেলের শিকার হলে অধিনায়কের দুঃশ্চিন্তা কিছু বেড়ে যায়। তার সেই চিন্তা দূর করেছেন সাবেক অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। তৃতীয় উইকেটে দু’জন ৪৪ রান যোগ করেন। আর ক্যারিয়ারে প্রথমবার টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান তিনি। শতক হাঁকানোর পর অবশ্য খুব বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি করুনারত্নে। ৬ চার, ১ ছয়ে করা ২৪৩ বলের দীর্ঘ ইনিংসটি ১২২ রানে শেষ হয় টিম সাউদির আউট সুইংয়ে। জয়ের থেকে তখন মাত্র ৫০ রান দূরে শ্রীলঙ্কা। বেশ তাড়াহুড়া করেছেন কুসাল পেরেরা। ১৯ বলে ৫ চারে ২৩ রানের ইনিংস খেলে তাই সাজঘরে ফিরতে হয়েছে তাকে। কিন্তু ম্যাথুস ভুল করেননি শেষ পর্যন্ত ২৮ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে সঙ্গে করে। ৪ উইকেটে ২৬৮ রান তোলে তারা। ৬ উইকেটের সহজ জয় পায় শ্রীলঙ্কা। চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে জেতার ক্ষেত্রে এটি শ্রীলঙ্কার পঞ্চম সর্বোচ্চ। অধিনায়ক হিসেবে জয়ের ম্যাচে চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করার কীর্তি মাহেলা জয়বর্ধনের পর দেখালেন করুনারত্নে। কলম্বোয় ২০০৬ সালের আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ে ২৪৮ বলে ১২৩ রানের ইনিংস খেলে ভূমিকা রেখেছিলেন জয়বর্ধনে। করুনারত্নেসহ টেস্ট ইতিহাসে সবমিলিয়ে ১৪ জন অধিনায়ক ১৮ বার এমনটা করতে পেরেছেন। সর্বপ্রথম ১৯৪৮ সালের জুলাইয়ে হেডিংলিতে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান চতুর্থ ইনিংসে অপরাজিত ১৭৩ রানের ইনিংস খেলে ইংলিশদের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েছিলেন অধিনায়ক হিসেবে। সেটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তবে অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি চতুর্থ ইনিংসে ৪ বার করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ ও ২ বার অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং। কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে ম্যাচ জেতানো এমন সেঞ্চুরি ৩০টি আছে টেস্ট ইতিহাসে। তবে শ্রীলঙ্কার হয়ে চতুর্থ ইনিংসে ম্যাচজয়ী শতক আছে আর মাত্র দু’জনের- অরবিন্দ ডি সিলভা (১৯৯৮, প্রতিপক্ষ- জিম্বাবুইয়ে) ও কুসাল পেরেরা (২০১৯, প্রতিপক্ষ- দক্ষিণ আফ্রিকা)। তবে লঙ্কান ওপেনার হিসেবে সনাথ জয়সুরিয়া (২ বার) ও কুসাল মেন্ডিসের পর করুনারত্নে চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকালেন। জয়সুরিয়া ১৯৯৬ ও ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এবং মেন্ডিস গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জেতাতে পারেননি দলকে। প্রথম ওপেনার হিসেবে চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে শ্রীলঙ্কাকে জয় উপহার দিলেন করুনারত্নে। স্কোর ॥ নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস- ২৪৯/১০; ৮৩.২ ওভার (টেইলর ৮৬, নিকোলস ৪২; আকিলা ৫/৮০, লাকমাল ৪/২৯) ও দ্বিতীয় ইনিংস- ২৮৫/১০; ১০৬ ওভার (ওয়াটলিং ৭৭, লাথাম ৪৫, সমারভিল ৪০*; এমবুলদেনিয়া ৪/৯৯, ধনঞ্জয়া ৩/২৫)। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস- ২৬৭/১০; ৯৩.২ ওভার (ডিকভেলা ৬১, কুসাল মেন্ডিস ৫৩, ম্যাথুস ৫০, করুনারত্নে ৩৯, লাকমাল ৪০; এজাজ ৫/৮৯, সমারভিল ৩/৮৩) ও দ্বিতীয় ইনিংস- (টার্গেট ২৬৮) ২৬৮/৪; ৮৬.১ ওভার (করুনারত্নে ১২২, থিরিমান্নে ৬৪, ম্যাথুস ২৮*; সাউদি ১/৩৩, বোল্ট ১/৩৪)। ফল ॥ শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ দিমুথ করুনারত্নে (শ্রীলঙ্কা)। সিরিজ ॥ ২ টেস্টে সিরিজে শ্রীলঙ্কা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
×