ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় টি২০ আজ শেরেবাংলায়

টাইগারদের লক্ষ্য সমতা, ক্যারিবীয়রা চায় জয়

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

টাইগারদের লক্ষ্য সমতা, ক্যারিবীয়রা চায় জয়

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবারের পূর্ণাঙ্গ সিরিজে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে যে অভিজ্ঞতায় পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। টি২০তে সেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীনই হতে হচ্ছে সাকিববাহিনীকে। সিরিজে সমতা না হার আজ? সেই প্রশ্ন উঠছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ বিকেল পাঁচটায় শুরু হবে দুই দলের মধ্যকার দ্বিতীয় টি২০। তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথমটিতে হারায় সিরিজে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে। আজ হারলেই সিরিজ হার হয়ে যাবে। জিতলে সিরিজে ১-১ সমতা আসবে। আজ জিতলে শনিবার তৃতীয় ও শেষ টি২০ হয়ে উঠবে সিরিজ নির্ধারণী লড়াই। আর আজ হারলেই এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হার হয়ে যাবে। আর তাই সিরিজ হার, সমতা আনবে বাংলাদেশ? সেই প্রশ্ন উঠছে। অথচ টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজে এই প্রশ্নের মধ্যে পড়তে হয়নি বাংলাদেশ দলকে। উল্টো ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই এ তিক্ত অভিজ্ঞতায় পড়তে হয়েছে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে ৬৪ রানে জিতে বাংলাদেশ সিরিজে এগিয়ে গিয়েছিল। তাই দ্বিতীয় টেস্টটি বাংলাদেশের সিরিজ জয় অথবা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করা অথবা সিরিজ ড্র করার ম্যাচ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ ইনিংস ও ১৮৪ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে হোয়াইটওয়াশ করে। টেস্ট সিরিজের পর যখন ওয়ানডে সিরিজ শুরু হয়, সেখানেও বাজিমাত করে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতেই ৫ উইকেটে জিতে সিরিজে এগিয়ে যায়। তাই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সিরিজ জয় হয়ে যাবে? এমন মধুর প্রশ্ন ওঠে। যখন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে হারে বাংলাদেশ তখন তৃতীয় ওয়ানডের আগে সিরিজ জয় না হার, এই প্রশ্ন ওঠে। বাংলাদেশ ৮ উইকেটের সহজ জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে। কিন্তু কখনই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই বাংলাদেশের সিরিজ হারের সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। এবার সেই সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। প্রথম টি২০তে ব্যাটসম্যান-বোলারদের যে ব্যর্থতা মিলেছে, সেই ধারাবাহিকতা থাকলে সিরিজ হার হয়ে যাবে। আর যদি প্রথম টি২০’র ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে খেলতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা, তাহলে সিরিজে সমতা আনা সম্ভব। প্রথম টি২০তে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই আসলে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুরুতে ব্যাটিং করে সিলেট স্টেডিয়ামের উইকেটে যেখানে বড় স্কোর সবসময়ই হয়; সেখানে ১২৯ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। এক সাকিব (৬১) ছাড়া কেউই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। তামিম (৫), লিটন (৬), সৌম্য (৫), মুশফিকে (৫) যে ভরসা করা হয়েছিল, প্রতিদান দিতে পারেননি তারা। বাজে শটে একেকজন আউট হয়েছেন। এরপর মাহমুদুল্লাহ (১২) এসে সাকিবের সঙ্গে কিছু করার চেষ্টা করেছেন। তাতেও ফল আসেনি। আরিফুল হককে নিচের দিকে রাখাই হয়েছিল শট খেলে রান তোলার জন্য। আরিফুলও (১৭) খুব বেশিদূর দলকে নিয়ে যেতে পারেননি। এরপরও সাকিবের পর মাহমুদুল্লাহ ও আরিফুলের স্কোর যা একটু এগিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু সেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যে কোন কাজেই আসেনি তা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়েই প্রমাণ মিলেছে। সাই হোপতো ১৬ বলেই ফিফটি করে ফেলে রেকর্ড গড়েন। পাওয়ার প্লেতে ৯১ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজও রেকর্ড গড়ে। শেষ পর্যন্ত ১০.৫ ওভারেই জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ বোলাররা অসহায় হয়ে পড়েন। এমন অবস্থা যদি আজও হয় তাহলে সিরিজ বাঁচানো কঠিনই হয়ে পড়বে। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় যে দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান কতটা বিরক্ত হয়েছেন তা ম্যাচ শেষে পুরস্কার মঞ্চে সাকিবের বলা কথাগুলো থেকেই বোঝা যায়। তিনি বলেছেন, ‘টস ছাড়া কিছুই আমাদের (প্রথম টি২০তে) ঠিকঠাক হয়নি। আমরা ভাল ব্যাট করিনি। ভাল বল করিনি। উইকেট বেশ ভাল ছিল। অন্তত ১৭৫ রান করা উচিত ছিল আমাদের। অন্য ব্যাটসম্যানদের জিজ্ঞেস করা উচিত, কেন তারা ভাল ব্যাট করেনি। সবার হয়ে উত্তর আমি দিতে পারি না। কিছুই কাজে লাগেনি। যেটাই চেষ্টা করেছি আমরা, সফল হইনি। এই ম্যাচ থেকে অনেক শেখার আছে।’ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বেজায় চটেছেন সাকিব। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা কেন এত ব্যর্থ হলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে যেখানে লিটন দেখিয়েছেন ঝলক। তামিম তার নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন। মাহমুদুল্লাহ, আরিফুলরাও জৌলুস ছড়ান। সেখানে দেশের মাটিতে কেন এমন হাল হলো? দলের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি অবশ্য সেই ব্যাখ্যা খুব সুন্দরভাবে দিয়েছেন। ব্যর্থতার ছবি তুলে ধরেছেন তিনি। বলেছেন, ‘আমরা (ব্যাটসম্যানরা) একটু বেশিই আক্রমণত্মক হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে অতি আত্মবিশ্বাসের ফল। ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতির বলে লিটন দাশ উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। অমনটা করতে অনেক সাহস এবং নিজের ওপর বিশ্বাস লাগে। ফর্মে থাকা তামিম সামনে খেলতে চেয়েছে। সৌম্যও তাই। টি২০ খেলার ধরনই এই যে সবাই আক্রমণ দিয়েই আক্রমণের মোকাবেলা করতে চায়। এর চেয়ে বরং বলের গতি ব্যবহার করে স্কয়ার পেছনে খেলার চেষ্টা করাই উচিত ছিল এই উইকেটে। আসলে ব্যাটসম্যানদের শর্ট বল খেলার সামর্থ্য আমাকে চিন্তায় ফেলছে না। বরং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের ফলেই অমনটা হয়েছে। আগুনের জবাব আগুন দিয়েই দিতে চেয়েছে। কিন্তু কখনও কখনও অন্যভাবেও খেলতে হয়।’ বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা কিছু না বুঝেই শুরু থেকেই মারমুখী হয়ে খেলতে গিয়েই বিপদ ডেকে এনেছে। আর তাই সাকিব চটেছেনও। নিজে ইনজুরি থাকা সত্ত্বেও খেলে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। অথচ যাদের নিয়ে বেশি ভরসা ছিল তারাই হয়েছেন ব্যর্থ। তাই সাকিব রাগে ফুসেছেন। সাকিবের এই রাগে যদি এখন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা দ্বিতীয় টি২০তেই বদলে যাওয়া রূপ দেখাতে পারেন তাহলেই টি২০ সিরিজ বাঁচানোর পথ তৈরি হওয়া সম্ভব। আজ জিতলে সিরিজে আসবে সমতা, আর হারলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হার হয়ে যাবে। বাংলাদেশ কি পারবে সিরিজে সমতা আনতে?
×